সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:
ট্রাকের সামনে লাগানো বাম্পার এবং দুপাশে থাকা অ্যাংগেল ও হুক আগামী ৩০ নভেম্বরের মধ্যে খুলে ফেলতে নির্দেশ দিয়েছে সরকার।
বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে এক সভা শেষে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের সরকারের এই সিদ্ধান্তের কথা জানান।
সড়ক-মহাসড়কে অতিরিক্ত ওজন বহনকারী পরিবহণে এক্সেল লোড নীতিমালা অনুযায়ী পরিবহণ বিষয়ে এই আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা হয়।
সভা শেষে কন্টেইনার বহনকারী যান বা প্রাইম মুভারে একটি অতিরিক্ত এক্সেল স্থাপনে ছয় মাস সময় বেঁধে দিয়ে এসব ট্রেইলারে ৪২ টন পর্যন্ত পণ্য পরিবহনের অনুমতি দেওয়ার কথাও জানান সড়কমন্ত্রী।
ওবায়দুল কাদের বলেন, চার এক্সেলের প্রাইম মুভারে একটি অতিরিক্ত এক্সেল স্থাপন করে পাঁচ এক্সেলে রূপান্তর করে সর্বোচ্চ ৪২ টন পর্যন্ত ওজন পরিবহণ করা যাবে।
“এক্ষেত্রে অতিরিক্ত একটি এক্সেল বা চারটি চাকা সংযোজনে প্রাইম মুভার মালিকদের ছয় মাস সময় দেওয়া হল।”
চার এক্সেল বা চৌদ্দ চাকা বিশিষ্ট কন্টেইনার বহনকারী দীর্ঘযান বা প্রাইম মুভারগুলোর সর্বোচ্চ ৩২ টন পর্যন্ত ওজন পরিবহণে আইনগত কোনো বাধা নেই বলেও জানান কাদের।
দুই এক্সেল বা ছয় চাকার পরিবহণের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ওজনসীমা নির্ধারণে এলজিআরডি প্রতিমন্ত্রী মশিউর রহমান রাঙ্গার নেতৃত্বে একটি কমিটি কাজ করছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, শিগগিরই কমিটি প্রতিবেদন জমা দেবে। পরের সভায় এটা নিয়ে সিদ্ধান্ত হবে।
ওবায়দুল কাদের জানান, খাদ্য ও সার পরিবহনের ক্ষেত্রে বিদ্যমান ওজনসীমা এক্সেললোড নীতিমালার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করে পুনঃনির্ধারণ করে কয়েক দিনের মধ্যেই আদেশ জারি করা হবে।
মহাসড়কে পণ্যবাহী গাড়ির অতিরিক্ত চাপ কমাতে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ গত ১৬ অগাস্ট গাড়িভেদে পণ্য পরিবহনের ওজন নির্ধারণ করে আদেশ জারি করে। তাতে ১৪ চাকার প্রাইম মুভারকে সর্বোচ্চ ৩৩ টন পর্যন্ত মালামাল বহনের সীমা বেঁধে দেওয়া হয়।
প্রাইম মুভার-ট্রেইলার মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদের অভিযোগ, আকস্মিক এই সিদ্ধান্তের কারণে দাউদকান্দি মেঘনা-গোমতী সেতুতে তাদের যান আটকে জরিমানা করা হচ্ছিল। সেখানে তাদের মারধরও করা হয়।
তারা বলছেন, কন্টেইনারের ওজনের বিষয়ে তাদের কিছু করার না থাকলেও প্রাইম মুভারে ৩৩ টনের পর প্রতি টনের জন্য তাদের দুই হাজার টাকা করে জরিমানা গুণতে হচ্ছে।
নির্ধারিত পরিমাণের অতিরিক্ত ওজন বহনে জরিমানার নিয়ম বাতিলসহ সাত দফা দাবিতে গত ২৬ সেপ্টেম্বর প্রাইম মুভার-ট্রেইলার মালিক-শ্রমিকরা ধর্মঘটে যায়।
তাদের দাবির প্রতি সমর্থন জানিয়ে চট্টগ্রাম জেলা সড়ক পরিবহন মালিক গ্রুপ এবং বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন সব ধরনের যান চলাচল বন্ধের ঘোষণা দেয়।
চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ কমিশনারের সঙ্গে বৈঠকে দাবি পূরণের আশ্বাস পেয়ে গত ৩০ সেপ্টেম্বর ধর্মঘট স্থগিত করে প্রাইম মুভার মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদ। বৃহস্পতিবার সরকারের সঙ্গে বৈঠকে দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস পেয়ে ধর্মঘট প্রত্যাহার করে তারা।
‘সদিচ্ছা থাকলে সব সমস্যাই অতিক্রম করা যায়’ উল্লেখ করে সড়ক পরিবহনমন্ত্রী বলেন, “যে সমস্যার জন্য ধর্মঘট হয় এ বিষয়গুলো আমরা সময়মতো আলোচনার টেবিলে সমাধান করব। আলোচনার আগে আমরা কোনো অবস্থাতেই আমাদের দেশকে, ব্যবসা-বাণিজ্য, অর্থনীতিকে জিম্মি করে কোনো প্রকার ধর্মঘটে যাব না- এটাই হোক আমাদের সিদ্ধান্ত।”
কাদের বলেন, “দেশের ক্ষতি যেন আর না করি। এই ক্ষতিটা হলে আমাদানি-রপ্তানির ওপর ভীষণ বাধা হবে, প্রতিক্রিয়া হবে। এই প্রতিক্রিয়ার কারণে বায়াররা ফিরে যাবেন, জাহাজ ফিরে যাবে, এটা দেশের জন্য ভালো খবর নয়।
“আমি আবারও অনুরোধ করছি, আপনাদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট দাবি সেটা নিয়ে সঙ্গে সঙ্গে মুভ করবেন কিন্তু ব্যবসা-বাণিজ্য, অর্থনীতি … জিম্মি করা যাবে না।”
নৌমন্ত্রী শাজাহান খান, রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক, খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র আ জ ম নাসির উদ্দিন ও সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এম এ এন ছিদ্দিক সভায় উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়া বিজিএমইএ’র সভাপতি, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান, চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি, চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার, এফবিসিসিআই, সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি, সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন, বাংলাদেশ ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান মালিক সমিতি, বাস-ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন, প্রাইম মুভার্স ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন, প্রাইম মুভার মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের নেতরা ছাড়াও বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সংস্থার প্রতিনিধিও এই সভায় অংশ নেন।
সূত্র: বিডিনিউজ