খালেদার জন্মদিনের যাবতীয় নথি দাখিলে সরকারকে হাইকোর্টের নির্দেশ

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

সাবেক প্রধানমন্ত্রী বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার জন্মদিন সম্পর্কে সরকারের কাছে কি তথ্য আছে তা ৬০দিনের মধ্যে দাখিল করতে সরকারকে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে খালেদা জিয়ার জন্মদিন সংক্রান্ত সকল নথিপত্র এ সময়ের মধ্যে দাখিল করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পররাষ্ট্র সচিব, নির্বাচন কমিশনের সচিব, স্বাস্থ্য অদিদপ্তরের মহাপরিচালক, পাসপোর্ট অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এবং সকল মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের প্রতি এ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ রবিবার এ আদেশ দেন। আদালত অন্তবর্তীকালীন নির্দেশনার পাশাপাশি রুল জারি করেন। রুলে জাতীয় শোক দিবসকে অবমূল্যায়ন ও ক্ষুন্ন করতে ১৫ আগস্টসহ বিভিন্ন দিনে জন্মদিন পালন করায় খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ নিতে বিবাদীদের নিষ্ক্রিয়তা কেন অবৈধ ও আইনগত কর্তৃত্ব বহির্ভূত ঘোষনা করা হবে না তা জানতে চাওয়া হয়েছে। স্বরাষ্ট্র ও স্বাস্থ্য সচিব, পুলিশের আইজি, ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার ও গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

এদিকে আদালত বলেছেন, খালেদা জিয়া একাধিক দিনে জন্মদিন পালন করছেন। মন্ত্রণালয় বা সংশ্লিষ্টরা কি এ ব্যাপারে উদাসীন, নিষ্ক্রিয়?

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. মামুন-অর-রশিদের করা এক রিট আবেদনের ওপর প্রাথমিক শুনানি শেষে এ আদেশ দেন হাইকোর্ট। গত ৩১ মে তিনি হাইকোর্টের সংশ্লিস্ট শাখায় এ রিট আবেদন দাখিল করেন। রিট আবেদনকারী পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট নাহিদ সুলতানা যুথী। এই রিট আবেদন সমর্থন করে আদালতের আদেশ প্রার্থনা করে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিপুল বাগমার ও অরবিন্দু কুমার রায়। রিট আবেদনের বিরোধিতা করেন ব্যারিস্টার এএম মাহবুব উদ্দিন খোকন।

শুনানিতে নাহিদ সুলতানা যুথী বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী। ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসে জন্মদিন পালন করছেন বেশকিছুদিন ধরেই। অথচ আমরা নথিপত্র থেকে দেখতে পাচ্ছি, তার একাধিক জন্ম তারিখ। তার এসএসসির নম্বরপত্রে জন্মতারিখ ৫ সেপ্টেম্বর, ১৯৪৬। কাবিননামায় জন্মতারিখ লেখা রয়েছে ৯ আগস্ট, ১৯৪৪। ২০০১ সালে নেওয়া পাসপোর্টে জন্মতারিখ ৫ আগস্ট, ১৯৪৬। চলতি বছরের মে মাসে তার করোনা পরীক্ষার প্রতিবেদনে জন্মতারিখ লেখা আছে ৮ মে, ১৯৪৬। এছাড়া বঙ্গবন্ধুর শাহাদাতের দিন জাতীয় শোক দিবসেও জন্মদিন পালন করা হচ্ছে। এটা করা হচ্ছে জাতীয় শোক দিবসকে অবমূল্যায়ন করতে। তিনি বলেন, একজন মানুষের কয়টি জন্মদিন থাকতে পারে? তিনি(খালেদা জিয়া) একজন গুরুত্বপূর্ন ব্যক্তি। তারতো এভাবে একাধিক জন্মদিন পালন করার কথা নয়।

এসময় আদালত বলেন, আমার যতটুকু মনে পড়ে, এই ঘটনায় একটি সিভিল মামলা হয়েছিল। বিচারপতি মোমতাজউদ্দিন হয়তো কোনো আদেশ দিয়েছিলেন। হয়তো সেই সিভিল মামলাটি বিচারাধীন। তাই একই ঘটনায় রিট আবেদন করার সুযোগ আছে কীনা? জবাবে নাহিদ সুলতানা যুথী বলেন, অবশ্যই সুযোগ আছে। কারণ এরসঙ্গে জনস্বার্থ জড়িত। সাবেক একজন প্রধানমন্ত্রী একাধিক জন্মদিন পালন করে জাতিকে বিভ্রান্ত করছেন। বহির্বিশ্বের কাছে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করছেন।

এসময় রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অরবিন্দু কুমার রায় বলেন, সিভিল মামলায় রুল বিচারাধীন থাকলেও আদালত একটি রুল দিয়ে বিস্তারিত শুনতে পারেন।

এসময় আদালত বলেন, এটা নিয়ে মন্ত্রণালয় বা সংশ্লিস্টরা কি উদাসীন? তার কেন নিষ্ক্রিয়? সরকার যদি কোনো ব্যবস্থা না নেয় তবে আদালতের করার কি আছে?

