সোমবার , ৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ২৭শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. অন্যান্য
  2. অপরাধ ও দুর্নীতি
  3. অর্থ ও বাণিজ্য
  4. আইন আদালত
  5. আন্তর্জাতিক
  6. কৃষি
  7. খেলা
  8. চাকরি
  9. ছবিঘর
  10. জাতীয়
  11. তথ্যপ্রযুক্তি
  12. দুর্ঘটনা
  13. ধর্ম
  14. নারী
  15. নির্বাচিত খবর

গণপিটুনিতে হত্যাকাণ্ড, সুযোগ নিচ্ছে প্রতিপক্ষ

Paris
সেপ্টেম্বর ৯, ২০২৪ ১০:৪২ পূর্বাহ্ণ

 

সিল্কসিটি নিউজ ডেস্ক:

মতবিরোধ, পুরনো শত্রুতাসহ নানা কারণে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়ার প্রবণতা বাড়ছে; বাড়ছে গণপিটুনিতে হতাহতের ঘটনা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিষ্ক্রিয়তা ও রাজনৈতিক দলগুলোর কঠোর পদক্ষেপের অভাবে খুন-খারাবিও করছেন একশ্রেণির স্বার্থান্বেষীরা।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাত থেকে তুলে নিয়ে গণপিটুনির নামে মারধর-নির্যাতনের মতো কাণ্ড ঘটছে। গত সাড়ে ৬ বছরে গণপিটুনিতে ২৮৬ জনকে হত্যা করা হয়েছে। এসব হত্যাকাণ্ডে মামলা হলেও শাস্তির নজির নেই বললেই চলে। দেশে গণপিটুনিতে হত্যার অর্ধেক কাণ্ডই ঘটে ঢাকা বিভাগে। নির্বাচনের আগে-পরে বেড়ে যায় এমন ঘটনা।

অপরাধ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পটপরিবর্তনের পর দীর্ঘদিনের জমে থাকা ক্ষোভ এবং রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে দমনে গণপিটুনির ঘটনা ঘটছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিষ্ক্রিয়তায় এসব ঘটনা বাড়ছে। এ ক্ষেত্রে যত দ্রুত সম্ভব রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাদের উচিত হবে, এমন অপকর্মে দলীয় কর্মীদের বিরত থাকতে কঠোর বার্তা দেওয়া। অপরাধে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থার পাশাপাশি দল থেকে বহিষ্কারসহ নির্মোহ কঠোর পদক্ষেপই গণপিটুনির মতো অমানবিক ঘটনা কমিয়ে আনতে পারে।

গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর গণপিটুনিতে হতাহতের সংখ্যা বেড়েছে। আদালত প্রাঙ্গণে মারধরের শিকার হয়েছেন সাবেক মন্ত্রী-এমপি থেকে শুরু করে বিচারপতি। হজরত মুহম্মদ (স)-কে নিয়ে কটূক্তির অভিযোগে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের দক্ষিণ বিভাগের দপ্তরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতিতেই গণপিটুনির শিকার হন উৎসব মণ্ডল নামে এক তরুণ। গতকাল রবিবার আলোচিত ইউটিউবার আশরাফুল হোসেন ওরফে হিরো আলমকে বগুড়ার আদালত প্রাঙ্গণে কিলঘুষি মারার পর কান ধরে ওঠবস করানো হয়। হিরো আলম বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে গালাগাল করার অভিযোগ তুলে বিএনপির একদল লোক তাকে মারধর করেছে।

গত শনিবার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) ছাত্রলীগের সাবেক নেতা আবদুল্লাহ আল মাসুদকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। সদ্যোজাত সন্তান ও স্ত্রীর জন্য ওষুধ আনতে গিয়ে রাবির মেডিক্যাল সেন্টারের এ স্টোর অফিসার হামলার শিকার হয়েছিলেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ড. তৌহিদুল হক বলেন, রাজনৈতিক স্বার্থে ক্ষোভ ও প্রতিহিংসা তৈরি হয়েছে। সেই ক্ষোভ থেকে গণপিটুনির মতো ঘটনা ঘটছে। তবে রাষ্ট্র সংস্কারের মাধ্যমে আমরা যে বাংলাদেশ চাই, সেটায় সব অপরাধের বিচার একটা আইনি কাঠামোর মধ্য দিয়ে যেতে হবে। প্রতিশোধের স্পৃহা থেকে বিরত হতে না পারলে আমাদের সংস্কার কার্যক্রম গতি হারাবে।

এ বিষয়ে করণীয় সম্পর্কে এই সমাজ ও অপরাধ বিশেষজ্ঞ বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো তাদের কর্মীদের সব ধরনের অপরাধ থেকে বিরত থাকার আহ্বান করছে। কিন্তু তাদের এসব আহ্বান আরও জোরালো হওয়া দরকার। ব্যক্তিগত প্রতিহিংসার জেরে আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়ার বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলো থেকে নেতাকর্মীদের উদ্দেশে কঠোর বার্তা দিতে হবে। গণপিটুনির মতো অপরাধে অংশ নিলে আইনগত ব্যবস্থার পাশাপাশি রাজনৈতিক দলগুলো তার নেতাকর্মীদের বহিষ্কারসহ দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিলেই এ ধরনের ঘটনা কমে আসবে।

মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশকেন্দ্রের পরিসংখ্যান বলছে, গত সাড়ে ৬ বছরে গণপিটুনিতে নিহত হয়েছেন ২৮৬ জন। এর মধ্যে ২০১৮ সালে গণপিটুনিতে নিহত হয়েছেন ৩৯ জন, ঢাকায় নিহত হন ২১ জন। ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর ২০১৯ সালে সর্বোচ্চ ৬৫ জনকে গণপিটুনিতে হত্যা করা হয়, ঢাকায় নিহত হন ২২ জন। তবে ২০২০ সালে নিহতের সংখ্যা কমে ৩৫ জন হয়েছিল, ২০২১ সালে এই সংখ্যা ছিল ২৮ জন, ২০২২ সালে ৩৬ জন নিহত হন। দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের আগের বছর ২০২৩ সালে নিহতের সংখ্যা বেড়ে হয় ৫১ জন। এর মধ্যে ঢাকাতেই ২৫ জন। ২০২৪ সালে নির্বাচনের পর গত ৭ মাসে (জানুয়ারি-জুলাই) গণপিটুনিতে নিহত হন ৩২ জন। ঢাকাতেই নিহত হন ১৬ জন।

মানবাধিকারকর্মী এবং আইন ও সালিশকেন্দ্রের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নূর খান বলেন, সমাজে এক ধরনের অস্থির অবস্থা বিরাজ করছে কিংবা অস্থিরতা তৈরির চেষ্টা করা হচ্ছে। এটি হচ্ছে বাংলাদেশে যেহেতু সবেমাত্র একটি স্বৈরাচারী শাসনের পতন ঘটেছে, এখনো রাষ্ট্রব্যবস্থা পুরোপুরি পুনর্গঠন করা সম্ভব হয়নি। সুতরাং এ রকম একটা সময়ে দুষ্কৃতকারীরা সুযোগ নিচ্ছে। তবে সরকারের উচিত শক্ত হাতে এসব বিষয় দমন করা এবং কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া।

অপরাধ বিশেজ্ঞরা বলছেন, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর আমরা সবাই নিজেদের এমনভাবে স্বাধীন ভাবছি যে, এখানে কোনও নিয়মনীতি আইন কোনও ভাবেই মানার চেষ্টা করা হচ্ছে না। অতীতের বিচারহীনতার কারণে অনেকেই পুলিশ প্রশাসনের ওপর আস্থা রাখতে পারছেন না। ফেসবুককেন্দ্রিক অপপ্রচারের মাধ্যমেও গণপিটুনির পরিস্থিতি তৈরি করা হচ্ছে। তারা মনে করছেন, তারা নিজেরাই বিচার করবেন। এটা অশনি সংকেত। রাষ্ট্রের কঠোর ব্যবস্থার পাশাপাশি রাজনৈতিক দলগুলোকেও গণপিটুনির মতো বর্বর অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে দলীয় কর্মীদের কঠোর বার্তা দিতে হবে।

ভুক্তভোগীরা বলছেন, গণপিটুনির ঘটনায় মামলা হলেও বিচার হওয়ার নজির কম। বিচার যদি বিচারের মতো হয়, তখন ওই বিচারের মধ্যে বার্তা থাকে। ২০১১ সালের ১৭ জুলাই শবেবরাতের রাতে ঢাকার পাশেই আমিনবাজারের বড়দেশি গ্রামে ছয় ছাত্রকে গণপিটুনিতে হত্যা করা হয়। সেই হত্যাকা-ের ১০ বছর পর আদালত ১৩ জনকে মৃত্যুদ- এবং ১৯ জনকে কারাদ-ের আদেশ দেন। কিন্তু এখনও মামলাটি আপিল আদালতে ঝুলে আছে। বিচার না হওয়ায় এ ধরনের অপরাধের ক্ষেত্রে মানুষ অভ্যস্ত হয়ে যাচ্ছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গণপিটুনির বড় অংশের পেছনে মতলববাজ বা সুযোগসন্ধানীরা থাকেন। দুই-চারজন মিলে কাউকে পিটিয়ে হত্যা করলে নির্ণয় করা সম্ভব কার পিটুনিতে মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু শত শত লোক যখন গণপিটুনিতে অংশ নেয়, তখন তা নির্ণয় করা কঠিন। ফলে যে কোনও নির্বাচনের আগে বা কোনও বিশেষ সময়ে গুজব রটিয়ে বা অন্য কোনও কারণে গণপিটুনি বেড়ে যায়। ২০১৮ ও ২০২৪ সালের নির্বাচনের আগে ও পরেও গণপিটুনিতে হতাহতের সংখ্যা বেড়েছে। একইভাবে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর গণপিটুনিতে হতাহতের সংখ্যা বাড়ছে।

 

 

সর্বশেষ - জাতীয়