চাঁপাইনবাবগঞ্জে আড়তদারদের কাছে জিম্মি ব্যাবসায়ীরা: আমের মণ ৫০ কেজিতে

নিজস্ব প্রতিবেদক, চাঁপাইনবাবগঞ্জ:

আমের রাজধানী হিসেবে পরিচিত চাঁপাইনবাবগঞ্জ। আর এই জেলার সব চেয়ে বড় আম বাজার কানসাট। গত ১৫ দিন থেকে ধীরে ধীরে জমে উঠেছে আম বাজার। এদিকে বাজারে কৃষকদের জিম্মি করে ৫০ কেজিতে মণ নেয়ার অভিযোগ উঠেছে আড়ৎদারদের বিরুদ্ধে।

কৃষকরা বলছেন- করোনার কারণে একে আমের দাম কম, অন্যদিকে ৪০ কেজিতে মণ হওয়ার কথা থাকলেও নিচ্ছেন ৫০ কেজিতে। এতে ওজন নিয়ে বিপাকে পড়েছে ব্যবসায়ীরা। মঙ্গলবার (২২ জুন) দুপুর ১ টার দিকে সরজমিনে কানসাট আম বাজারে গিয়ে এমন চিত্র দেখা গেছে। হাকিম নামে এক আম চাষি বসে ছিলেন কানসাট বাজারের এক গাছের নিচে।

চাচা এখানে কি করছেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এক ভ্যান গুটি জাতের আম নিয়ে কানসাট বাজারে এসেছিলাম বাপু। বিক্রি বিক্রি করেছি ৩৫০ টাকা মণ দরে। ওজন করার পরে জানতে পারলাম আমের মণ ৫০ কেজিতে। হিসেব করে পেয়েছি মাত্র ১ হাজার ৪০০ টাকা। এ টাকা দিয়ে ভ্যান ভাড়া দিব না নিজে খাব কহো বাপু। বিষ খরচ হয়েছে সব মিলিয়ে প্রায় ৫০ হাজার টাকা।

জসিম নামে এক আম ব্যবসায়ী বলেন, সকাল সাড়ে সাতটার দিকে থেকে বসে আছি ক্ষিরসাপাত আম নিয়ে। নেই কোন ক্রেতা, দাম বলছেন ১২’শ টাকা মণ। প্রচণ্ড গরমে আর কতক্ষণ বসে থাকবো। এদিকে আমের মণ ৪০ কেজিতে নেয়ার কথা থাকলেও ৫০ কেজিতে নিচ্ছেন আড়ৎদারা। আমরা সারাবছর খাব কি? আমরা তো ৫ থেকে ৬ কেজি বেশি দিচ্ছি।

আমের ওজন ৪৫ থেকে ৪৬ কেজিতে করার দাবি জানান তিনি। আমিনুল নামে এক আড়তদার বলছেন- আম হচ্ছে কাঁচা মাল দেশের বিভিন্ন এলাকায় পৌঁছাতে ওজন কমে যায়। এ জন্যই প্রধানত ১০ কেজি আম বেশী নেয়া হচ্ছে।

৫০ কেজি ওজন নেওয়ার জন্য প্রশাসনের কোন অনুমতি আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, সবাই নিচ্ছে তাই আমরাও নিচ্ছি।

ম্যাংগো ফাউন্ডেশনের সদস্য সচিব ও সাংবাদিক আহসান হাবিব জানান, আমের ওজন নিয়ে ২০১৬-২০১৭ তে আন্দোলন করি সঠিক ওজন নেয়া ও ডিজিটাল মিটারে ওজন নেয়ার। তখন অনেকেই এটা নিয়ে না বুঝে এবং আড়তদারদের মিথ্যা প্রচারণায় আমাদেরই দোষারোপ করে। এক সময় আড়তদারদের বাধ্য করি ডিজিটাল মিটার ব্যবহারে, তখন থেকে ওজন কারচুপি রোধে ডিজিটাল মিটার চালু হয় এবং ৪৫-৪৬ কেজিকে এক মণ ধরে আম কেনা শুরু করে আড়তদাররা। জেলা প্রশাসনের সভায় তখন লিখিত রেজুলেশনও হয়েছিল ৪০ কেজিতে এক মণ হিসেবে করার। পরে জেলা ও উপজেলা প্রশাসন কোথাও এর বাস্তবায়নে ভূমিকা নেইনি। গত দুই তিনবার থেকে এবারও আম নিয়ে চাঁদাবাজি করছে বিভিন্ন আড়তদাররা।

তিনি আরও বলেন- আমি নিজে অনেক আম ক্রয় বিক্রয় করছি। স্থানীয় বাজারে আমার আম বিক্রি করিনা, দেশে ও বিদেশে নতুন ও আন্তর্জাতিক মানের প্যাকেট করে নিজস্ব পরিবহনে সরবরাহ করছি। আমচাষীদের কাছ থেকে ৪৫ কেজি হিসেবে ক্রয় ও একইভাবে বিক্রয় রেট ধরি। ওজনে চাঁদাবাজী রোধে প্রয়োজনে আবারো আন্দোলনের পাশাপাশি আদালতের স্বরানাপন্ন হব।

আম আড়তদার ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি লিমিটেডের সাধারণ সম্পাদক উমর ফারুক টিপু জানান, কানসাট বাজারে আমের মণ ৪০ কেজিতে। তবে দেশের বিভিন্ন স্থানে ট্রাকে পৌঁছাতে ওজন কমে যায় তাই ৫-৬ কেজি আম বেশী নেয়া হয়। তবে কৃষকের কাছে ৫০ কেজিতে মণ নেয়া হচ্ছে এ বিষয়ে তিনি অবগত নই।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে শিবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাকিব আল রাব্বি বলেন, আমের মণ ৪০ কেজির বাইরে নেয়ার কোন সুযোগ নেই। তবে এ ঘটনায় কেউ লিখিত অভিযোগ দিলে আইনী ব্যবস্থা নেয়া হবে।

স/রি