এসময় আরেক ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিপুল বাগমার বলেন, প্রকৃত জন্ম তারিখে তা পালন করুক। কিন্তু তারতো জন্ম তারিখ একাধিক। এসএসসি, বিবাহ নিবন্ধন, পাসপোর্টে একাধিক জন্ম তারিখ উল্লেখ আছে। সর্বশেষ করোনা সনদে আরেকটি তারিখ উল্লেখ করা হয়েছে। তিনি বলেন, একেক দিন জন্মদিন পালন করায় বিশাল জনগোষ্ঠী সংক্ষুব্ধ।

এসময় নাহিদ সুলতানা যুথী বলেন, একারণে তার (খালেদা জিয়া) বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা করার নির্দেশনা চাচ্ছি। এসময় আদালত বলেন, আপনি নিজেইতো মামলা করতে পারেন। আপনাকে তো কেউ বাঁধা দিচ্ছে না।

নাহিদ সুলতানা যুথী বলেন, তাই বলে কি একজন মানুষের ৫টি জন্মতারিখ থাকবে? এটা থাকতে পারে না। তার কাবিননামায় আছে ৯ আগস্ট, ১৯৪৪। এসএসসির কাগজে জন্মতারিখ ৫ সেপ্টেম্বর, ১৯৪৬। কাবিননামায় জন্মতারিখ লেখা রয়েছে ৯ আগস্ট, ১৯৪৪। ২০০১ সালে নেওয়া পাসপোর্টে জন্মতারিখ ৫ আগস্ট, ১৯৪৬। চলতি বছরের মে মাসে তার করোনা পরীক্ষার প্রতিবেদনে জন্মতারিখ লেখা আছে ৮ মে, ১৯৪৬। আর ১৯৯২ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকে ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসে জন্মদিন পালন করা হচ্ছে। তাই আদালতের কাছে আমাদের আবেদন জনস্বার্থে তাকে জন্মদিন পালনের জন্য একটি তারিখ নির্ধারণ করে দেওয়ার আবেতন জানাচ্ছি।

এসময় আদালত বলেন, আদালত বা সরকার একজন মানুষকে জন্মদিন পালনের তারিখ নির্ধারণ করে দিতে পারে কীনা? এসময় ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অরবিন্দু কুমার রায় বলেন, আদালত সরকারের কাছে প্রতিবেদন চাইতে পারেন।

এসময় সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সম্পাদক ও বিএনপির কেন্দ্রীয় যুগ্মমহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুবউদ্দিন খোকন বলেন, এটা ব্যক্তিগত বিষয়। হাইকোর্টের হস্তক্ষেপ করার কোনো সুযোগ নেই।

প্রতিবাদ জানিয়ে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিপুল বাগমার ৫টি জন্ম তারিখ উল্লেখ করে বলেন, এটা কি করে হয়। তাই আদালত আদেশ দিতে পারেন।

জবাবে ব্যারিস্টার খোকন বলেন, বিবাদীরা কেন পদক্ষেপ নেবে? ১৫ আগস্ট হাজার হাজার ছেলে-মেয়ের জন্ম হচ্ছে। তাহলে কি ১৫ আগস্ট জন্ম নেওয়া সকলের জন্ম তারিখ পরিবর্তন হয়ে যাবে? এসময় ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিপুল বাগমার বলেন, সর্বশেষ করোনা সনদে জন্ম তারিখ কত? জবাবে ব্যারিস্টার খোকন বলেন, করোনায় আক্রান্ত হয়ে খালেদা জিয়া আইসিইউতে ভর্তি। এসময় কে কি লিখলো তা খালেদা জিয়ার জানার কথা নয়। তিনি বলেন, সরকার সুপ্রিম কোর্টকে রাজনৈতিক কাজে ব্যবহার করছে।

এসময় আদালত বলেন, একজন মানুষের জন্মদিন ১৫ আগস্ট হতেই পারে। কারো মৃত্যু দিবসও হতে পারে। যেমন জাতির জনকের শাহাদাত দিবস। তাই বলে কি একজন মানুষের একেক জায়গায় একেকটি তারিখ থাকবে? কেক কেটে জন্মদিন পালন করা হচ্ছে। হঠাৎ করে ১৫ আগস্ট বেছে নিলেন কেন? রিট আবেদনকারীর উদ্বেগের জায়গা এটাই।

এসময় ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অরবিন্দু কুমার রায় বলেন, এটা আইনের লংঘন।

ব্যারিস্টার খোকন বলেন, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে এই রিট আবেদন করা হয়েছে। আর এখানে রিট আবনেকারী আর রাষ্ট্র একাকার হয়ে গেছে। এসময় ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অরবিন্দু কুার রায় বলেন, এরসঙ্গে জনস্বার্থ জড়িত। তাই রাষ্ট্রপক্ষের দায়িত্ব আদালতকে সঠিক তথ্য দেওয়া। আদালতকে ন্যায়বিচার করতে সহযোগিতা করা। শুধুই বিরোধিতা করাই রাষ্ট্রপক্ষের কাজ না। এরপর আদালত আদেশ দেন।

আদেশের পর নাহিদ সুলতানা যুথী সাংবাদিকদের বলেন, খালেদা জিয়া যেনতেন কেউ নন। তিনি সাবেক প্রধানমন্ত্রী। বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে একেক তারিখ দেওয়া আছে। কিন্তু বড় বড় কেক কেটে জন্মদিন পালন করেন ১৫ আগস্ট। আসলে তার জন্মদিন কোনটি? এই ভিন্ন ভিন্ন জন্মদিন থাকা ফৌজদারি অপরাধ। অবৈধভাবে এতগুলো জন্মদিন ব্যবহার করা হচ্ছে। একারণেই তার(খালেদা জিয়া) বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ও সঠিক জন্মদিন খুঁজে বের করতেই আমরা রিট আবেদন করেছি। আমরা জনস্বার্থে রিট আবেদন করেছি। ব্যারিস্টার মাহবুবউদ্দিন খোকনের বক্তব্য সম্পর্কে তিনি বলেন, এই মামলায় ব্যারিস্টার মাহবুবউদ্দিন খোকন কেউ নন। তিনিই রাজনৈতিক কারণে যুক্ত হয়েছেন। রাজনৈতিক বক্তব্য দিয়েছেন।

সূত্র: কালের কন্ঠ