খাবার, ব্যায়াম ও ঘুম নিয়ে ৫ ভুল ধারণা যা জানা জরুরি

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্কঃ

ছোটবেলায় মানুষের মাঝে যেকোনো প্রচলিত ভুল তথ্য পুরোপুরি সত্য বলে মনে গেঁথে যায়। অনেকে অপরিপক্ব চিন্তার কারণে এসব ভুল তথ্য বা উপদেশ বড় হয়েও পালন করে চলেন। কিন্তু এগুলো সারা জীবন মেনে চলাটা বোকামি। অভিজ্ঞদের মতে, এসব ক্ষতিকর বিশ্বাস নিয়ে চলাটা জীবনের জন্য অস্বাস্থ্যকর।

বৈজ্ঞানিক ভিত্তি ছাড়া এসব মেনে চলাটাও বোকামি বলেই মনে হয়। এখানে খাবার, ব্যায়াম এবং ঘুম নিয়ে এমনই পাঁচটি প্রচলিত ভুল ধারণা তুলে ধরা হলো, যা আজই ত্যাগ করা সবারই জরুরি বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

ভুল ধারণা ১ : জনপ্রিয় ডায়েট চার্টগুলো খুবই কার্যকর
ওজন হ্রাস করো―এটা যেকোনো স্বাস্থ্য সচেতন মানুষের কাছে এক অবশ্যপালনীয় মন্ত্রের মতো। কিন্তু ওজন কমাতে বিভিন্ন ধরনের জনপ্রিয় ও প্রচলিত ‘ডায়েট চার্ট’ মানুষকে বিভ্রান্তিতে ফেলে দেয়। যেমন, দারুণ জনপ্রিয় কিটো ডায়েট নিয়ে অনেক সমালোচনা রয়েছে। বলা হয়, এই তালিকা থেকে পুষ্টি উপাদান গ্রহণকে সীমাবদ্ধ করা হয়েছে। ঘুরেফিরে হাতেগোনা কয়েকটি খাবারেই কিটো ডায়েট আটকে গেছে। কাজেই তা দীর্ঘ মেয়াদে ওজন হ্রাসের প্রচেষ্টাকে ব্যর্থতায় পর্যবসিত করতে পারে বলে মনে করে ইউএস সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন। ন্যাশনাল অ্যালায়েন্সের এডুকেশন ম্যানেজার নিনা টেইলর বলেন, খাবার গ্রহণে এ ধরনের বিধি-নিষেধ দীর্ঘ মেয়াদে ওজন বৃদ্ধি ঘটাতে পারে। বিভিন্ন গবেষণায় বলা হয়েছে, উদ্ভিজ্জ খাবার, গ্লুকোজ গ্রহণে সতর্কতা এবং ইচ্ছামতো কিছু খাওয়ায় লাগাম টানা জীবনে বেশ কিছু বছরের যোগ ঘটাতে পারে।

ভুল ধারণা ২ : স্মার্টফোন নিয়ে ঘুমাতে যেতে সমস্যা নেই 
শয়নকক্ষের বাতি নেভার আগে শেষবারের মতো সোশ্যাল ফিডে একপলক দেখে নিতে কে না চান! এতে দৃশ্যমান কোনো সমস্যা নেই বলেই জানেন সবাই। কিন্তু রাতে স্মার্টফোন ব্যবহার নিয়ে অনেক গবেষণা হয়েছে। এতে দেখা গেছে, স্মার্টফোনের যথেচ্ছ ব্যবহারের কারণে ঘুম আসতে সমস্যা, কম ঘুম হওয়া, দিনে ক্লান্তি এবং মেজাজ বিগড়ে যাওয়ার মতো সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। স্ক্রিনে তাকিয়ে থাকা পর্যন্ত অতিক্ষতিকর ব্লু লাইটে চোখ ভেসে যায়। এতে দেহে মেলাটনিন হরমোন ক্ষরণের মাত্রা বাধাগ্রস্ত হয়। এই হরমোন দেহঘড়ি নিয়ন্ত্রণ করে। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, ঘুমের এক ঘণ্টা আগে থেকে ব্লু লাইট থেকে দুই চোখকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে।

