চিকিৎসার অভাবে শিকলে বন্দী ৮ বছর!

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

 

২৫ বছর বয়সী রিতা আক্তার। কোমড়ে লোহার শিকল বাঁধা। শিকলের অপর প্রান্ত রয়েছে মেহেগনি গাছের সঙ্গে। সারাদিন কাটে গাছের গোড়ায় বসেই। কোনো উপায় না থাকায় দীর্ঘ ৮ বছর ধরে এভাবেই দিন কাটছে মানসিক ভারসাম্যহীন রিতার।

রিতা আক্তার শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার ডিঙ্গামানিক ইউনিয়নের পাঁচ নম্বর ওয়ার্ডের ডিঙ্গামানিক গ্রামের আলাউদ্দিন দেওয়ানের (৬৫) মেয়ে। অভাবের সংসারে পাঁচ ভাইবোনের মধ্যে রিতা চতুর্থ। সংসারের টানাটানির কারণে মেয়ের চিকিৎসা করাতে পারেননি আলাউদ্দিন দেওয়ান। মানসিক ভারসাম্যহীন রিতা কখন হারিয়ে যায় এ ভয়েই তাকে শিকল দিয়ে গাছের সঙ্গে বেঁধে রেখেছেন পরিবারের সদস্যরা।

পরিবারের লোকজন জানিয়েছে, মেধাবী রিতা ২০১২ সালে এসএসসি পরীক্ষার দিতে স্কুলের নির্বাচনী পরীক্ষায় অংশ নিয়ে উত্তীর্ণ হন। কিন্তু আর পরীক্ষা দিতে পারেনি সে। হঠাৎ জ্বর হওয়ার পরই মানসিকভাবে ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ে রিতা।

অসুস্থ হওয়ার পর অস্বাভাবিক আচরণ করে সে। লোকজনের দিকে তেড়ে যান। মারধর করেন। উপায় না পেয়ে তাকে গাছের সঙ্গে শিকল দিয়ে আটকে রেখেছে পরিবারের লোকজন। এভাবেই কাটছে ৮ বছর।

সরেজমিনে দেখা যায়, রিতা বাড়ির পাশে বাঁশ ও কাঠ দিয়ে বানানো মাচায় বসে আছে। কোমরে শিকলের সঙ্গে তালা ঝুলছে। শিকলের আরেক দিক একটি মেহগনি গাছের সঙ্গে যুক্ত। সাংবাদিকের উপস্থিতিতে এলাকার মানুষ জড়ো হয় সেখানে। মানুষ দেখে বিরক্ত হয়ে মুখ ঘুরিয়ে নেয় রিতা।

রিতার বাবা আলাউদ্দিন দেওয়ান ও মা মেহের বানু জানান, ২০১২ সালে কার্তিকপুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষা দেওয়ার কথা ছিল রিতার। কিন্তু হঠাৎ জ্বরের পর মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে। অভাবের সংসারের কারণে চিকিৎসা করানোর সাধ্য হয়ে ওঠেনি।

রিতার চাচা মো. সোহরাব দেওয়ান জানান, টাকার অভাবে মেয়ের চিকিৎসা করানো সম্ভব হয়নি। এখনো সঠিকভাবে চিকিৎসা করাতে পারলে ভালো হয়ে উঠতে পারে সে।

রিতার ভাই অন্তর দেওয়ান (২১) বলেন, ‘শিকলে বেঁধে রাখতে হয় রিতা আপাকে। বেঁধে না রাখলে মানুষকে মারধর করে। বাড়ি ছেড়ে চলে চায়। যদি কখনো টাকা জোগাড় করতে পারি তাহলে বোনের চিকিৎসা করাবো।’

শরীয়তপুরের সিভিল সার্জন ডা. এস এম আব্দুল্লাহ আল মুরাদ বলেন, ‘বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শে সরকারি মানসিক হাসপাতালে ভর্তি করা হলে মেয়েটি স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারে। রিতার পরিবারের সঙ্গে আমরা যোগাযোগ করবো’

নড়িয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তানভীর আল নাসীফ বলেন, ‘রিতার বিষয়টি জানি। তার চিকিৎসার জন্য সমাজসেবা কর্মকর্তাকে অবগত করা হয়েছে। আমরা এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।’

 

সূত্র: আমাদেরসময়