সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক :
চুলের যত্নে মানুষের আদি ও অকৃত্রিম বন্ধু চিরুনি। চিরুনির ইতিহাস বেশ পুরনো। বলা হয়ে থাকে, প্রস্তুর যুগেও মানুষের মধ্যে চিরুনির ব্যবহার ছিল। প্রাচীন চীনে নাকি কারো কাছে চিরুনি থাকাকে আভিজাত্যের প্রতীক মনে করা হতো।
এক সময় পাথর, হরিণ, হাতি ও গবাদি পশুর শিং দিয়ে তৈরি করা হতো চিরুনি। এখন প্লাস্টিক, ফাইবার বা কাঠ ইত্যাদি দ্বারা তৈরি চিরুনির ব্যবহারই বেশি লক্ষ্য করা যায়।
চিরুনি ব্যবহারের সুন্নত : চুলের যত্নে চিরুনির ব্যবহারও নবীজি (সা.)-এর সুন্নত। আমাদের প্রিয় নবীজি (সা.) নিয়মিত চিরুনি ব্যবহার করতেন। তিনি যথাসম্ভব ডান দিক থেকে মাথা আঁচড়ানো পছন্দ করতেন। (নাসায়ি, হাদিস : ৪২১)
এবং সাহাবায়ে কেরামকেও চুলের যত্ন নিতে উৎসাহ দিতেন। চিরুনি ব্যবহারের পরামর্শ দিতেন। ইয়াহইয়া ইবনে সাঈদ (রহ.) হতে বর্ণিত, একদা আবু কাতাদা আনসারি (রা.) রাসুল (সা.)-এর কাছে বলেন, আমার চুল কাঁধ পর্যন্ত (অর্থাৎ বাবরি চুল) আছে।
তবে কি আমি তাতে চিরুনি করব? রাসুল (সা.) বলেন, হ্যাঁ, চিরুনি করো এবং চুলের সম্মান করো। অতঃপর আবু কাতাদা কোনো কোনো সময় দিনে দুবার চুলে তেল লাগাতেন। কারণ রাসুল (সা.) বলেছিলেন, চুলের সম্মান করো। (মুয়াত্তা ইমাম মালেক)
স্ত্রীর মাধ্যমে চুল আঁচড়ানো : মাঝেমধ্যে স্ত্রীর মাধ্যমেও মাথার চুলে চিরুনি ব্যবহার করা সুন্নত। এতে উভয়ের মধ্যে ভালোবাসা বৃদ্ধি পাবে।
আবার নবীজি (সা.)-এর সুন্নতও পালন হবে। আম্মাজান আয়েশা (রা.) প্রায়ই চিরুনির মাধ্যমে নবীজি (সা.)-এর চুল আঁচড়িয়ে দিতেন। এমনকি নবীজি (সা.) যখন ইতিকাফে থাকতেন, তখনো নবীজি (সা.) হুজরা মোবারকের দিকে মাথা এগিয়ে দিলে আম্মাজান ঘরে থেকেই তাঁর চুল আঁচড়িয়ে দিতেন।
হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, আম্মাজান আয়েশা (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) ইতিকাফে থাকাবস্থায় তাঁর শির আমার দিকে ঝুঁকিয়ে দিতেন, আমি তাঁর চুল চিরুনি দিয়ে আঁচড়িয়ে দিতাম। (মুয়াত্তা ইমাম মালেক : ৬৭৭)
অন্য হাদিসে বর্ণিত আছে, আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি ঋতুমতি অবস্থায় রাসুল (সা.)-এর মাথায় চিরুনি করে দিতাম। (নাসায়ি, হাদিস : ৩৮৯)
স্বামী বাড়িতে আসার আগে মাথা আঁচড়ানো : স্ত্রীদের জন্য স্বামীর সামনে পরিপাটি থাকা সুন্নত। এ জন্য নবীজি (সা.) সাহাবায়ে কেরামকে (কেউ আগে থেকে খবর না দিয়ে) সফর থেকে ফিরেই বাড়িতে ঢুকতে নিষেধ করেছেন। যাতে করে স্ত্রীরা প্রয়োজনীয় সৌন্দর্য গ্রহণ করতে পারে এবং মাথার চুল আঁচড়াতে পারে।
জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) হতে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেছেন, সফর থেকে রাতে প্রত্যাবর্তন করে গৃহে প্রবেশ করবে না, যতক্ষণ না অনুপস্থিত স্বামীর স্ত্রী ক্ষুর ব্যবহার করতে পারে এবং এলোকেশী স্ত্রী চিরুনি করে নিতে পারে। (বুখারি, হাদিস : ৫২৪৬)
চিরুনি ব্যবহারে সতর্কতা : চিরুনিতে আটকে থাকা চুলগুলো দাফন করে ফেলা ইসলামের শিক্ষা। এতে মানব অঙ্গের পবিত্রতা যেমন রক্ষা হয়, তেমনি দুষ্ট লোকের অনিষ্ট থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। একবার আমাদের প্রিয় নবীজি (সা.)-কেও চিরুনিতে চুল দিয়ে জাদু করা হয়েছিল মর্মে মুসলিম শরিফের ৫৫৯৬ নম্বর হাদিসে উল্লেখ রয়েছে।
জান্নাতেও চিরুনির ব্যবহার থাকবে : নবীজি (সা.)-এর হাদিস দ্বারা জানা যায়, জান্নাতেও চিরুনির ব্যবহার থাকবে। সেই চিরুনি হবে সোনার তৈরি। আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, সর্বপ্রথম যে দল জান্নাতে প্রবেশ করবে তাদের মুখমণ্ডল হবে পূর্ণিমার রাতের চাঁদের মতো উজ্জ্বল। অতঃপর যে দল তাদের অনুগামী হবে তাদের মুখমণ্ডল হবে আকাশের সর্বাধিক দীপ্তিমান উজ্জ্বল তারকার ন্যায়। তারা পেশাব করবে না, পায়খানা করবে না।
তাদের থুথু ফেলার প্রয়োজন হবে না এবং তাদের নাক হতে শ্লেষ্মাও বের হবে না। তাদের চিরুনি হবে স্বর্ণের তৈরি। তাদের ঘাম হবে মিসকের মতো সুগন্ধযুক্ত। তাদের ধনুচি হবে সুগন্ধযুক্ত চন্দন কাষ্ঠের। বড় চক্ষুবিশিষ্টা হুরগণ হবেন তাদের স্ত্রী। তাদের সকলের দেহের গঠন হবে একই। তারা সবাই তাদের আদি পিতা আদম (আ.)-এর আকৃতিতে হবেন। উচ্চতায় তাদের দেহের দৈর্ঘ্য হবে ষাট হাত। (বুখারি, হাদিস : ৩৩২৭)
মুসলিম শরিফ ও তিরমিজি শরিফের বর্ণনামতে তাদের চিরুনি হবে সোনা-রুপার সংমিশ্রণে তৈরি।
সূত্র: বাংলাদেশ প্রতিদিন