ভুল ধারণা ৩ : খাবার ও ব্যায়ামে উৎসাহ মিলতে পারে সোশ্যাল মিডিয়া থেকে
টেইলর জানান, গবেষণায় দেখা গেছে, তরুণ প্রজন্ম মনে করে টিকটক, ফেসবুক বা অন্যান্য সোশাল মিডিয়া থেকে স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ বা ব্যায়ামের পদ্ধতি ও উৎসাহ মেলে। নিজেকে আরো উন্নত করে তোলার উপাদানগুলো সেখানেই রয়েছে। কিন্তু সেখান থেকে যা মেলে তা হলো―নিজের দৈহিক গড়ন সম্পর্কে বাজে ধারণা তৈরি হওয়া, ওজন ও দেহ নিয়ে অপ্রয়োজনীয় নানা উদ্বেগ ও দুশ্চিন্তার সৃষ্টি, যা কিনা খাদ্যাভ্যাসে বিপর্যয় ডেকে আনা ছাড়া আর কিছুই করে না। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, করোনা মহামারির সময় মানুষ অনেক বেশি সোশ্যাল মিডিয়ায় সময় দেওয়া শুরু করে। আর তখন থেকেই নিজের সম্পর্কে হতাশাজনক ধারণা তৈরি হতে থাকে। কাজেই সোশ্যাল মিডিয়া থেকে খাবার ও ব্যায়াম সম্পর্কে শিক্ষা নেওয়াটা নেহাত বোকামি।

ভুল ধারণা ৪ : ক্রাঞ্চের মাধ্যমে পেটের চর্বি উধাও হবে 
বাস্তবে ব্যায়ামের মাধ্যমে গোটা দেহের চর্বি কমতে থাকে। দেহের বিশেষ কোনো অংশকে টার্গেট করে ব্যায়ামের মাধ্যমে চর্বি হ্রাসের বুদ্ধিটা কার্যকর না-ও হতে পারে। শরীরচর্চায় উৎসাহী প্রজন্ম মনে করে, ক্রাঞ্চের মতো ব্যায়াম দিয়ে কেবল পেটের চর্বি দূর করা সম্ভব। আমেরিকার কলেজ অব স্পোর্টস মেডিসিনের সাবেক প্রেসিডেন্ট ড. অ্যাঞ্জেলা স্মিথ বলেন, কোনো পেশির শক্তি বৃদ্ধির জন্য আপনি বিশেষ কোনো ব্যায়াম করতে পারেন। কিন্তু কেবল চর্বি কমাতে আপনি দেহের নির্দিষ্ট অংশকে টার্গেট করতে পারেন না। বিশেষজ্ঞদের মতে, চর্বি পোড়াতে কার্ডিও ব্যায়ামে মনোযোগ দিতে হবে।

ভুল ধারণা ৫ : ঘুম না এলে চোখ বন্ধ করে গা এলিয়ে থাকলেই চলবে 
বলা হয়, ঘুম না এলে চোখ বন্ধ করে চুপচাপ শুয়ে থাকলেও ঘুমের অভাব অনেকটা পূরণ হয়। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের মতে, ঘুম না এলেও এভাবে ২০ মিনিট শুয়ে থাকাটা ভুল কাজের একটি। কারণ এতে আপনার মস্তিষ্ক ঘুমবিহীন বিছানায় পড়ে থাকার প্রশিক্ষণ পায়। এতে দীর্ঘ মেয়াদে ইনসমনিয়া দেখা দিতে পারে। ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট এবং ঘুম বিশেষজ্ঞ মাইকেল গ্র্যান্ডনার জানান, এই অভ্যাস আপনাকে বিছানা থেকে সরাসরি চিকিৎসকের চেম্বারে নিতে পারে। তার পরামর্শ, এর চেয়ে বরং উঠে পড়ুন। ভালো লাগে না এমন কাজ করুন। যেমন―অগোছালো কাপড় ভাঁজ করুন, ঘরের ফেলে রাখা কাজ সেরে ফেলুন। আলো কমিয়ে দিন। একটু পর ঘুম ঘুম ভাব চলে আসবে।

 

সুত্রঃ কালের কণ্ঠ