সোমবার , ১৬ এপ্রিল ২০১৮ | ১৪ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. অন্যান্য
  2. অপরাধ ও দুর্নীতি
  3. অর্থ ও বাণিজ্য
  4. আইন আদালত
  5. আন্তর্জাতিক
  6. কৃষি
  7. খেলা
  8. চাকরীর খবর
  9. ছবিঘর
  10. জাতীয়
  11. তথ্যপ্রযুক্তি
  12. দুর্ঘটনা
  13. ধর্ম
  14. নারী
  15. নির্বাচিত খবর

চীনা স্মার্টফোনের দাম কম হওয়ার কারণ

Paris
এপ্রিল ১৬, ২০১৮ ৬:৪৮ অপরাহ্ণ

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

দিন দিন স্মার্টফোনগুলোর দাম বেড়েই চলেছে। আপনার পছন্দের ব্র্যান্ডের দিকে লক্ষ্য করলেই দেখবেন, তারা প্রতিবছর বিভিন্ন ফিচার এবং হার্ডওয়্যারের মানোন্নয়ন করে সবচেয়ে ভাল ফোনটি বের করে থাকে। আর প্রতিবছরই সেই শীর্ষ ফোনটির দাম বেড়ে যায় বহুগুণে। এমনকি দাম এতটাই বেড়ে যায় যে, আপনার কাছে মনে হতেই পারে এই দাম একেবারেই অন্যায্য।

কে জানতো যে, একটি স্মার্টফোনের দামই লাখ টাকার উপরে হবে? যেমন আইফোন ১০ (iPhone X)। ২০১৭ সালে বের হওয়া এই ফোনটির মূল্য ছিল ৯৯৯ মার্কিন ডলার, যা বাংলাদেশে লক্ষ টাকার উপরে বিক্রি করা হচ্ছে। তবে উচ্চমূল্যের এই আইফোনটি সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে বলে অ্যাপল এই মডেলটি আশানুরূপভাবে বিক্রি করতে পারছে না।

অ্যাপলের বিভিন্ন মডেলের আইফোনের দাম

এই যে বিশ্ববিখ্যাত ব্র্যান্ড যেমন অ্যাপল, স্যামসাং, এলজি, এইচটিসি ইত্যাদি তারা বারবার নিজেদের স্মার্টফোনগুলোর দাম দিনের পর দিন বাড়িয়ে চলেছে। নতুন ফোনগুলোতে তারা কি যুগান্তকারী কোনো উদ্ভাবন দেখাতে পেরেছে? আমরা যা দেখেছি এই কয়েক বছরে তা হলো, ফোনের পেছনে একটি ক্যামেরা থেকে দুটি (হুয়াওয়ে পি২০ প্রো-তে তিনটি ক্যামেরা) ক্যামেরার প্রচলন এসেছে, ডিসপ্লের রেজ্যুলেশনে উন্নয়ন হয়েছে যদিও আমরা খালি চোখে সেই উন্নয়ন খুব একটা ধরতে পারি না, ফোনের বেজেল কমে গেছে এবং উপরে-নিচে অর্থাৎ কাঁচের ডিসপ্লের পরিমাণ বেড়েছে যা প্রকৃতপক্ষে ফোনটিকে করেছে আরো ভঙ্গুর।

এখন নামীদামী কোম্পানির ফোনগুলোর প্রায় এই সবধরনের উন্নয়ন বিভিন্ন চীনা স্মার্টফোন কোম্পানির ফোনগুলোতেও দেখা যাচ্ছে। বড় বড় কোম্পানিগুলো তাদের গ্রাহকদের যে ফিচার এবং হার্ডওয়্যার অফার করছে, চীনা স্মার্টফোনগুলোও প্রায় সেগুলোই দিচ্ছে। কিন্তু তফাৎ হলো দামে। এই নামীদামী স্মার্টফোন কোম্পানিগুলোর তুলনায় চীনা স্মার্টফোনগুলোর দাম অনেকাংশেই কম। ধরা যায় প্রায় অর্ধেক।

