গৌরবময় রাজশাহী কলেজের ১৪৯ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আজ

নিজস্ব প্রতিবেদক:
রাজশাহী কলেজের ১৪৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। রাজশাহী নগরীতে অবস্থিত একটি প্রাচীনতম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। ১৮৭৩ সালে এই কলেজটি প্রতিষ্ঠিত হয়। ঢাকা কলেজ ও চট্টগ্রাম কলেজ এর পরে রাজশাহী কলেজ বাংলাদেশের ৩য় প্রাচীনতম কলেজ। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত স্নাতক ও স্নাতকোত্তর স্তরের ৬৮৫টি কলেজের তথ্যের ভিত্তিতে রাজশাহী কলেজ বাংলাদেশের সেরা কলেজ নির্বাচিত হয়েছে চার বার। বাংলাদেশে এই কলেজ হতেই সর্বপ্রথম মাস্টার্স ডিগ্রি প্রদান করা শুরু হয়। এই প্রাচীন কলেজের পাশে অবস্থিত হবার কারণে স্কুলটির নাম কলেজিয়েট রাখা হয়েছিলো । এটি বাংলাদেশ জাতীয় বিশ্ববিদ‍্যালয়ের অধীনে মাস্টার্স ও সম্মান ডিগ্রি প্রদান করে থাকে। ১৯৯৬ সাল থেকে এই কলেজে উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে ছাত্র নথিভুক্ত করা বন্ধ করা হলেও বর্তমানে ২০১০-১১ শিক্ষাবর্ষ থেকে পুনরায় ভর্তি করা হচ্ছে।

শিক্ষানগরী হিসেবে রাজশাহী মহানগরীর গোড়াপত্তন হয় ১৮২৮ সালে বাউলিয়া ইংলিশ স্কুল প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে। প্রতিষ্ঠানটি তদানীন্তন পূর্ব বাংলায় আধুনিক শিক্ষার ইতিহাসে পথপ্রদর্শক হয়ে উঠেছিল। মূলত ইংরেজি শিক্ষার প্রতিস্থাপনা ও প্রসারকল্পে সে সময় রাজশাহীতে কর্মরত ইংরেজ কর্মকর্তা ও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের প্রচেষ্টায় প্রতিষ্ঠিত হয় বাউলিয়া ইংলিশ স্কুল। সেদিনের সে ক্ষুদ্র ‘বাউলিয়া ইংলিশ স্কুল’ ১৮৩৬ সালে প্রাদেশিক সরকার জাতীয়করণ করলে এ স্কুলটি রাজশাহী জিলা (বা জেলা) স্কুল নামে পরিচিত (এই বিদ্যালয় রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুল হিসাবে এখন পরিচিত)। সে স্কুলের ছাত্রদের উচ্চতর শিক্ষার জন্য একটি কলেজ প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়ায় রাজশাহী অঞ্চলের অধিকাংশ বিশিষ্ট নাগরিকদের সমন্বিত প্রচেষ্টা ও আবেদনের প্রেক্ষিতে ১৮৭৩ সালে জেলা স্কুলকে উচ্চ মাধ্যমিক কলেজের মর্যাদা দেয়া হয় এবং একই বছর ৫ জন হিন্দু ও ১ জন মুসলমান ছাত্রসহ মাত্র ছয় জন ছাত্র নিয়ে কলেজিয়েট স্কুলের সঙ্গে চালু হয় উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণীর সমমানের এফ. এ (ফার্স্ট আর্টস) কোর্স।১৮৭৮ সালে এই কলেজকে প্রথম গ্রেড মর্যাদা দেয়া এবং “রাজশাহী কলেজ” নামে নামকরণ করার সাথে সাথে একে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়-এর অধিভুক্ত করে এখানে বি.এ. কোর্স চালু করা হলে উত্তরবঙ্গের সর্বপ্রথম এবং সর্বশ্রেষ্ঠ কলেজ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয় রাজশাহী কলেজ। ১৮৮১ সালে এই কলেজে স্নাতকোত্তর শ্রেণীর উদ্বোধন করা হয় এবং ১৮৮৩ সালে যোগ হয় বি.এল কোর্স। ১৯০৯ সালে কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন আইনে কলেজ তার চাহিদা মেটাতে না পারলে মাস্টার্স কোর্স ও বি.এল. কোর্সের অধিভুক্তি বাতিল করা হয়।

