চাঁপাইনবাবগঞ্জে সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের মোহরার পকেটে সরকারি রাজস্বের টাকা

নিজস্ব প্রতিবেদক, চাঁপাইনবাবগঞ্জঃ

সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের এক মোহরার বিরুদ্ধে প্রায় দুই বছর ধরে কোন রশিদ ছাড়াই এন ফিস এবং এনএন ফিসের টাকা আদায় করার অভিযোগ উঠেছে চাঁপাইনবাবগঞ্জে। সরকারি নির্ধারিত ফি’র প্রায় তিন গুণ অর্থ আদায়ের অভিযোগ রয়েছে বর্তমানে শিবগঞ্জ উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের দ্বিতীয় মোহরারের দায়িত্বে থাকা মো. সেলিমের বিরুদ্ধে।

রশিদ ছাড়াই অর্থ আদায় করায় এতে বিপুল পরিমান অর্থ রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। জেলার গোমস্তাপুর উপজেলার বোয়ালিয়া গ্রামের কালুর ছেলে মহরার সেলিম সরকার নির্ধারিত এন এবং এনএন ফিসের অতিরিক্ত আদায় করে আত্মসাৎ করেন।

জানা যায়, বিপুল পরিমান অর্থ আদায়ের পর এর ভাগ-বাটোয়ারা হয় এই অনিয়মের সাথে জড়িত সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মাঝে। যার বড় অংশই থাকে সেলিমের পকেটে।

অভিযোগ রয়েছে, বিভিন্ন অনিয়ম ও জেলা রেজিস্ট্রারের সাথে অসদাচরনের জন্য সদর উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রি অফিস হতে মাসখানেক আগে শিবগঞ্জ উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে বদলি করা হয় সেলিমকে। এর আগে সদর উপজেলা সাব-রেজিস্ট্র্রি অফিসে সেলিম ১ বছর ১০ মাস মোহরারের দায়িত্ব পালনে এভাবেই কোন রশিদ ছাড়াই অর্থ আদায় করে।

তবে শিবগঞ্জ উপজেলা সাব-রেজিস্ট্র্রি অফিসে যোগদানের ১ মাসের মধ্যেই উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ তার এসব অনিয়মের কথা জানতে পারে। সাব-রেজিস্ট্র্রি অফিস সূত্রে জানা যায়, সব ধরনের দলিল রেজিস্ট্র্রির ক্ষেত্রে সরকার নির্ধারিত এন ফিস ৩০০ শব্দের এক পৃষ্ঠা বা তার অংশের জন্য বাংলায় ১৬ টাকা ও ইংরেজিতে ২৪ টাকা মিলে সর্বমোট ৪০ টাকা। অন্যদিকে, এনএন ফিস দলিল প্রতি বাংলার জন্য ২৪ টাকা ও ইংরেজিতে ৩৬ মিলে সর্বমোট ৬০ টাকা।

অনুসন্ধানে জানা যায়, দলিল প্রতি রেজিস্ট্রি করতে প্রত্যেক পাতায় বাংলা ও ইংরেজি মিলে ৪০ টাকা নেয়ার কথা থাকলেও নেয়া হয় ৬০ টাকা। একটি দলিলে সাধারণত দশ পাতা ধরা হয়। সে হিসেবে শুধুমাত্র এন ফিস বাবদ দলিল প্রতি সেবাগ্রহীতাকে গুণতে হয় ৬০০ টাকা। এমনকি এনএন ফিসে দলিল প্রতি ১০০ টাকা নেয়ার কথা থাকলেও সেখানে নেয়া হচ্ছে ২৫০ টাকা। সবমিলিয়ে দলিল প্রতি খরচ ৮৫০ টাকা।

সূত্র জানায়, চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে দৈনিক এক থেকে দেড়শ দলিলের কাজ সম্পন্ন করা হয়। সে হিসেবে দৈনিক একশ দলিল ধরলে ৮৫০ টাকা করে সদর উপজেলা ও শিবগঞ্জ উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে মোট ১ বছর ১১ মাসে কোটি টাকার বেশি আদায় করেছে সেলিম। প্রশ্ন রয়েছে সেলিমের নিয়োগ ও শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়েও। শিক্ষাগত যোগ্যতায় মাধ্যমিক বা এসএসসি পাশ করার সার্টিফিকেট দেয়া থাকলেও তা উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। তথ্য রয়েছে, শিবগঞ্জ উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে প্রায় ১ যুগের বেশি সময় ধরে নকলনবিস হিসেবে কাজ করেছেন সেলিম। সেই সময় নকলনবিসের সংগঠন-বাংলাদেশ এক্সটা মোহরার এ্যাসোসিয়েশন হতে বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্ণীতির কারনে লাঞ্ছিত, বহিষ্কৃত ও শাস্তি পেয়েছেন সেলিম। এবিষয়ে শিবগঞ্জ উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের মোহরার মো. সেলিম অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, এসব অভিযোগ ভিক্তিহীন, মিথ্যা ও বানোয়াট।

এসব অভিযোগের সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেয়। শিবগঞ্জ উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রিার মোছা. সামীমা পারভীন এবিষয়ে কোন কথা বলতে নারাজ। জেলা রেজিস্ট্রার আলী আকবর বলেন, সেলিমের বিরুদ্ধে পাওয়া এসব অভিযোগ খতিয়ে দেখার পর তদন্ত শেষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।