গণতন্ত্র সম্মেলনে তাইওয়ানকে যুক্তরাষ্ট্রের দাওয়াত, খেপেছে চীন

আগামী মাসে যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠিতব্য ‘গণতন্ত্রের জন্য সম্মেলনে’ তাইওয়ানকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে বাইডেন প্রশাসন। মঙ্গলবার অংশগ্রহণকারীদের একটি তালিকা প্রকাশ করা হয়। তবে ‘গণতান্ত্রিকভাবে শাসিত দ্বীপটিকে তার অঞ্চল হিসাবে দেখা’ চীন এমন একটি পদক্ষেপে ক্ষুব্ধ হয়েছে।

সমাবেশটি রাষ্ট্রপতি জো বাইডেনের জন্য একটি পরীক্ষা। গত ফেব্রুয়ারিতে তাঁর দপ্তরে প্রথম পররাষ্ট্রনীতির ভাষণে ঘোষণা করেছিলেন, তিনি চীন ও রাশিয়ার নেতৃত্বে কর্তৃত্ববাদী শক্তির মুখোমুখি হওয়ার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে বিশ্ব নেতৃত্বে ফিরিয়ে দেবেন।

৯ এবং ১০ ডিসেম্বর ভার্চুয়াল ইভেন্টটির জন্য স্টেট ডিপার্টমেন্টের আমন্ত্রণ তালিকায় ১১০ অংশগ্রহণকারী রয়েছে। এটির লক্ষ্য বিশ্বব্যাপী গণতান্ত্রিকভাবে পিছিয়ে পড়াদের সহায়তা এবং অধিকার ও স্বাধীনতার অবক্ষয় বন্ধ করা। আমন্ত্রিতদের তালিকায় চীন বা রাশিয়ার নাম নেই।

তাইওয়ানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সম্মেলনে সরকারের প্রতিনিধিত্ব করবেন প্রযুক্তিমন্ত্রী অড্রে ট্যাং এবং ওয়াশিংটনে তাইওয়ানের রাষ্ট্রদূত সিয়াও বি-খিম। মন্ত্রণালয় জানায়, ‘গণতন্ত্রের জন্য সম্মেলনে’ অংশগ্রহণের জন্য তাইওয়ানকে আমন্ত্রণ বছরের পর বছর ধরে গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের মূল্যবোধকে উন্নীত করার জন্য এ দেশের প্রচেষ্টারই একটি অনুমোদন।

এদিকে, চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে যে তারা এই আমন্ত্রণের ‘দৃঢ় বিরোধিতা’ করছে। মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ঝাও লিজিয়ান বেইজিংয়ে সাংবাদিকদের বলেছেন, এটি শুধুই গণতন্ত্রকে তার ভূ-রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে এগিয়ে নেওয়া, অন্যান্য দেশকে নিপীড়ন করা, বিশ্বকে বিভক্ত করা এবং নিজের স্বার্থ পূরণ করার জন্য গণতন্ত্রকে একটি আবরণ বা হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহারের একটি পদক্ষেপ।

চীন যখন দ্বীপটির সঙ্গে সম্পর্ক কমাতে বা ছিন্ন করাতে জন্য দেশগুলোর ওপর চাপ বাড়িয়েছে, তখনই যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে তাইওয়ানের জন্য আমন্ত্রণটি আসে। এটিকে বেইজিং ‘একটি রাষ্ট্রের ফাঁদে ফেলার অধিকার নেই’ বলে মনে করে। ওদিকে স্বশাসিত তাইওয়ান বলেছে, বেইজিংয়ের এ বিষয়ে কথা বলার অধিকার নেই।

এ মাসের শুরুতে জো বাইডেন ও শি চিনপিংয়ের মধ্যে একটি ভার্চুয়াল বৈঠকে তাইওয়ান নিয়ে চীনের স্পষ্ট বক্তব্য জনসমক্ষে আসে। যদিও বাইডেন ‘এক চীন’ নীতির জন্য দীর্ঘস্থায়ী মার্কিন সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছেন; যার অধীনে এটি তাইপেইয়ের পরিবর্তে বেইজিংকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেয়। তিনি স্থিতাবস্থা পরিবর্তন বা তাইওয়ান প্রণালীজুড়ে শান্তি ও স্থিতিশীলতা নষ্ট করার একতরফা প্রচেষ্টার তীব্র বিরোধিতা করেন।

স্বাধীনতাকামী তাইওয়ান ও তার সমর্থকদের প্রতি কড়া হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে সে সময় শি বলেছিলেন, আগুন নিয়ে খেলবেন না।

‘সামিট ফর ডেমোক্রেসি’তে সেই সমস্ত বিশ্বনেতাদের আমন্ত্রণ জানাতে পারে যারা ‘স্বৈরাচারী প্রবণতা’র দোষে দোষী। বাইডেন প্রশাসন এ বিষয়ে অর্থপূর্ণ পদক্ষেপ নিতে পারে- আশা করছে মানবাধিকার সংগঠনগুলো। স্টেট ডিপার্টমেন্টের তালিকায় যেমন পরিণত গণতন্ত্রের দেশ ফ্রান্স ও সুইডেন আছে, তেমনি মানবাধিকারকর্মীদের দাবি করা ‘গণতন্ত্র হুমকির মুখে’ দেশ ফিলিপাইন, ভারত এবং পোল্যান্ডও আছে।

এশিয়ায় কিছু মার্কিন মিত্র যেমন জাপান বা দক্ষিণ কোরিয়াকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। অন্যরা যেমন থাইল্যান্ড বা ভিয়েতনামকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। আরো ‘উল্লেখযোগ্য অনুপস্থিত’ মার্কিন মিত্র মিসর এবং ন্যাটো সদস্য তুরস্ক। মধ্যপ্রাচ্য থেকে প্রতিনিধিত্ব হবে অনেকটা কম। মাত্র দুটি দেশ ইসরায়েল এবং ইরাককে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

 

সুত্রঃ কালের কণ্ঠ