রাজশাহী শহরে পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারে ভূস্বামী রাজা, জমিদার এবং বিত্তশালীদের ভূমিকা ছিল উল্লেখযোগ্য। এদের মধ্যে দুবলাহাটির জমিদার হরনাথ রায় চৌধুরী, দীঘাপতিয়ার রাজা প্রমথনাথ রায়, রাজা প্রমোদ রায় ও বসন্ত রায়; পুঠিয়ার রাণী শরৎসুন্দরী দেবী ও হেমন্ত কুমারী দেবী; বলিহারীর কুমার শরবিন্দু রায়; খান বাহাদুর এমাদ উদ্দীন আহমেদ, কিমিয়া-ই-সাদাত এর অনুবাদক মীর্জা মোঃ ইউসুফ আলী, হাজী লাল মোহাম্মদ, নাটোরের জমিদার পরিবারের খান বাহাদুর রশীদ খান চৌধুরী, খান বাহাদুর এরশাদ আল খান চৌধুরী ও বঙ্গীয় আইন পরিষদের ডেপুটি স্পিকার ব্যারিস্টার আশরাফ আলী খান চৌধুরী ছিলেন অগ্রগণ্য। এছাড়া নাটোরের খান চৌধুরী জমিদার পরিবার রাজশাহী শহরের হেতেম খাঁ এলাকার তাঁদের পারিবারিক বাসস্থান চৌধুরী লজ রাজশাহী কলেজে অধ্যয়নরত প্রায় বিশ জন গরিব মুসলমান ছাত্রের জন্য বিনা ভাড়ায় থাকা ও খাওয়ার ব্যবস্থা করেন। তদানীন্তন পশ্চাৎপদ মুসলমান সমাজের শিক্ষার উন্নয়নে তাদের এই ভূমিকা ছিলো তাৎপর্যপূর্ণ।

 

কলেজের প্রথম অধ্যক্ষ ছিলেন হরগোবিন্দ সেন, যিনি রাজশাহী জিলা স্কুলের প্রধান শিক্ষক ছিলেন। তিনি পাঁচ বছর (১৮৭৩-১৮৭৮) এই কলেজের অধ্যক্ষ্যের দায়িত্বে ছিলেন। ১৮৭৫ সালে প্রথম ব্যাচের এফ.এ পরীক্ষায় উপস্থিত ছাত্রদের মধ্যে মাত্র দুইজন পাশ করে। সরকার কলেজটি উঠিয়ে দিতে চেয়েছিল কিন্তু রাজশাহী এসোসিয়েশন এর শক্ত প্রচেষ্টায় এই কলেজকে আপগ্রেড করে বি.এ. কোর্স প্রবর্তনের কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়। রাজশাহী এসোসিয়েশন প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি দিঘাপতিয়ার রাজা প্রমথনাথ রায় বাহাদুর রাজশাহী কলেজে ডিগ্রি কোর্স প্রবর্তনের জন্য রাজশাহী এসোসিয়েশন এর মাধ্যমে সরকারকে ১৫০,০০০ টাকা দেন। কলেজ অক্টোবর ১৮৭৭ সালে ডিগ্রী প্রোগ্রামের অনুমোদন পায় এবং ১৮৭৮ সালে বি.এ. কোর্স চালু হয়। এফ. টি. ডাওডিং ১৮৭৯ সালে অধ্যক্ষ হিসেবে যোগ দেন।

 