মি মিক্স

এখন অনেকেরই যে ধারণাটি রয়েছে তা হলো চীনা কোম্পানিগুলো সাধারণত সস্তা হার্ডওয়্যার দিয়ে থাকে এবং তাদের মাঝে কোনো উদ্ভাবনী গুণ নেই। তারা সাধারণত অন্য কোম্পানিকে নকল করে থাকে। কথাগুলো একদিক দিয়ে আংশিক সত্য আবার অনেকখানিই ভুল। যেমন শাওমি তাদের প্রথম ‘মি মিক্স’ ফোন মডেল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে সত্যিকারের বেজললেস ফোন আসলে কেমন হওয়া উচিত। ভিভো তাদের ‘X20 Plus’ মডেলে প্রথম ‘অনস্ক্রিন ফিঙ্গারপ্রিন্ট‘ বা ডিসপ্লের ভেতরেই ফিঙ্গারপ্রিন্ট প্রযুক্তির ব্যবহার দেখিয়ে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে যেগুলো তথাকথিত নামীদামী স্মার্টফোন কোম্পানিগুলো তাদের বিশাল ‘রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট’ বিভাগ থাকা সত্ত্বেও দেখাতে পারেনি।

ভিভো X20 প্লাস

যা-ই হোক, আসা যাক মূল বিষয়ে। এই যে চীনা কোম্পানিগুলো যেমন শাওমি, ওয়ানপ্লাস, হুয়াওয়ের অনর, ভিভো, মেইজু ইত্যাদি তাদের স্মার্টফোনগুলোতে প্রায় একই রকমের হার্ডওয়্যার এবং ফিচার ব্যবহার করা সত্ত্বেও নামীদামী কোম্পানিগুলোর তুলনায় দাম কম রাখছে। কিভাবে সম্ভব হচ্ছে? আসুন আজকে এই বিষয়েই জানা যাক- কিভাবে তারা তাদের স্মার্টফোনগুলোর দাম তুলনামূলকভাবে কম রাখছে অন্যান্যদের তুলনায়।

সীমিত লাভ

চীনা স্মার্টফোন কোম্পানিগুলোর বর্তমানে মূল লক্ষ্য ব্র্যান্ড প্রতিষ্ঠা এবং প্রচারণা। তারা স্মার্টফোন হার্ডওয়্যার থেকে খুব সীমিত লাভ করে থাকে। এমনকি এমনটিও জানা গিয়েছে যে, চীনা স্মার্টফোন ব্র্যান্ড শাওমি তাদের স্মার্টফোন হার্ডওয়্যার থেকে কোনো মুনাফাই অর্জন করে না। তারা আশা করে তাদের ব্র্যান্ড বিশ্বের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে যাবে এবং স্বল্প মূল্যে ভালো স্মার্টফোন প্রদান করে তারা চায় ভবিষ্যতেও যাতে গ্রাহকরা তাদের ফোনটি কেনে। তাহলে প্রশ্ন আসতে পারে, তারা স্মার্টফোন থেকে লাভ না করলে প্রতিযোগিতার এই বাজারে টিকে আছে কীভাবে?

তারা অবশ্যই লাভ করে, কিন্তু সেটি তাদের সফটওয়্যারের দিক থেকে। চীনা স্মার্টফোন কোম্পানিগুলো সাধারণত নিজেদের তৈরি কাস্টোমাইজড অ্যান্ড্রয়েড স্কিন প্রদান করে থাকে। যেমন MIUI, EMUI, ColorOS, HydrogenOS ইত্যাদি। আর কোম্পানিগুলো এসব সফটওয়্যারে বিভিন্ন থিম, অতিরিক্ত অ্যাপস (যেগুলোকে অনেকে ব্লটওয়্যার নামেও অভিহিত করে থাকে), গেমস এবং ইন্টারনেট সুবিধা বিক্রি করে মুনাফা পেয়ে থাকে। অর্থাৎ যতদিন ফোনগুলো গ্রাহকদের কাছে থাকবে ততদিন তারা সফটওয়্যারগুলো কিনতে থাকবে এবং কোম্পানিগুলো এভাবে আয় করতে থাকবে।

