ঘুরছে গণপরিবহনের চাকা, মানা হচ্ছে না নির্দেশনা

প্রায় দুই মাস বন্ধ থাকার পর আজ সোমবার (১ জুন) রাজধানীসহ দেশজুড়ে বাস ও মিনিবাস চলাচল শুরু হয়েছে।

এদিকে, গণপরিবহন চলাচল শুরু হলেও নির্ধারিত ভাড়া আদায় ও স্বাস্থ্যবিধি- কোনোটাই মানা হচ্ছে না বেশিরভাগ ক্ষেত্রে।

গতকাল রবিবার (৩১ মে) দূরপাল্লার, ঢাকা ও তার আশপাশে এবং চট্টগ্রাম মহানগরীর বাস ও মিনিবাসের ভাড়া ৬০ শতাংশ বাড়িয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে সরকার। বিআরটিসির বাসেও এই নতুন ভাড়া কার্যকরের কথা বলা হয়। নতুন ভাড়ায় বাস চালানোর আগে গতকাল রাজধানীর বেশ কিছু রাস্তায় বাসে যাত্রী পরিবহন করতে দেখা যায়। তবে আজ সকাল থেকে বিভিন্ন স্থান থেকে অভিযোগ এসেছে, গণপরিবহণের নির্ধারিত ভাড়ার বেশি আদায় করা হচ্ছে। ৬০ শতাংশ বেশি ভাড়া নেওয়ার কথা থাকলেও কোনো কোনো ক্ষেত্রে ৮০ শতাংশ এবং কোথাও কোথাও তারও বেশি আদায় করা হচ্ছে।

বাসের চালক-কন্ডাক্টর এবং যাত্রীদের মধ্যেও সামাজিক দূরত্বসহ স্বাস্থ্যবিধি মানতে দেখা যায়নি। এ অবস্থায় আজ ব্যাপক হারে বাস চলাচল শুরু হলেও স্বাস্থ্যবিধি না মানার আশঙ্কা করা হচ্ছে। কারণ, বাসে করোনাকালে স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে কি না তা দেখার জন্য করা হয়নি কোনো কমিটিও। এ অবস্থায় করোনাভাইরাসের বিস্তার ও বেশি ভাড়া আদায়ের কারণে যাত্রীদের দুর্ভোগ- দুই-ই বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। যদিও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এ বিষয়ে গত শনিবার থেকে নির্দেশনা দিচ্ছেন পরিবহন মালিকদের।

গত শনিবার বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) থেকে বাস ও মিনিবাসের ভাড়া ৮০ শতাংশ বাড়ানোর সুপারিশ তৈরি করে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছিল। স্বাস্থ্যবিধি বিশেষ করে সামাজিক দূরত্ব মেনে বাস চালাতে হবে প্রতিটি বাস-মিনিবাসের ৫০ শতাংশ আসন খালি রেখে। অর্ধেক আসন খালি রেখে বাস চালাতে হবে বলে পরিবহন মালিকরা শতভাগ ভাড়া বাড়ানোর প্রস্তাব করেছিলেন। পরে তা ব্যয় বিশ্লেষণ সংক্রান্ত কমিটির সভায় ২০ শতাংশ কমিয়ে ৮০ শতাংশ করার সুপারিশ করা হয়।

করোনাকালে বাস চালানোর নতুন নির্দেশনা অনুসারে, একজন যাত্রীকে বাসের দুইটি আসনের একটি আসনে বসিয়ে অপর আসনটি অবশ্যই ফাঁকা রাখতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি অনুসারে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। কোনোভাবেই সংশ্লিষ্ট মোটরযানের রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেটে উল্লিখিত মোট আসন সংখ্যার অর্ধেকের বেশি যাত্রী বহন করা যাবে না এবং দাঁড়িয়ে কোনো যাত্রী বহন করা যাবে না। অনুমোদিত এই ভাড়ার হার করোনাভাইরাসজনিত (কভিড-১৯) সংকটকালের জন্য প্রযোজ্য হবে। এ সংকট দূর হলে আগের ভাড়া পুনঃ প্রযোজ্য হবে। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, জনস্বার্থে জারি করা এ ভাড়ার হার ১ জুন (আজ) থেকে কার্যকর হবে। বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, চটজলদি এ বাসভাড়া বাড়ানো হয়েছে পরিবহন মালিকদের স্বার্থে। এখানে যাত্রীস্বার্থ দেখা হয়নি।

গতকাল সকাল থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে কিছু বাস ও মিনিবাস চলতে দেখা যায়। তবে আজ সোমবার সকাল থেকে দূরপাল্লাসহ সব ধরনের গণপরিবহন চলাচল করছে। বিভিন্ন স্থানে যাত্রী তোলার ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধি মানতে দেখা যায়নি। অনেক পরিবহনের বাসে গতকাল সকালে গাগাগাদি করে যাত্রী তুলতে দেখা গেছে। কমলাপুর রেলস্টেশনের সামনে তুরাগ পরিবহনেও দেখা গেছে সামাজিক দূরত্ব বজায় না রেখে যাত্রী তুলতে। ভাড়া আদায়েও চলছে চরম অরাজকতা। করোনাকালে রাজধানীতে বাস চলাচল তদারকি করতে গঠন করা হয়নি কোনো কমিটি।

 

সুত্রঃ কালের কণ্ঠ