১৯০৪ সালে ফী ছাড়া সংস্কৃত বিষয়ে শিক্ষাদানের জন্য রাজশাহী কলেজ প্রশাসনের অধীনে মহারাণী হেমন্তকুমারী সংস্কৃত কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়। বলিহারের কুমার শরদিন্দ্বু রায় এর আর্থিক সহায়তায় ১৯১০ সালে রাজা কৃষ্ণেন্দু হল নির্মিত হয়। ১৯১৫ সালে কলেজ কর্তৃপক্ষ ৫৭,১৪৫ টাকা ব্যয়ে পদার্থবিজ্ঞান ভবন নির্মাণ করে। রাজশাহী এসোসিয়েশনের উদ্যোগ এবং অধ্যক্ষ কুমুদিনীকান্ত ব্যানার্জির প্রচেষ্টায় মোট ৬টি হোস্টেল নির্মিত হয়ঃ ১৯২২ সালে ৩,৫৩,৮৬৩ টাকা ব্যয়ে ৫টি এবং ১৯২৩ সালে ৭৮,০০০ টাকা ব্যয়ে ১টি দ্বিতল ছাত্রাবাস ভবন নির্মিত হয়। ১৯২৫-২৬ সেশনে ৮৬,৮০৯ টাকা খরচে আর্টস বিল্ডিং এবং ১৯২৭ সালে কলেজের দক্ষিণ পার্শ্বে পদ্মা নদীর ধারে অধ্যক্ষের জন্য বাসভবন নির্মাণ করা হয়। এভাবে ধীরে ধীরে প্রায় ৩৫ একর জায়গার উপর অন্যান্য ভবন নির্মিত হয়।

১৮৮৪ সালে রাজশাহী কলেজ চত্বরে মাদ্রাসা ভবন নির্মিত হয়। ১৯৩০ সালে মাদ্রাসা অন্যত্র স্থানান্তরিত হলে ঐ বছরই ১৯০৯ সালে নির্মিত ফুলার ছাত্রাবাসটি কলেজকে হস্তান্তর করা হয়। দিঘাপতিয়ার রাজা বসন্তকুমার রায়ের আর্থিক সহায়তায় রাজশাহী কলেজ প্রশাসনের অধীনে ১৯৩৬ সালে এগ্রিকালচারাল ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৫২ সালে প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ হয়ে যায় এবং ভবনটি কলেজের একটি ছাত্রাবাসে পরিণত হয়।

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে অধিভুক্ত হয়ে কলেজে ১৮৮১ সালে এমএ কোর্স এবং ১৮৮৩ সালে থেকে স্নাতক ল কোর্স চালু হয়। কয়েক বছরের মধ্যেই রাজশাহী কলেজ থেকে আটজন ছাত্র এম.এ. এবং ষাটজন ছাত্র বি.এল. ডিগ্রী অর্জন করে। কিন্তু কলেজ এম.এ. এবং বি.এল. কোর্সর জন্য প্রয়োজনীয় চাহিদা পূরণে ব্যর্থ হলে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় ১৯০৯ সাল থেকে এম.এ. ও বি.এল. কোর্স স্থগিত রাখে। পূর্ব পাকিস্তানে রাজশাহী কলেজ প্রথমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়-এ অধিভুক্ত হয় এবং পরে ১৯৫৩ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হলে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে অধিভুক্ত হয়। এই কলেজে আই.কম., বি.কম. (পাস) এবং বি.কম. (সম্মান) কোর্স যথাক্রমে ১৯৫২, ১৯৫৪ এবং ১৯৬১ সালে চালু হয়। ১৯৯২ সালে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় গঠিত হলে এর অধীনে এই কলেজে ১৯৯৪ সালে মাস্টার স্তরের কোর্স পুনরায় চালু হয়। ১৯৯৬ সাল থেকে উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের কোর্স বন্ধ থাকলেও এই অঞ্চলের উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের মেধাবী শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনা করে ২০০৯-১০ শিক্ষাবর্ষ থেকে পুনরায় চালু করা হয়। বর্তমানে রাজশাহী কলেজে ২২টি বিষয়ে সম্মান কোর্স এবং ২১টি বিষয়ে মাস্টার কোর্স চালু রয়েছে। কলেজের ২৪৯ শিক্ষকের মধ্যে ৫৬ নারী শিক্ষক রয়েছেন।