শাওমির ব্লটওয়্যার এবং ব্রাউজার অ্যাড

শাওমির কথাই ধরা যাক। তারা এসব অ্যাপস, গেমস, থিম বিক্রি করেই মাসে ৪.৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার মুনাফা উপার্জন করে থাকে। গ্রাহকরা তাদের ফোনের MIUI ব্রাউজার দিয়ে শাওমির কোনো অংশীদারী সাইট যেমন Flipkart, Amazon, Myntra, Jabong ইত্যাদিতে ভিজিট করে কোনো পণ্য ক্রয় করলে সেখান থেকে শাওমি একটি কমিশন পেয়ে থাকে। শাওমির ব্রাউজারে কিছু অ্যাপসের বিজ্ঞাপনও দেওয়া থাকে এবং গ্রাহকরা যদি সেই অ্যাপস নিজেদের ফোনে ডাউনলোড করে ইন্সটল করে সেখান থেকেও শাওমি CPA সিস্টেমে (Cost Per Action) আয় করে থাকে।

অর্থাৎ চীনা স্মার্টফোন কোম্পানিগুলো এভাবে তাদের স্মার্টফোন হার্ডওয়্যার থেকে খুব কম লাভ করলেও অন্য বিভিন্ন উপায়ে আয় করে থাকে। যার মাধ্যমে তারা তাদের ব্র্যান্ডের প্রচারণার লক্ষ্য ঠিক রেখে মানুষকে কম দামে স্মার্টফোন প্রদান করে যাচ্ছে।

কোনো ইনভেন্টরি না রাখা

ইনভেন্টরিকে সহজ ভাষায় বললে গুদামঘরের সাথে তুলনা করা যেতে পারে। ইনভেন্টরি হলো সেই স্থান যেখানে কোম্পানিগুলো তাদের তৈরিকৃত স্মার্টফোন মজুদ রাখে। আর ইনভেন্টরি রাখতে গেলে অবশ্যই খরচ হয়। প্রথমত স্মার্টফোন তৈরি করতে এগুলোর বিভিন্ন যন্ত্রাংশ এবং প্রক্রিয়াকরণে প্রচুর খরচ হয়। তারপর সেগুলো বিক্রি না হওয়া পর্যন্ত কোনো উপযুক্ত স্থানে মজুদ করে রাখতে এবং তা তত্ত্বাবধানেও খরচ হয়। এখন এই চীনা কোম্পানিগুলো যারা খুব সীমিত লাভ করে থাকে তাদের কি কোনো ইনভেন্টরি নেই? হ্যাঁ, আছে! কিন্তু তা অপেক্ষাকৃত ক্ষুদ্রাকৃতির।

একটি চীনা স্মার্টফোন ফ্যাক্টরি

তাহলে এই ইনভেন্টরি সমস্যার সমাধান করতে বা উপযুক্ত কোনো ইনভেন্টরি বাদেই কোম্পানিগুলো কিভাবে তাদের ফোনগুলো বিক্রি করে? এর অন্যতম একটি সমাধান হলো ‘ফ্ল্যাশ সেল‘। ফ্ল্যাশ সেল হলো দ্রুত হাজার হাজার ফোন বিক্রি করে ফেলার একটি উপায়।

কোম্পানিগুলো কিছুটা ছাড় দিয়ে হাজার হাজার ইউনিট ফোন বিভিন্ন ওয়েবসাইটে বিক্রির জন্য দেয়। ক্রেতারা আগে থেকেই বুকিং দিয়ে ফ্ল্যাশ সেল শুরু হওয়া মাত্র সেগুলো দ্রুত কিনে নিতে পারে। এভাবে চীনা কোম্পানিগুলো বড় আকারের ইনভেন্টরি রাখা থেকে এবং নিজেদের ছোট ইনভেন্টরিতে পণ্য ওভারস্টক বা বেশি মজুদ করে রাখার হাত থেকে বেঁচে যায়। কিছু কিছু কোম্পানি ‘ইনটাইম ম্যানুফ্যাকচার মেথড’ও ব্যবহার করে থাকে। অর্থাৎ তারা তাদের পণ্য তখনই তৈরি করা শুরু করে যখন কোনো অর্ডার প্লেস করা হয় বা পণ্যের চাহিদা দেখা দেয়। এভাবে তারা অতিরিক্ত কাঁচামাল ক্রয়ের হাত থেকেও বেঁচে যায়।

