নওগাঁ

ঘুষ না দেওয়ায় কর্মচারিকে চাকরিচ্যুত করলেন ইউএনও!

নওগাঁ প্রতিনিধি:

নওগাঁর বদলগাছী উপজেলা পরিষদে দীর্ঘ ২৫ বছর যাবত কর্মরত এক মালীকে জোরপূর্বক চাকরিচ্যুত করার অভিযোগ উঠেছে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) বিরুদ্ধে। ২ লক্ষ টাকা ঘুষ দিতে না পারায় ৭ মাস যাবত ওই কর্মচারীর বেতন-ভাতাদি বন্ধ রাখা হয়েছে। এ বিষয়ে গত ৩ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তর বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী।

ভুক্তভোগী কর্মচারির নাম রফিকুল ইসলাম। অভিযুক্ত বদলগাছী উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আলপনা ইয়াসমিন।

লিখিত অভিযোগ ও ভুক্তভোগীর পরিবার সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯৬ সালে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা অধিদপ্তরের (উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা প্রকল্প-২)-এর অধীনে নওগাঁ জেলার বদলগাছী উপজেলা পরিষদে এমএলএসএস পদে যোগদান করেন জামালপুর জেলার মেলান্দহ উপজেলার মালঞ্চ গ্রামের রফিকুল ইসলাম। ২০০৩ সালে প্রকল্পটি বন্ধ হয়ে গেলে তার অসহায়ত্বের কথা বিবেচনা করে স্থানীয় সরকার বিভাগের নিয়োগ বিধি মোতাবেক মালী পদে তাকে নিয়োগ দেওয়া হয়। চাকরির সুবাদে উপজেলা পরিষদের কোয়ার্টারে স্বপরিবারে থাকতেন তিনি। মালীর দায়িত্বের পাশাপাশি ইউএনও’র বাড়িতে খাবার সরবরাহ এবং বাড়ির অন্যান্য কাজগুলোও তাকে দিয়েই করানো হতো।

জানা যায়, গত বছর ১ এপ্রিল উপজেলায় নতুন ইউএনও হিসেবে যোগদান করেন আলপনা ইয়াসমিন। যোগদানের পর মালীকে বাড়তি কাজের চাপে ফেলতে শুরু করেন। টানা তিন মাস নৈশ প্রহরী হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে বাধ্য করা হয় মালী রফিকুল ইসলামকে। তারপর তাকে দিয়ে ইউএনওর বাসায় রান্নার কাজও করানো হতো। হঠাৎ গত ২৭ জানুয়ারী রাত ৮টার দিকে মালিকে বাংলোতে ডাকেন ইউএনও। সেখানে তাকে  গালিগালাজ এবং চাকরিচ্যুত করার হুমকি দেন ইউএনও। এক পর্যায়ে মালীর চাকরি পুনর্বহালে ২ লক্ষ টাকা দাবি করেন তিনি। পাশাপাশি মালীকে কোয়ার্টার থেকে বের হয়ে যেতে বলেন, না গেলে মাদক মামলায় ফাঁসানোর হুমকি দেন ইউএনও। মালী কোয়ার্টার থেকে বের না হওয়ায় দীর্ঘ ৭ মাস যাবত তার বেতন ভাতাদি বন্ধ করে দেয়া হয়। এবিষয়ে প্রতিকার চেয়ে গত ২৮ জুলাই নওগাঁর জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ  করেন মালী রফিকুল ইসলাম।

ভুক্তভোগী মালী রফিকুল ইসলাম বলেন, আমার দুইটি কন্যা সন্তান রয়েছে। বড় মেয়েটি চলতি বছর এসএসসি পরিক্ষার্থী। সে পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেলিতে জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে। আমার মেয়ের এসএসসি পরিক্ষা নিয়ে খুবই দুশ্চিন্তায় আছি। অন্য জায়গায় আবাসস্থল নেওয়ার মতো আমার আর্থিক কোন সঙ্গতি নেই। আবাসস্থল ত্যাগ করলে তার লেখা-পড়ার চরম ক্ষতি হবে এবং তার জীবন অনিশ্চিত হয়ে পড়বে।

বদলগাছী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আলপনা ইয়াসমিন বলেন, ‘মালী হিসেবে এখানে কে কাজ করবে সেটা উপজেলা পরিষদের সিদ্ধান্ত। পরিষদের মাসিক সভায় সিদ্ধান্তে অন্য একজনকে মালী হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এসব বিষয়ে বিস্তারিত জানতে চাইলে অফিসে এসে কথা বলতে বলেন তিনি।’

বদলগাছী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শামসুল আলম খাঁন বলেন, ‘মালী রফিকুল ইসলাম ভদ্র একটি ছেলে, অনেক আগে থেকে এখানে চাকরি করেন। ইউএনও কোনভাবেই মালী হিসেবে রফিকুলকে রাখতে চাচ্ছেন না। ইউএনও’র একটাই কথা “এখানে ঐ মালী থাকবে, নয় আমি থাকবো”। তাই বাধ্য হয়ে মাসিক সভায় অন্য একজনকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।’

জি/আর