সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:
গুলশানে হামলায় সম্পৃক্ততার বিষয়ে মুখ খুললেন ইসলামবিষয়ক বক্তা জাকির নায়েক। নিজের ফেসবুক পেজে এক ভিডিওবার্তায় গুলশানে হামলার বিষয়ে নিন্দা জানিয়ে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের প্রকাশিত প্রতিবেদনের বিষয়ে কথা বলেন তিনি।
আজ শুক্রবার দুপুরে নিজের ফেসবুক পেজে চার মিনিট ৩৮ সেকেন্ডের একটি ভিডিওতে গুলশান হামলা এবং তাঁকে ঘিরে ভারতজুড়ে আলোচনার বিষয়ে কথা বলেন জাকির নায়েক। এতে তিনি গুলশানে হামলার নিন্দা জানান তিনি।
ভিডিওতে জাকির নায়েক কুরআনে সূরা মায়িদার একটি আয়াত উল্লেখ করে বলেন,‘ প্রাণের বিনিময়ে প্রাণ অথবা অনর্থ সৃষ্টি করা ছাড়া কোনো মুসলমান যদি কাউকে হত্যা করে, তবে সে যেন সব মানুষকেই হত্যা করল এবং যে কারো জীবন রক্ষা করে সে যেন সকল মানুষের জীবন রক্ষা করল।’
এ ছাড়া ঢাকায় গুলশানে রেস্তোরাঁয় জঙ্গি হামলায় ২০ জন নিহত হওয়ার ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানান। তিনি বলেন, ‘যদি কেউ দাবি করে যে সে মানুষ হত্যা করে ইসলামের পথে রয়েছে, সেটা একদমই কোরআনের পরিপন্থী কথা বলল।’
এদিকে টাইমস অব ইন্ডিয়া জানিয়েছে, গুলশানে রেস্তোঁরা হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলার জেরে তোপের মুখে পড়েছেন ভারতের ইসলাম ধর্ম বিষয়ক বক্তা জাকির নায়েক। তাঁকে নিষিদ্ধ করতে সোচ্চার হয়ে উঠেছে দেশটির কট্টরপন্থী হিন্দু সংগঠন শিবসেনাসহ বিভিন্ন সংগঠন ও ব্যক্তিত্ব। আর এরই জেরে জাকির নায়েকের মুম্বাইয়ের অফিস এবং বাসভবনে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
ঢাকার গুলশানে হামলাকারীদের মধ্যে অন্তত দুজন জাকির নায়েকের দ্বারা অনুপ্রাণিত ছিল বাংলাদেশের গণমাধ্যমে এমন খবর প্রচারিত হওয়ার পর তাঁর বক্তব্য ও কার্যকলাপ খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারত সরকার।
মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়নবিশ বৃহস্পতিবার জাকির নায়েকের বক্তব্য তদন্ত করার নির্দেশ দেন বলে টাইমস অব ইন্ডিয়ার খবরে জানানো হয়েছে।
এ ছাড়া ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারও জাকির নায়েকের বক্তব্যকে ‘আপত্তিকর’ আখ্যা দিয়ে তাঁর বিরুদ্ধে ‘যথাযথ পদক্ষেপ’ নেওয়ার ইঙ্গিত দেয়।
ভারতের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কিরেন রিজুজু গত বুধবার জানান,বাংলাদেশের অনুরোধ পেলে জাকির নায়েকের প্রতিষ্ঠান এমনকি তাকেও নিষিদ্ধ করার কথা ভবতে পারে ভারত।
এর আগে গত ১ জুলাই ঢাকার গুলশানের রেস্তোরাঁয় হামলাকারী পাঁচ সন্ত্রাসীর মধ্যে অন্যতম রোহান ইমতিয়াজ এবং নিব্রাস ইসলাম গত বছর নায়েকের কথা উদ্ধৃত করে ফেসবুকে একটি পোস্ট করে। এর পরই জাকির নায়েকের বিরুদ্ধে জঙ্গি তৎপরতায় ইন্ধন দেওয়ার অভিযোগ ওঠে।
গতকাল বৃহস্পতিবার টাইমস অব ইন্ডিয়া জানিয়েছিল,বিভিন্ন মহলে অসন্তোষের পরিপ্রেক্ষিতে ড. জাকির নায়েকের মুম্বাইয়ের দংগিরি এলাকার অফিস ও বাসভবনে পুলিশ পাহারা বসানো হয়েছে। ড. নায়েকের বক্তৃতা ঢাকার গুলশানে হামলাকারী পাঁচ জঙ্গিকে উৎসাহিত করেছে এমন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তাঁর অফিস ও বাসভবনের নিরাপত্তা জোরদার করা হয় বলে পত্রিকাটি জানায়।
মুম্বাই পুলিশের একজন কর্মকর্তার বরাতে টাইমস অব ইন্ডিয়া জানায়, জাকির নায়েকের দক্ষিণ মুম্বাইয়ের অফিসে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে পুলিশ নজরদারি করছে। এ ছাড়া জাকির নায়েকের ইসলামিক রিসার্চ ফাউন্ডেশনের কর্মীদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। যদিও এ ব্যাপারে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছ থেকে কোনো নির্দেশনা আসেনি বলেও জানিয়েছেন ওই পুলিশ কর্মকর্তা।