জিরো মার্কেটিং বাজেট

বড় বড় কোম্পানিগুলোর অধিকাংশ ব্যয়ই হয় মার্কেটিংয়ে। স্যামসাংয়ের মত কোম্পানি শুধু বিলিয়ন বিলিয়ন মার্কিন ডলার খরচ করে প্রতিবছর বিভিন্নভাবে শুধু তাদের স্মার্টফোনের প্রচারণার পেছনেই। যেমন ২০১৬ সালে স্যামসাং ১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার খরচ করেছে মার্কেটিংয়ে। এলজির মত কোম্পানি যারা খুব বেশি স্মার্টফোন তৈরি করে থাকে না তারাও এক বিলিয়ন খরচ করেছে সেই বছরই।

বিলবোর্ডে স্যামসাংয়ের বিজ্ঞাপন

অন্যদিকে চীনা কোম্পানিগুলো মার্কেটিংয়ের পেছনে তেমন খরচই করে না। যেমন ওয়ানপ্লাস কোম্পানির প্রথম ফোন ওয়ানপ্লাস ওয়ানের কথা বলা যেতে পারে। ওয়ানপ্লাস ওয়ান প্রচারে কোম্পানিটির বাজেট কত ছিলো জানেন? মাত্র ৩০০ মার্কিন ডলার! তারা তাদের ফোন প্রচারে অদ্ভুত এবং বিতর্কিত কিছু উপায় অবলম্বন করেছিলো। যেমন সামাজিক মাধ্যমগুলোর পাশাপাশি লেডিস ফার্স্ট, ইনভাইট সিস্টেম, স্ম্যাশ দ্য পাস্ট (যেখানে ব্যবহারকারীদের বর্তমান ফোন ভেঙ্গে ফেলতেও দেখা গিয়েছে নতুন ওয়ান প্লাস ওয়ান মাত্র ১ ডলারে নেওয়ার জন্য) ইত্যাদি।

‘Smash the past’; Source: ownstartup.com

তাই চীনা কোম্পানিগুলো প্রচারের দিক থেকে মূলত নির্ভর করে থাকে তাদের ফ্যানবেজ এবং বিভিন্ন সামাজিক প্রচার মাধ্যমগুলোর উপর। তারা ফোনগুলো বিভিন্ন প্রযুক্তি রিভিউয়ার, ইউটিউবার এবং ডেভেলপারদেরও দিয়ে থাকে যারা তাদের ফোনগুলো বিভিন্নভাবে ক্রেতাদের নিকট প্রচার করে থাকে। আর ভালোমানের অথচ দামে স্বস্তা স্মার্টফোন সবসময়ই জনগণের একটি আগ্রহের বিষয়। এজন্য প্রচার মাধ্যমগুলোও নিজে থেকেই সেগুলো সংগ্রহ করে রিভিউ দিয়ে থাকে নিজেদের ভিউ এবং ক্লিক বাড়ানোর জন্য। এভাবে মার্কেটিংয়ের একটি বড় অর্থ বেঁচে যায় চীনা কোম্পানিগুলোর।

সীমিত ‘রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট’ খরচ

চীনের প্রযুক্তি নগরী হলো শেনঝেন। শেনঝেনে ধরা চলে কোনোপ্রকার ‘প্যাটেন্ট ল’ বা স্বত্তাধিকার আইনই নেই। অর্থাৎ কেউ কোনো কিছু আবিষ্কার করলে সেটি অন্যরা ইচ্ছামত নকল করে ব্যবহার করতে পারবে, এমনকি বাজারজাতও করতে পারবে কোনো বাধা ছাড়াই। এজন্য আপনারা হয়তো দেখে থাকবেন, চীনা অনেক স্মার্টফোন কোম্পানি তাদের ফোনে হুবহু আইফোন বা স্যামসাংয়ের বিভিন্ন ডিজাইন কপি করে বাজারজাত করছে নির্বিঘ্নে।