জাতির সামাজিক ও রাজনৈতিক সকল সংকটে রাজশাহী কলেজের শিক্ষক এবং ছাত্র ব্যাপক অবদান রেখে চলেছে। তারা স্বদেশী আন্দোলনে প্রত্যক্ষভাবে অংশগ্রহণ করেছেন। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ভাষা আন্দোলন কালে ঢাকা-য় ছাত্র হত্যাকাণ্ডের পরপরই রাজশাহী কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা ভাষা আন্দোলন-এ যুক্ত হয় এবং ভাষা আন্দোলনকে উৎসর্গ করে শহীদদের স্মরণে একটি শহীদ মিনার নির্মাণ করেন যাকে সম্ভবত দেশের প্রথম শহীদ মিনার মনে করা হয় । ১৯৬৯ সালে নির্মিত স্মৃতিস্তম্ভটি ১৯৭১ সালে পাক হানাদার বাহিনী ধ্বংস করে ফেলে। এটি পুনঃস্থাপন করতে বর্তমান স্মৃতিস্তম্ভটি ১৯৭৩ সালে নির্মাণ করা হয়। শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীরা সক্রিয়ভাবে ১৯৬২ এবং ১৯৬৯ ছাত্র আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন। বাংলাদেশ স্বাধীনতা যুদ্ধে তাঁরা বিপুল সংখ্যায় যোগ দিয়ে মহান সাহস এবং বীরত্বের সঙ্গে যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করতে সহায়তা করেন।

প্রতিষ্ঠার শুরুতে রাজশাহী কলেজের কোন নিজস্ব ভবন ছিল না। রাজশাহী এসোসিয়েশন এর নেতৃবৃন্দ কলেজের প্রথম ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নেন। একজন দক্ষ ইংরেজ প্রকৌশলীর পরিকল্পনায় ১৮৮৪ সালে ৬১,৭০০ টাকা ব্যয়ে বর্তমান প্রশাসন ভবনটি নির্মিত হয়। গাঢ় লাল বর্ণের দোতলা ভবনটি কালের গ্রাস জয় করে নগরীর প্রধান ও প্রাচীনতম সড়কের পাশে আজও মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। ভবনটি একটি ব্রিটিশ ভারতীয় ঔপনিবেশিক স্থাপত্যের ভাল উদাহরণ। রাজশাহী অ্যাসোসিয়েশন কর্তৃক ১৮৯৪ সালে পি.এন. ছাত্রাবাস (কলেজের প্রথম ছাত্রাবাস) নির্মিত হয়। রায় বাহাদুর কুমুদিনীকান্ত বন্দ্যোপাধ্যায় অধ্যক্ষ (১৮৯৭-১৯১৯, ১৯২০-১৯২৪) হিসেবে দায়িত্ব পালন কালে কলেজের উন্নয়নে ব্যাপক ভুমিকা রাখেন। পুঁঠিয়ার রাণী হেমন্তকুমারীর অর্থায়নে ১৯০২ সালে হেমন্তকুমারী হোস্টেল নির্মিত হয়।

অধ্যক্ষ (১৮৯৭-১৯১৯, ১৯২০-১৯২৪) রায় বাহাদুর কুমুদিনীকান্ত বন্দোপাধ্যায় এর স্মৃতির উদ্দেশ্যে রাজশাহী কলেজ প্রশাসনিক ভবনের দ্বিতীয় তলায় স্মৃতি স্মারক

ঔপনিবেশিক আমলের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পুরোনো বাড়ীগুলো হলো ফুলার ছাত্রাবাস, জীববিজ্ঞান জীববিজ্ঞান ভবন, রসায়ন ভবন, পদার্থবিজ্ঞান ভবন, প্রাক্তন মুসলিম ছাত্রাবাস ইত্যাদি। নবীনতর অর্থাৎ ১৯৫০ সালের পর যে সকল ভবন নির্মিত হয়েছে সেগুলোর মধ্যে লাইব্রেরী ভবন, কলা ভবন এবং অডিটোরিয়াম অন্তর্ভুক্ত। তাছাড়া ১৯৯০ সালে একটি নতুন বিজ্ঞান ভবন নির্মিত হয়েছে।

সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে রাজশাহী কলেজে গড়ে উঠেছে পাঁচটি বিজ্ঞান ভবন, দুইটি কলাভবন, ইরেজি বিভাগের জন্য একটি পৃথক ভবন; পুকুরের পশ্চিম পাড়ে রয়েছে গ্যালারি ভবন। গ্যালারি ভবন ১৮৮৮ সালে নির্মিত হয়ে প্রথমে রাজশাহী মাদ্রাসা নামে এবং পরে ১৭নং গ্যালারি হিসাবে পরিচিতি পায়। প্রখ্যাত দানবীর হাজী মুহম্মদ মহসীন-এর আর্থিক অনুদানে নির্মিত এই ভবনটি বর্তমানে হাজী মুহম্মদ মহসীন ভবন নামে পরিচিত। ১৯০৯ সালে নির্মিত হয় কলেজেরে অন্যতম একটি সুন্দর স্থাপনা মোহামেডান ফুলার হোস্টেল। বর্তমানে ভবনটি কলেজের বাংলা, ব্যবস্থাপনা, হিসাববিজ্ঞান, উর্দু, সংস্কৃত, দর্শন, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃত বিভাগের কার্যালয় হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। পুকুর পাড়ে নতুন কামারুজ্জান ভবন নির্মান করা হয়েছে। কলেজের সম্মুখ চত্বরে আছে একটি শহীদ মিনার এবং শহীদ মিনারের পশ্চিমে অবস্থিত লাইব্রেরি ও অডিটোরিয়াম ভবন।

খরস্রোতা পদ্মা নদীর উত্তরে হযরত শাহ মখদুম এর মাজার-এর পূর্ব পাশে নির্মিত হয় অধ্যক্ষের দোতলা বাসভবন। এই ভবনটিতে উপমহাদেশের প্রখ্যাত শিক্ষাবিদগণ বসবাস করে গেছেন। কলেজের বর্তমান অধ্যক্ষ মহোদয় এর বাসভবন হিসেবে এটিকে ব্যবহার করা হয়। ব্রিটিশ স্থাপত্য শৈলীতে নির্মিত ভবনটি এখনও স্বমহিমায় অক্ষত রয়েছে। অধ্যক্ষের বাসভবনের পূর্বপ্রান্তে শিক্ষকদের জন্য রয়েছে দুটি তিন তলা আবাসিক ভবন। ছাত্রদের জন্য বিভাগপূর্ব কালে ছয়টি ব্লক নিয়ে একটি ছাত্রাবাস নির্মিত হয়। বিভাগোত্তর কালে এই ছাত্রাবাসের আরেকটি ব্লক নির্মিত হয় কলেজের উত্তর দিকে দুটি ছাত্রীনিবাস নির্মিত হয়েছে।

১৯২২ সালে সময়ের প্রয়োজনে রাজশাহী কলেজ মুসলিম ছাত্রাবাসের যাত্রা শুরু হয়। ছাত্রাবাসে মোট ০৭ টি ভবন রয়েছে, ভবনগুলো ০৭ জন বীরশ্রেষ্ঠদের নামানুসারে রাখা হয়েছে। এই ছাত্রাবাসেই ৫২ এর ভাষা আন্দোলনে শহীদদের স্মরণে বাংলাদেশের প্রথম শহীদ মিনারটি অবস্থিত। কলেজের হিন্দু ছাত্রদের আবাসিক সুব্যবস্থার জন্য একটি হিন্দু ছাত্রাবাস আছে৷ ছাত্রাবাসটির নাম “মহারাণী হেমন্ত কুমারী হিন্দু ছাত্রাবাস”৷ যেটি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৮৯৯ সালে৷ রাজশাহী কলেজ প্রতিষ্ঠায় অবদানকারী মহিয়সী নারী মহারাণী হেমন্ত কুমারী দেবী’র নামে ছাত্রাবাসটির নামকরণ করা হয়৷

ছাত্রীদের কষ্ট লাঘবের জন্য ১৯৬৬ সালে রাজশাহী কলেজের অদুরে ছাত্রীদের থাকার সুবিধার জন্য অফিস বিল্ডিং, তত্ত্বাবধায়কের বাসভবন সহ একটি দোতলা বিল্ডিং নির্মাণ করা হয় যার নাম মেইন বিল্ডিং এবং এর মাধ্যমে ছাত্রীনিবাসের যাত্রা শুরু হয়। পরবর্তীতে মেইন বিল্ডিং চারতলা করা হয়। ছাত্রী সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় পর্যায়ক্রমে তাদের আবাসন সমস্যা নিরসনের লক্ষ্যে নিউব্লক, উত্তরা বিল্ডিং, বলাকা ও রহমতুন্নেছা বিল্ডিং তৈরী করা হয়। সূত্র: উইকিপিডিয়া

স/আর