গোদাগাড়ীর লাল মাটিতে হলুদ তরমুজের সমাহার

‘নতুন কিছু করার আগ্রহটা ছোটকালের। বাবা কৃষক, সেই সুবাদে যখন যেখানে নতুন কোন চাষযোগ্য ফল দেখেছি সেটাকেই নতুন সম্ভাবনা মনে করে চাষ শুরু করেছি। তবে এই তরমুজ আমার ঘুরে দাঁড়ানোর জায়গা। গত দুই বছরের লাভে আমার স্বপ্নের অনেকটাই বাস্তবায়ন হয়েছে’।

রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার চৈতন্যপুর গ্রামে ৬৬ শতক জমিতে হলুদ তরমুজের চাষ করেছেন সৌখিন চাষী মনিরুজ্জামান। তার সফলাতার গল্প এভাবেই শোনাচ্ছিলেন। বরেন্দ্র অঞ্চলে থাই পেয়ারা ও স্ট্রবেরির চাষ জনপ্রিয় হয়েছিল তার হাত ধরেই। এবার রক মেলন ও হলুদ তরমুজ চাষে অভাবনীয় সাফল্য পেয়েছেন মনিরুজ্জামান। করোনা সংকটের মধ্যেও ইতিমধ্যে দুই লক্ষাধিক টাকার হলুদ তরমুজ বিক্রি করেছেন তিনি।

বরেন্দ্র অঞ্চলে এই ফল একদমই নতুন। দেখতে অনেকটা বড় সাইজের বেলের মত তবে বেশ সুস্বাদু আর ঘ্রাণটা একদমই ভিন্ন। রং আর স্বাদের ভিন্নতার জন্য এই অঞ্চলে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে এই ফল।

ভিন্নধর্মী এমন চাষে সফল হবার গল্প জানতে চাইলে তিনি জানান, আমি ঢাকায় প্রথমে এই ফল দেখে সাথে করে নিয়ে আসি। এর বীজ থেকে চারা করার চেষ্টা করলে সফল হইনি। পরে চুয়াডাঙ্গার এক চাষীর মাধ্যমে বীজের সন্ধান পাই।

গত দুই বছর থেকে নির্বিঘ্নে চাষাবাদ করছি আমি। বিঘা প্রতি ৫০ – ৬০ হাজার টাকা খরচ করে বছরে দুইবার চাষ করা যায়। আর বেশ নাজুক হাওয়ায় চাষাবাদ পদ্ধতিটাও একটু ভিন্ন। তবে একটু যত্ন করতে পারলে যে কারো ভাগ্য ফেরাতে পারে এই তরমুজ।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের রাজশাহী কার্যালয়ের উপপরিচালক শামছুল হক বলেন, এ দুই ধরনের ফলই মেলন। হলুদ রঙের ফলটাকে ইংরেজিতে শুধু ‘মেলন’ বলা হয়। আর সাদা রঙেরটাকে নেটেড মেলন বা কেন্টালোপ বলা হয়। বাংলায় এর কোনো নাম নেই। মনিরুজ্জামান সব সময় নতুন নতুন ফল চাষে আগ্রহী। তার দেখে এই অঞ্চলে অনেকেই স্ট্রবেরী ও থাই পেয়ারা চাষ শুরু করেন। এই তরমুজ রাজশাহী জেলাতে শুধু মনিরুজ্জামান চাষ করেছেন।

প্রচন্ড খরা প্রবণ বরেন্দ্র এলাকায় একসময় বৃষ্টিনির্ভর আমন ধানের চাষ হত। তবে মনিরুজ্জামানের তরমুজ চাষে সফলতা দেখে নতুন করে স্বপ্ন দেখছেন এ অঞ্চলের চাষিরা।