চাঁপাইনবাবগঞ্জে করোনার নমুনা সংগ্রহ ধীরগতি: গত ১০ দিনে সংগ্রহ ২২৮

নিজস্ব প্রতিবেদক,চাঁপাইনবাবগঞ্জ:
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় চলতি মাসে করোনা পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। গত বৃহস্পতিবার জেলাতে সর্বোচ্চ ৩৫ জন আক্রান্ত হয়েছে।
১০ জুলাই পর্যন্ত মোট আক্রান্ত হয়েছেন ১৭৪ জন।এর মধ্যে সদর উপজেলায় ৭৮ জন, শিবগঞ্জে ৩৩, গোমস্তাপুরে ৩১, নাচোলে ১৮ ও ভোলাহাটে ১৪ জন।
জেলাতে এ পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ৯৩ জন। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ৩৩ জন, শিবগঞ্জে ১৬, গোমস্তাপুরে ২০, নাচোলে ১২ ও ভোলাহাটে ১২ জন। তবে আক্রান্তের সংখ্যা বর্তমানে বাড়লেও জেলাতে নমুনা সংগ্রহে ধীরগতি পরিলক্ষিত হয়েছে।
জেলাতে করোনা শনাক্ত হওয়া প্রায় তিন মাস হতে চলেছে। অনেকেই আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন যে, বেশি বেশি নমুনা পরীক্ষা না করার কারণে জেলাতে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ব্যাপকতা লাভ করবে। সম্প্রতি যেভাবে আক্রান্তের খবর পাওয়া যাচ্ছে, তাতে দ্রুতই বেশি বেশি নমুনা পরীক্ষা করার ব্যবস্থা করতে হবে।
অনেকেই মনে করে প্রয়োজনে সরকার কর্তৃক নির্ধারিত ফি প্রত্যাহার করে নিতে হবে। তা না হলে স্বেচ্ছায় কেউ নমুনা পরীক্ষা করতে যাবে বলে মনে হয় না।
প্রায় ১৮ লাখ জনগোষ্ঠীর এ জেলাতে সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্যানুযায়ী, গত ১০ জুলাই পর্যন্ত নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে ৩ হাজার ৭০৯টি।এর মধ্যে সদর উপজেলায় ১ হাজার ২৯৯টি, শিবগঞ্জে ৭১০টি, গোমস্তাপুরে ৬২৩টি, নাচোলে ৫৬৪টি ও ভোলাহাটে ৫১৩টি। লক্ষণীয়, শিবগঞ্জ উপজেলায় জনগোষ্ঠী বেশি হলেও সেখানে এ পর্যন্ত নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে মাত্র ৭১০টি।
এর মধ্যে গত ২০ দিনে নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে ৬৪৮টি। আর সরকার কর্তৃক করোনা পরীক্ষার ফি নির্ধারণ করার পর নমুনা সংগ্রহের গতি আরো কমেছে।
গত জুন মাসের শেষ ১০ দিনে অর্থাৎ ২১ থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত জেলাতে নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে ৪২০টি। এর মধ্যে ২৪ জুন সংগ্রহ হয় ১৩৯টি। যার মধ্যে সদরে ৫৮, শিবগঞ্জে ২৮, গোমস্তাপুরে ৪২, নাচোলে ৩ এবং ভোলাহাটে ৮টি।
বাকি ২৮১টি নমুনা সংগ্রহ হয় ৩০ জুন। এর মধ্যে সদরে ১২৮, শিবগঞ্জে ৪১, গোমস্তাপুরে ২৮, নাচোলে ৫১ এবং ভোলাহাটে ৩৩টি।
