গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বেড়েছে ৫ শতাংশ

সিল্কসিটি নিউজ ডেস্ক:

আরেক দফা বাড়ানো হয়েছে বিদ্যুতের দাম। গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বেড়েছে ৫ শতাংশ। এতে প্রতি ইউনিটে (প্রতি কিলোওয়াট) বাড়ল ১৯ পয়সা। দাম বাড়িয়ে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম ৭ টাকা ৩২ পয়সা করা হয়েছে। যা আগে ছিল ৭ টাকা ১৩ পয়সা। বৃহস্পতিবার (১২ জানুয়ারি) প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর ঘোষণা দেওয়া হয়। চলতি জানুয়ারি থেকেই নতুন দাম কার্যকর হবে বলে প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়।

এতে আরো বলা হয়, আবাসিক গ্রাহকদের মধ্যে শূন্য থেকে ৫০ ইউনিট ব্যবহারকারী লাইফলাইন গ্রাহকদের বিদ্যুতের দাম ইউনিটপ্রতি ৩ টাকা ৭৫ পয়সা থেকে বেড়ে ৩ টাকা ৯৪ পয়সা, শূন্য থেকে ৭৫ ইউনিট ব্যবহারকারীর বিদ্যুতের দাম ৪ টাকা ১৯ পয়সা থেকে বেড়ে ৪ টাকা ৪০ পয়সা, ৭৬ থেকে ২০০ ইউনিট ব্যবহারকারীদের ৫ টাকা ৭২ পয়সা থেকে বেড়ে ৬ টাকা ১ পয়সা, ২০১ থেকে ৩০০ ইউনিট ব্যবহারকারোদের ৬ টাকা থেকে বেড়ে ৬ টাকা ৩০ পয়সা, ৩০১ থেকে ৪০০ ইউনিটের জন্য ৬ টাকা ৩৪ পয়সা থেকে বেড়ে ৬ টাকা ৬৬ পয়সা, ৪০১ থেকে ৬০০ ইউনিটের জন্য ৯ টাকা ৯৪ পয়সা থেকে বেড়ে ১০ টাকা ৪৫ পয়সা এবং ৬০০ ইউনিটের ওপরে বিদ্যুৎ ব্যবহারকারী আবাসিক গ্রাহকদের বিদ্যুৎ বিল ১১ টাকা ৪৯ পয়সা থেকে বেড়ে ১২ টাকা ৩ পয়সা করা হয়েছে।

এর আগে গত ২১ নভেম্বর পাইকারি পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম ১৯ দশমিক ৯২ শতাংশ বাড়িয়ে ৬ টাকা ২০ পয়সা নির্ধারণ করা হয়। একই মাসে গ্রাহক পর্যায়ে ২০ থেকে ২৩ শতাংশ বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দেয় দেশের ছয়টি বিতরণকারী কম্পানি। এই প্রস্তাবের ওপর গত রবিবার বিইআরসি গণশুনানি করে। শুনানিতে গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম ১৫ দশমিক ৪৩ শতাংশ বা প্রতি ইউনিটে ১ টাকা ১০ পয়সা বাড়ানোর সুপারিশ করে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) কারিগরি কমিটি।

বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, গ্রাহক পর্যায়ে এর আগে সর্বশেষ দাম বেড়েছিল ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে। সে সময় বাড়ানো হয়েছিল ৫ দশমিক ৭৭ শতাংশ। স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অধিবেশনে এসংক্রান্ত সম্পূরক প্রশ্নটি উত্থাপন করেন জাতীয় পার্টির ফখরুল ইমাম। তিনি এক-এগারো পরিস্থিতি তুলে ধরে দেশের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য জানতে চান। জবাবে প্রধানমন্ত্রী ওই বক্তব্য তুলে ধরে বর্তমানে তেমন কোনো পরিস্থিতি নেই বলে উল্লেখ করেন। একই সঙ্গে আওয়ামী লীগের প্রতি আস্থা রাখার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান।

এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, একাত্তর সালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী যেভাবে এ দেশের মানুষের ওপর অত্যাচার করেছিল, ঠিক সেইভাবে ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত অত্যাচার-নির্যাতন চলেছে। বিএনপি-জামায়াত জোট ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা, ব্রিটিশ হাইকমিশনারের ওপর হামলাসহ দেশব্যাপী নাশকতা চালিয়েছে। এরপর এক কোটি ২০ লাখ ভুয়া ভোটার তৈরির মাধ্যমে তারা আবারও ক্ষমতায় আসতে চেয়েছিলে। জনগণ তা প্রতিহত করেছিল। তিনি বলেন, বিএনপির চরম দুঃশাসনের কারণে এক-এগারো এসেছিল।

সরকারি দলের সদস্য ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুর প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে আরো কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, ‘যারা মজুদদারি, কালোবাজারি এবং যারা এলসি খোলা নিয়ে দুইনম্বরি করবে, তাদের বিরুদ্ধে আমরা যথাযথ ব্যবস্থা নিচ্ছি এবং নেব। প্রয়োজনে আমরা আরো কঠোর ব্যবস্থা নেব।’

একই প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম থেকে জানতে পারছি যে বিশ্বব্যাপী খাদ্যের দারুণ অভাব দেখা দেবে; এ জন্য আমরা শুরু থেকেই সবাইকে আহ্বান করছি এক ইঞ্চি অনাবাদি জমি যেন না থাকে। ফসল, ফলমূল তরিতরকারি, শাক-সবজি যে যা পারুক উৎপাদন করেন। গরু, ছাগল, ভেড়া, হাঁস, মুরগি, কবুতর, কোয়েল—যে যা পারেন লালন-পালন করেন। আমাদের খাদ্যের চাহিদা যেন আমরা নিজেরা নিজেদের আওতায় রাখতে পারি, সে ব্যবস্থাটা নিয়েছি।’ তিনি আরো বলেন, ‘এই আহ্বান করার পরে কিন্তু এখন আসলে সমগ্র দেশেই একটা উৎসব দেখা দিচ্ছে। আমাদের প্রতিটি প্রতিষ্ঠান এবং দেশের সব মানুষই কিন্তু কিছু কিছু উৎপাদন করেছে।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘এটা খুব দুর্ভাগ্যের বিষয় যে রমজান মাসে কিংবা বিভিন্ন চাহিদার মাসে যেকোনোভাবেই হোক জিনিসের দাম বাড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। পৃথিবীর অন্য দেশে উৎসব পার্বণে সব সময় তারা দাম কমায়। আর আমাদের দেশে দেখি উল্টো। শুধু তা-ই নয়, অনেক সময় তারা পণ্য আমদানি করতে একটু ঢিলেমি করে, জিনিসের দাম বাড়িয়ে চাহিদা বাড়িয়ে তারপর তারা ব্যবসা করতে চায়। এটা আসলে অমানবিক।’

ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে জাতীয় পার্টির সদস্য শামীম হায়দার পাটোয়ারীর সম্পূরক প্রশ্নের উত্তরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘স্বাভাবিকভাবে মানুষ যখন চাষ করে তখন অর্থকরী ফসলের দিকে দৃষ্টি দেয়। এ কথা ঠিক যে আমাদের অনেক জমি অনাবাদি পড়ে আছে। যেটা চাষ হচ্ছে, সেটা বন্ধ করার থেকে যেটা অনাবাদি পড়ে আছে সেটা আবাদের চেষ্টা করতে হবে।’

আওয়ামী লীগের আহসানুল ইসলাম টিটোর প্রশ্নের লিখিত উত্তরে প্রধানমন্ত্রী জানান, সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগে মূল্যস্ফীতির প্রভাব হ্রাস পাওয়ায় জনমনে স্বস্তি ফিরে এসেছে। বর্তমানে ডিজেল বিক্রিতে বিপিসির দৈনিক প্রায় তিন কোটি টাকা লোকসান হচ্ছে, যা সরকারকে ভর্তুকি দিতে হচ্ছে। আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের মূল্য হ্রাস পেলে তার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে লোকসান পূরণ করে জ্বালানি তেলের মূল্য সমন্বয়ের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

সূত্র: কালের কণ্ঠ