দুটি ফোনের ক্যামেরা ডিজাইনে রয়েছে মিল

এজন্য চীনে কেউ বিশেষ কোনো কিছু তৈরি করলেও ধরে নিতে হয় তা অন্যরা নকল করবেই। তাই সেখানে সবকিছুই ওপেন-সোর্সড বা উন্মুক্ত। একজন একটি জিনিস আবিষ্কার করলে অন্যরা তার বিভিন্নভাবে মানোন্নয়ন করে বাজারজাত করে। তবে এই মানোন্নয়নে খুব বেশি খরচ হয় না। বড় বড় কোম্পানিগুলো যেখানে লাখ লাখ মার্কিন ডলার খরচ করে তাদের গবেষণা এবং মানোন্নয়নে সেখানে এই চীনা কোম্পানিগুলো বড় বড় কোম্পানির আবিষ্কার করা যেকোনো ফিচার নির্দ্বিধায় একটু এদিক সেদিক করে নিজেদের স্মার্টফোনে ব্যবহার করতে পারে। এভাবে তারা যুগোপযোগী স্মার্টফোন বাজারজাত করতে পারে, ধরা চলে কোনোপ্রকার গবেষণা এবং মানোন্নয়ন খরচ ব্যতিরেকেই।

সস্তা যন্ত্রাংশ এবং শ্রম খরচ

চীনা কোম্পানি তো বটেই, অন্যান্য নামীদামী কোম্পানিগুলোও চীনে তাদের ফোন তৈরি করে থাকে। কারণ চীনে রয়েছে প্রচুর শ্রমিক এবং চীনের শ্রমবাজার খুবই সস্তা। এই শ্রমিকদের পেছনে মাথাপিছু মাত্র ৫ ডলার থেকে ১০ ডলার খরচ হয় প্রতিটি ফোন প্রস্তুত করতে। একমাত্র এইচটিসি ব্যতিত যারা তাইওয়ানে শুধু তাদের ফোন তৈরি করে থাকে, অন্যান্য সকল স্মার্টফোন কোম্পানি চীনে তাদের ফোন প্রস্তুত করে থাকে শুধুমাত্র খরচ কম পড়ে বিধায়। আর চীনা কোম্পানিদের নিজের দেশে নিজেদের ফোন প্রস্তুত করতে বিদেশী কোম্পানিদের তুলনায় আরো কম খরচ পড়ে।

সেই সাথে চীনা কোম্পানিগুলো তাদের ইঞ্জিনিয়ার, সহকর্মী, কাস্টমার কেয়ার এজেন্ট, মার্কেটিং এবং ম্যানেজমেন্ট বিষয়ক স্টাফদেরও অন্যান্য কোম্পানিগুলোর তুলনায় কম বেতন দিতে হয়। যেমন চীনের একজন প্রোডাক্ট ইঞ্জিনিয়ারের বেতন বার্ষিক ৩০,৫০০ মার্কিন ডলার, যেখানে যুক্তরাষ্ট্রে সেই পদধারী ব্যক্তির বেতন ৭৪,১৩৬ ডলার এবং জাপানে ৫৩,০০০।

এখন আসা যাক সস্তা যন্ত্রাংশের ব্যাপারে। অনেকে ভেবে থাকেন, চীনা স্মার্টফোন বা চীনা যেকোনো জিনিসই টিকে না, কারণ এতে ব্যবহার করা হয় অনুন্নত এবং সস্তা যন্ত্রাংশ। এই ধারণা কি আসলেই সঠিক? আসুন এ ব্যাপারটি বিশ্লেষণ করা যাক স্মার্টফোনের একটি যন্ত্রাংশ র‍্যামের উদাহরণ দিয়ে।