চলতি জুলাই মাসের প্রথম ১০ দিনে জেলাতে নমুনা সংগ্রহ হয়েছে ২২৮টি। এর মধ্যে ১০ জুলাই সংগ্রহ হয় ১২৯টি। যার মধ্যে সদরে ৭৪, শিবগঞ্জে ৩০, গোমস্তাপুরে ১০, নাচোলে ৯ এবং ভোলাহাটে ৬টি। বাকি ৯৯টি নমুনা ৩ ও ৫ জুলাই সংগ্রহ করা হয়। ২০ দিনের পরিসংখ্যানে একটা বিষয় লক্ষণীয়, তাহলো ফি নির্ধারণের পর নমুনা সংগ্রহ আরো কমেছে।
জুন মাসের শেষ ১০ দিনে ৪২০টি নমুনা সংগ্রহ হলেও চলতি জুলাইয়ের প্রথম ১০ দিনে নমুনা সংগ্রহ হয়েছে মাত্র ২২৮টি। অর্থাৎ ১৯২টি কম সংগ্রহ হয়েছে শেষ দশ দিনে।
উল্লেখ্য, গত ২৯ জুন সরকার করোনা টেস্টের ফি নির্ধারণ করে দেয়। বাড়িতে গিয়ে নমুনা সংগ্রহের জন্য ৫০০ টাকা, বুথে ২০০ টাকা এবং হাসপাতালে ভর্তি রোগীর জন্য ২০০ টাকা ফি নির্ধারণ করা হয়। জেলাতে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয় গত ২০ এপ্রিল। আর এখানে করোনা ভাইরাস শনাক্তের জন্য নমুনা সংগ্রহ শুরু হয় ৭ এপ্রিল থেকে।
সে হিসাবে গত ১০ জুলাই পর্যন্ত মোট ৯৫ দিনে নমুনা সংগ্রহ হয়েছে ৩ হাজার ৭০৯টি। গড়ে প্রতিদিন ৩৯টি নমুনা সংগ্রহ হয়েছে। আর মোট জনগোষ্ঠীর হিসাবে জেলাতে নমুনা সংগ্রহ শতকরা ১ ভাগও হয়নি।
আর চলতি জুলাইয়ের প্রথম ১০ দিনে নমুনা সংগ্রহের গড় হার প্রায় ২৩টি। জুনের শেষ দশ দিনে নমুনা সংগ্রহের গড় হার ছিল ৪২টি। সে হিসাবে জুনের শেষ দশ দিনের তুলনায় জুলাইয়ের প্রথম দশ দিনে গড়ে প্রায় ১৯টি নমুনা সংগ্রহ কম হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শিবগঞ্জ কলেজের এক শিক্ষক জানান, বেশি বেশি নমুনা পরীক্ষা করার কোনো বিকল্প নেই। সাধারণ মানুষ এমনিতেই আতঙ্কের জায়গা থেকে স্বেচ্ছায় নমুনা পরীক্ষা করতে যেতে চান না। তার ওপর ফি নির্ধারণ করে দেয়ায় নমুনা পরীক্ষার গতি আরো কমবে বলে মনে করেন তিনি।
এই শিক্ষক আরো জানান, এখনো সময় আছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলাকে সুরক্ষিত করার। আর এর জন্য বেশি বেশি নমুনা পরীক্ষার কোনো বিকল্প নেই।
নমুনা কম সংগ্রহের বিষয়ে সিভিল সার্জন ডা. জাহিদ নজরুল চৌধুরী গতকাল রবিবার বলেন, জেলাতে গত দশ দিনে নমুনা সংগ্রহে ধীরগতির কারণ হচ্ছে এখানে তিনজন এমটি-ল্যাব করোনা পজিটিভ।যে কারণে প্রতিদিন ৫০টি নমুনা সংগ্রহের টার্গেট পূরণ করা সম্ভব হচ্ছে না।
তিনি বলেন, প্রত্যেক উপজেলায় মাত্র একজন করে এমটি-ল্যাব আছেন। এদের মধ্যে তিনজনই করোনা পজিটিভ হওয়ায় নমুনা সংগ্রহে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়েছে। তবে ফি নির্ধারণের জন্য নমুনা সংগ্রহ কমে গেছে বলে তিনি মনে করেন না।
সিভিল সার্জন বলেন, “আমরা এখন সেসব ব্যক্তিরই নমুনা সংগ্রহ করছি যাদেরকে ডাক্তার সাজেস্ট করছেন। তিনি বলেন, আশা করছি আবারো নমুনা সংগ্রহ বেড়ে যাবে। করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ এড়াতে জেলাবাসীকে স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলার আহ্বান জানান তিনি।