খাদ্যশস্যের আমদানি ব্যয় বৃদ্ধি ৯২ শতাংশ

দেশে খাদ্যশস্যের উৎপাদন বৃদ্ধির পরও আমদানি বাড়ছে। তবে যে হারে পণ্যের আমদানি বাড়ছে, তার কয়েক গুণ বেশি ব্যয় বাড়ছে। অর্থবছরের জুলাই থেকে নভেম্বর—এই পাঁচ মাসের হিসাব বলছে, দেশে খাদ্যশস্যের আমদানি বেড়েছে ১২ শতাংশ। বিপরীতে এ সময় আমদানি ব্যয় বেড়েছে ৯২ শতাংশের বেশি।

এই খাদ্যশস্য আমদানির ক্ষেত্রে এককভাবে চালের আমদানি ব্যয় বেড়েছে প্রায় চার হাজার শতাংশ। আর গমে বেড়েছে ৩৯ শতাংশ। গত অর্থবছর শেষে খাদ্যশস্য আমদানি বেড়েছিল ৩.৫ শতাংশ, বিপরীতে ব্যয় বেড়েছিল ৬০ শতাংশ।

তবে শুধু খাদ্যশস্য নয়, মসলাপণ্য ছাড়া গত চার মাসে রেকর্ড আমদানি ব্যয় বেড়েছে ভোজ্য তেল, দুধ ও ক্রিম, ডাল, চিনিসহ সব ধরনের ভোগ্য পণ্যে। এ সময় সবচেয়ে বেশি বেড়েছে ভোজ্য তেল আমদানিতে, ৯২ শতাংশ।

আমদানিকারকরা বলছেন, মূলত তিন কারণে দেশে আমদানি খরচ বেড়েছে। এগুলো হলো—ডলার, জাহাজভাড়া ও পণ্যের দাম বৃদ্ধি। এ ছাড়া গত বছর করোনা থাকায় অনেক পণ্যের চাহিদা কম ছিল। চলতি বছর সব কিছু খুলে দেওয়ায় পণ্যের আমদানিও অনেকটা বেড়েছে। এটি আমদানি ব্যয় বৃদ্ধির অন্যতম কারণ বলে মনে করছেন তাঁরা।

খাদ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যে দেখা যায়, চলতি বছরের নভেম্বর পর্যন্ত দেশে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে মোট খাদ্যশস্য আমদানি হয়েছে ২৪ লাখ ৩১ হাজার ৭৬০ মেট্রিক টন, যা গত বছর (২০২০-২১) একই সময়ের তুলনায় ১২.৪৫ শতাংশ বেশি। আমদানি করা এসব খাদ্যশস্যের মধ্যে চালের পরিমাণ আট লাখ ২১ হাজার ৭৬০ মেট্রিক টন। বাকি ১৬ লাখ ১০ হাজার টন গম।

গত অর্থবছর একই সময়ে মোট খাদ্যশস্য আমদানি হয়েছিল ২১ লাখ ৬২ হাজার ৪৬০ মেট্রিক টন। গত বছর প্রথম পাঁচ মাস সরকারিভাবে কোনো চাল আমদানি হয়নি। শুধু বেসরকারিভাবে ৬০ মেট্রিক টন চাল আমদানি হয়েছিল। তবে গত বছর এই সময় গমের আমদানি ছিল চলতি বছরের চেয়ে অনেক বেশি। ওই বছর জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত পাঁচ মাসে দেশে সরকারি ও বেসরকারিভাবে গম আমদানি হয় ২১ লাখ ৬২ হাজার ৪০০ টন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, চলতি অর্থবছরের পাঁচ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) দেশে খাদ্যশস্য আমদানিতে ব্যয় হয়েছে ১৩২ কোটি ৩৫ লাখ মার্কিন ডলার। গত বছর একই সময় এ খাতে আমদানি ব্যয় ছিল ৬৮ কোটি ৮৩ লাখ ডলার। অর্থাৎ গত বছরের তুলনায় এ সময় আমদানি ব্যয় বেশি হয়েছে ৬৩ কোটি ৫২ লাখ ডলার বা ৯২.২৯ শতাংশ। গত বছর (২০২০-২১) নভেম্বর পর্যন্ত চাল আমদানিতে ব্যয় হয়েছিল ৯৩ লাখ ডলার। চলতি বছর ব্যয় বেড়ে ৩৭ কোটি ৮১ লাখ ডলারে উঠেছে। সে হিসাবে এ খাতে ব্যয় বেড়েছে ৩৯৬৫ শতাংশ। গত বছর গম আমদানিতে ব্যয় হয়েছিল ৬৭ কোটি ৯০ লাখ ডলার। চলতি বছর ৩৯ শতাংশ বেড়ে ৯৪ কোটি ৫৪ লাখ ডলারে দাঁড়িয়েছে।

গত অর্থবছর (২০২০-২১) দেশে মোট খাদ্যশস্য আমদানি হয়েছে প্রায় ৬৬ লাখ ৫৩ হাজার মেট্রিক টন, যা গত চার দশকে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। আমদানি করা খাদ্যশস্যের এক-চতুর্থাংশই ছিল চাল, বাকিটা গম। এ সময় চাল আমদানি হয় ১৩ লাখ ৫৩ হাজার টন। এই আমদানি ২০১৯-২০ অর্থবছরের তুলনায় প্রায় ৩.৫ শতাংশ বেশি। ওই অর্থবছরে মোট খাদ্যশস্য আমদানি হয়েছিল প্রায় ৬৪ লাখ ৩৪ হাজার টন।

২০২০-২১ সালে খাদ্য আমদানিতে ব্যয় হয়েছিল ২৬৮ কোটি ডলার, যা তার আগের বছরের তুলনায় ৬০ শতাংশ বেশি। ২০১৯-২০ অর্থবছরে এ খাতে ব্যয় হয়েছিল ১৬৭ কোটি ডলার।

টিকে গ্রুপের পরিচালক মো. মুস্তাফা হায়দার বলেন, ‘আমদানি খরচ বৃদ্ধির পেছনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি। এ ছাড়া এ সময় জাহাজভাড়া বেড়েছে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ। ডলারের দামও বেড়েছে অনেকটা। মোটা দাগে এই তিন কারণ ছাড়া তেমন কোনো আর কিছু দেখছি না। তবে আমদানি ব্যয় বাড়লেও ভোগ্য পণ্যের আমদানির পরিমাণ কিছুটা কমেছে। কারণ, পণ্যের আমদানি খরচ বাড়লে চাহিদা স্বাভাবিক নিয়মেই কিছুটা কমে। ’

 

সূত্রঃ কালের কণ্ঠ