র‍্যাম

ধরুন, আপনার একটি র‍্যাম ফ্যাক্টরি রয়েছে যেখানে আপনি স্মার্টফোনের র‍্যাম তৈরি করে থাকেন। এখন আপনার ফ্যাক্টরিতে অ্যাপল আসবে ট্রিলিয়ন ডলার বাজেট নিয়ে এবং তারা দাবী করবে আপনার ফ্যাক্টরির সর্বোৎকৃষ্ট র‍্যাম তাদের আইফোনের জন্য দিতে। এক্ষেত্রে মনে প্রশ্ন জাগতে পারে, সর্বোৎকৃষ্ট র‍্যাম কিভাবে নির্ধারণ করা হয়? র‍্যামের মত যন্ত্রাংশ সাধারণত তৈরি করা হয় ব্যাচ হিসেবে।

ধরুন, এক ব্যাচে ১,০০০ র‍্যাম আছে। অ্যাপল সেই ব্যাচের র‍্যামই নিবে যে ব্যাচে সর্বোচ্চ ১০টি র‍্যামের ফ্যাক্টরি কোয়ালিটি চেক ফেইলড বা অনুত্তীর্ণ হয়। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র যন্ত্রাংশগুলোতে এমন কোয়ালিটি ফেইলার স্বাভাবিক। অর্থাৎ সর্বোচ্চ ১% কোয়ালিটি চেক ফেইল সম্বলিত র‍্যামই অ্যাপল সর্বোচ্চ দাম দিয়ে গ্রহণ করবে, তার বেশি নয়।

এখন মনে করুন, স্যামসাং আসলো আপনার কোম্পানিতে এবং তাদের অ্যাপলের মত বাজেট নেই। তাই তারা সর্বোচ্চ ৩% কোয়ালিটি চেক ফেইলড সম্বলিত র‍্যাম কিনলো আপনার কাছ থেকে কিছুটা কম দাম দিয়ে। অর্থাৎ তারা অ্যাপলের থেকে একটু কম মানসম্পন্ন র‍্যাম কিনলো তাদের স্মার্টফোনের জন্য। এখন এই অনুত্তীর্ণ র‍্যামগুলো আসলে কি অকাজের? না! এগুলো শুধু ফ্যাক্টরি স্ট্যান্ডার্ড বা মানের সাথে যায় না।

এখন আপনি যা করলেন তা হলো কোনো কম বাজেট সম্পন্ন চীনা কোম্পানি যেমন UMIDIGI-কে বললেন যে আপনার কাছে ফ্যাক্টরির মাপকাঠিতে যায় না এমন কিছু র‍্যাম আছে যেগুলা একদমই পানির দামে দিয়ে দিতে রাজী। তারা সেগুলো সবচাইতে কমদামে কিনে তাদের স্মার্টফোনে ব্যবহার করলো। এখন কোনো ক্রেতা দেখলো অ্যাপল, স্যামসাং এবং UMIDIGI’র ফোনে একই পরিমাণ হার্ডওয়্যার স্পেসিফিকেশন রয়েছে, অথচ শেষের কোম্পানিটির দাম সবচেয়ে কম। এর কারণ হলো কোম্পানিটি সবচেয়ে কম মানসম্পন্ন যন্ত্রাংশ ব্যবহার করেছে তাদের স্মার্টফোনে।

এটি শুধু একটি উদাহরণ। কিছু কোম্পানি রয়েছে যারা এভাবে কমদামী এবং অনুন্নত যন্ত্রাংশ সস্তা দামে কিনে নিজেদের ফোনে ব্যবহার করে তা কমদামে বিক্রিও করে থাকে। তাই সেসব ফোনে কয়েকদিন পর সমস্যাও বেশি হতে দেখা যায়। আসলে এভাবে ক্রেতারা বুঝতেও পারেন না যে, তারা আসলে কেমন মানের যন্ত্রাংশ সম্বলিত স্মার্টফোন কিনছেন। হয়তো বাইরের কেসিং দেখে এবং ধরে প্রিমিয়াম ফিলিংস আসতে পারে, কিন্তু আসল রহস্যটি থাকে ফোনের ভেতরের যন্ত্রাংশগুলোতে।

সর্বশেষ - তথ্যপ্রযুক্তি