এর আগে গতকাল বুধবার ভারতের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কিরেন রিজুজু বলেছিলেন, বাংলাদেশের গুলশানে হামলাকারীদের মধ্যে দুজন তরুণ আলোচিত বক্তা জাকির নায়েকের ভক্ত হওয়ায় তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে ভারত। কিরেন রিজুজু বলেন, জাকিরের বক্তৃতায় উদ্বুদ্ধ হয়ে তরুণরা জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়ায় তাঁকে নিষিদ্ধ করা হতে পারে। তবে জাকিরের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে তা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীই ঠিক করবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
এদিকে বিতর্কের মুখে সৌদি আরবের মক্কা সফররত জাকির নায়েক জানিয়েছেন, আগামী ১১ জুলাই দেশে ফিরে পরের দিন নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করে সংবাদ সম্মেলন করবেন তিনি।
গত শুক্রবার রাতে রাজধানীর গুলশান ২ নম্বরের হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলা চালায় একদল অস্ত্রধারী দুর্বত্ত। দেশি-বিদেশিসহ অন্তত ৩৩ জন সেখানে জিম্মি হন। ওই হামলাকারীদের ঠেকাতে গিয়ে বোমায় নিহত হন দুই পুলিশ কর্মকর্তা।
প্রায় ১২ ঘণ্টা পর কমান্ডো অভিযান চালিয়ে পরের দিন শনিবার ওই রেস্তোরাঁর নিয়ন্ত্রণ নেয় সশস্ত্রবাহিনী। ১৩ জন জিম্মিকে জীবিত উদ্ধার করা হলেও ২০ জনের লাশ পাওয়া যায় জবাই করা অবস্থায়।
নিহতদের মধ্যে নয়জন ইটালির, সাতজন জাপানি এবং একজন ভারতের নাগরিক। বাকি তিনজন বাংলাদেশি, যাদের মধ্যে একজনের যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব ছিল।
অবশ্য এর আগে গতকাল বুধবার গুলশান হামলায় দুজন তাঁর ভক্ত ছিলেন এমন খবরের বিষয়ে জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট (আইএস) সম্পর্কে কথা বলেন জাকির নায়েক।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জাকির নায়েক বলেন, ‘ইসলামিক স্টেট অব ইরাক অ্যান্ড সিরিয়া (আইএস) নামটিই অনৈসলামিক। ইসলামিক স্টেট (আইএস) নামটি ব্যবহার করে আমরা আসলে ইসলামের নিন্দা করছি।’
আইএসকে ‘এন্টি ইসলামিক স্টেট অব ইরাক অ্যান্ড সিরিয়া’ নামে অভিহিত করে আইএস নামটি ইসলামের শত্রুদের দেয়া বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
গুলশানের হত্যাকারীরা তার অনুসারী, এমন তথ্যকে মিথ্যা দাবি করেন জাকির নায়েক বলেন, ‘আমার ফেসবুক ফলোয়ারের বড় অংশই বাংলাদেশি। এ ছাড়া বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি অঞ্চলের মানুষই বাংলায় প্রচারিত পিসটিভিতে আমাকে দেখেন। ৯০ শতাংশ বাংলাদেশি আমাকে চেনেন। প্রবীণ রাজনীতিক থেকে সাধারণ মানুষ,ছাত্র, শিক্ষকরা রয়েছেন সেই তালিকায়। আর এই বিপুল মানুষের পঞ্চাশ শতাংশ আমার গুণমুগ্ধ। এই অবস্থায় জঙ্গিরা যদি আমায় চেনে তাহলে কি আমার খুব বেশি অবাক হওয়ার কথা? না।’
গুলশান হামলাকারীদের ব্যাপারে জাকির নায়েক বলেন, ‘হত্যাকারীরা আমার বক্তব্যের সঙ্গে পরিচিত হতেই পারে। কিন্তু তার মানে এই নয় আমি তাঁদের অনুপ্রাণিত করেছি। আমি সাধারণত ধর্মীয় বই অনুসারে বক্তব্য দেই। আমার বক্তব্য শুনে তারা যদি সঠিক ইসলামকে বুঝতে না পারে সেটা তাদের দুর্ভাগ্য।’
জাকির আব্দুল করিম ইসলামিক রিসার্চ ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রেসিডেন্ট তিনি। ভারত ও দুবাইভিত্তকি পিস টিভির মালিক তিনি। এর মাধ্যমে বিভিন্ন ভাষায় বিশ্বের ২০ কোটি মানুষ টিভিতে তাঁর অনুষ্ঠান দেখে। ফেসবুকে তাঁর এক কোটি ৪০ লাখ ফলোয়ার রয়েছে।
ইসলাম প্রচারক হিসেবে খ্যাতিমান হলেও তাঁর নানা বক্তব্য নিয়ে বেশ বিতর্ক রয়েছে। এর আগে যুক্তরাজ্য ও কানাডা তাঁর প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে।
সূত্র:এনটিভি