গোমস্তাপুরে বাঁধ সংস্কারে অনিয়মের অভিযোগ

 

গোমস্তাপুর প্রতিনিধি:

চাঁপাইনবাবগঞ্জে গোমস্তাপুরে বাঁধ সংস্কারে চরম অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। এছাড়া বাঁধ সংস্কারের নামে লাখ লাখ টাকা লুটপাট করা হচ্ছে। বাঁধের উপর রোপন করা বন বিভাগের গাছ কেটে সাবার করা হয়েছে বাঁধ সংস্কারের নামে। এ নিয়ে এলাকাবাসী ও বন বিভাগের মধ্যে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে।

জানা গেছে, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) এর টেকসই ক্ষ্রদ্রাকার পানি সম্পদ উন্নয়ন প্রকল্পের গত ৮ জুন, ২০২০ সালের পত্র অনুযায়ী চলতি ২০২০-২১ অর্থ বছরে গোমস্তাপুর উপজেলার আলীনগর- বাঙ্গাবাড়ী ইউনিয়নের পাবদামারী চুড়ইল বিলের প্রায় সাড়ে ৮ কিলোমিটার বাঁধ সংস্কারের জন্য ৭৯ লাখ ২৭ হাজার ৫ শত ৮৮ টাকা বাঁধ কমিটির নামে বরাদ্দ দেয়া হয়। যা ১৬ টি গ্রুপে ভাগ করে সাড়ে ৩ মাসে ৩০% জনবল ও ৭০ % মেশিন দ্বারা সংস্কার করার কথা রয়েছে।

কিন্তু কাজের শর্তানুযায়ী আড়াই মিটার দূর থেকে মাটি উত্তোলনের কথা থাকলেও তা না করে ১ মাসের মধ্যেই স্কেবেটার মেশিন দ্বারা বাঁধের পাশের জমি থেকে বৃহৎ বৃহৎ গর্ত করে মাটি উত্তোলন করে বাঁধের উপর ফেলেছে। ৩০ % জনবলকে কাজে না লাগিয়ে রাতারাতি মেশিন দ্বারা কাজ সম্পন্ন করে লক্ষ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করেছে বাঁধ সংস্কার কমিটি।


এদিকে মেশিন দ্বারা জমি থেকে মাটি উত্তোলন করে গর্ত তৈরি করায় জমিগুলো চাষাবাদের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে বলে ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকরা অভিযোগ করেন। কাজের চুক্তি অনুযায়ী প্রকল্প এলাকার দুপাশে প্রকল্প চিহ্নিতকরণ তথ্যবোর্ড দেয়ার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত কোন তথ্যবোর্ড দেয়া হয়নি। এছাড়া ২০০১ সালে বাঁধে বন বিভাগের রোপনকৃত বনজ, ফলজ ও ঔষধি গাছ এবং বাঁধের পাশের জমির মালিকদের রোপনকৃত গাছ কর্তন করে লুটপাট করে বাঁধ কমিটি। যার বাজার মূল্য কয়েক লক্ষ টাকা।

বাঁধের উপর বন বিভাগের রোপন করা গাছ পরিচর্যা করা উপকার ভোগীরা বলেন, গাছ কাটতে বাঁধা দেয়ায় তাদের হুমকি দেয়া হয়েছে।
ক্ষতিগ্রস্থ কৃষক দুরুল হোদা সেন্টু জানান, বাঁধের পাশে অবস্থিত তার আমবাগান থেকে জোরপূর্বক মাটি উত্তোলন করে বাঁধের উপর ফেলা হয়েছে। এ বিষয়ে উপজেলা প্রকৌশলী (এলজিইডি) ও বাঁধ কমিটিকে অবহিত করা হলে তারা কর্নপাত করেনি।

বাঁধের পাশের আরেক কৃষক দুরুল হক জানান, তাকে না জানিয়েই তার জমি থেকে বৃহৎ গর্ত করে মাটি উত্তোলন করে। ফলে তার জমি চাষবাদের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।

আলীনগর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ও বাঁধ সংলগ্ন জমির মালিক রুহুল আমিন সিহাব জানান, তাকেও না জানিয়ে বাঁধ কমিটি তার জমির গাছ কর্তন ও মাটি উত্তোলন করে। তাতে তিনি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন। তিনি এ ঘটনার প্রতিকার চান।


এদিকে বন বিভাগের গাছ কাটার বিষয়ে উপজেলা বন বিভাগের কর্মকর্তা সারওয়ার জাহান জানান, বাঁধের দুপাশে ২০০১ সালে বন বিভাগের রোপনকৃত ৮৯ টি গাছ বাঁধ কমিটির সদস্যরা অবৈধভাবে কেটে ফেলেছে। পরবর্তীতে এ ঘটনা জানতে পেরে গোমস্তাপুর থানা পুলিশের সহযোগীতায় বেশ কিছু গাছ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় গোমস্তাপুর থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে পাবদামারি চুড়ইল বিল বাঁধ কমিটির সভাপতি আব্দুস সাত্তার জানান, নিয়ম মেনেই বাঁধ সংস্কার করা হয়েছে। তাছাড়া বাঁধের পাশের জমির মালিকদের অবহিত করে গাছ কর্তন ও মাটি কাটা হয়েছে। জমির মালিকরা যে অভিযোগ এনেছে তা মিথ্যা ও ভিত্তিহীন বলে তিনি দাবী করেন।

এ বিষয়ে উপজেলা প্রকৌশলী (এলজিইডি) সুলতানুল ইমাম জানান, বাঁধ কমিটির সভাপতি সহ অন্যান্য সদস্যরা বাঁধের পাশের গাছগুলো জমির মালিকদের বলে জানান । সেই ধারনা থেকে বাঁধ সংস্কারের স্বার্থেই এ গাছগুলো কাটা হয়েছে।এছাড়া বাঁধ সংস্কারে যদি কোন প্রকার অনিয়ম হয়ে থাকে তাহলে তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।