কয়লার দাম বৃদ্ধি, রাজশাহীতে ইটভাটা বন্ধে বেকার শ্রমিকরা

নিজস্ব প্রতিবেদক:

দ্বিগুণ বেড়েছে কয়লার দাম। অক্টোবরে মৌসুম শুরু হলেও ইট পোড়াতে পারছেন না ভাটার মালিকরা। রাজশাহী জেলায় ১২০টি ভাটা রয়েছে। একটি ভাটায় কমপক্ষে ৮৫ থেকে ৯০ জন কাজ করে। সে হিসেবে বেকার হয়ে পড়েছেন ৫০ থেকে ৬০ হাজার শ্রমিক-কর্মচারী। অথচ এই মুহূর্তে ইট পোড়ানোর ভরা মৌসুমে বেকার তারা।

এদিকে, কয়লার দাম বাড়ায় লোকসানের শঙ্কায় আগামী ২৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত ভাটা বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ভাটা মালিকরা। কয়লার দাম কমানোর জন্য বাণিজ্যমন্ত্রীর সাথে যোগাযোগ করেছেন তারা।

অন্যদিকে ভাটা বন্ধ রাখায় ইটের দাম বেড়েছে। বিপাকে পড়েছেন নির্মাণ সংস্থাগুলো। এক হাজার ইট কিনতে বাড়তি গুনতে হচ্ছে ৮০০ থেকে ১ হাজার টাকা। যদিও কিছুদিন আগে প্রতি হাজার এক নম্বর ইট সাড়ে ৭ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে। এমন অবস্থায় থমকে গেছে বহু নির্মাণ কাজ। ইটের ভাটাগুলোতে গিয়ে দেখা গেছে, অল্প পরিসরে প্রস্তুতি চলছে। কোনো কোনোটিতে ইট সাজানোর কাজ চলছে।

ইট ভাটার ম্যানেজার মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, এখন ভরা মৌসুম ইট ভাটার। এই সময় ভাটায় প্রতিদিন ফায়ারম্যান, ইট ভর্তি, বের করা শ্রমিক, ডেলি শ্রমিকসহ কমপক্ষে ১০০ জন করে কাজ করে। কিন্তু ভাটাগুলো অনেকটাই ফাঁকা। দুই তিনজন করে আসছেন কাজে। পুরোপুরি ভাটা চললে বাড়বে কর্ম ব্যস্ততা।

ইটভাটা মালিকরা জানায়, ইন্দোনেশিয়াসহ আন্তর্জাতিক বাজারে কয়লার দাম বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। সেই সঙ্গে জাহাজ ভাড়া, ভ্যাটসহ আমদানি শুল্ক যোগ হয়েছে। সবমিলে গত বছর আমদানিকৃত কয়লার দাম ছিল নয় থেকে দশ হাজার টাকা টন। এবার সেটা ১৮ থেকে ২০ হাজার টাকায় দাঁড়িয়েছে। এ অবস্থায় ভাটার মালিকরা সরকারের কাছে কয়লার আমদানি শুল্ক কমানোসহ বিভিন্ন দাবি জানিয়েছেন।

ট্রলিতে ইট বহনকারী আব্দুস সালাম জানান,‘কিছু দিন আগেও ইটের দাম কম ছিল। এক নম্বর ইট প্রতি হাজারের দাম সাড়ে সাত হাজার টাকা ছিল। এখন সেই ইটের দাম বেড়ে সাড়ে ৮ থেকে সাড়ে ৯ হাজার টাকা হয়েছে।’

ভাটা মালিক আক্তার হাসান রুনু জানান, কয়লার দাম বাড়ার কারণে ভাটায় ইট পড়ানো বন্ধ রয়েছে। ফলে অনেক শ্রমিক হয়ে পড়েছেন। সিদ্ধান্ত এসেছে; অল্প কিছুদিনের মধ্যে ইট পুড়ানো শুরু করবো।

বাংলাদেশ ইট প্রস্তুতকারক মালিক সমিতির সিনিয়র সহসভাপতি সাদরুল ইসলাম বলেন, আমদানিকৃত কয়লার দাম বেড়েছে দ্বিগুণের বেশি। গত বছর ইন্দোনেশিয়া থেকে আমদানিকৃত প্রতি টন কয়লার দাম ছিল ৯ থেকে ১০ হাজার টাকা। অন্যদিকে দক্ষিণ আফ্রিকার কয়লা প্রতিটনের দাম ছিল ৭ থেকে ৯ হাজার টাকার মধ্যে। এবার মৌসুমের শুরুতেই ইন্দোনেশিয়ার কয়লার টনপ্রতি দাম উঠেছে ২০ থেকে ২১ হাজার টাকা। একইভাবে দক্ষিণ আফ্রিকার কয়লা টনপ্রতি দাম উঠেছে ১৮ থেকে ২০ হাজার টাকা।

সাদরুল আরও বলেন, দ্বিগুণ দামে কয়লা কিনে ইট বিক্রি করে খরচের টাকা তোলা যাবে না। বাণিজ্যমন্ত্রীকে ইতোমধ্যে স্মারকলিপি দিয়ে সমস্যার কথা জানানো হয়েছে। ইট ভাটা বন্ধ থাকায় বর্তমানে ৫০ থেকে ৬০ হাজার মানুষ বেকার হয়ে পড়েছেন।

কয়লা বিক্রেতা যশোরের অভয়নগরের মেসার্স বিশ্বাস ট্রেড ইন্টারন্যাশলালের প্রোপাইটর জিয়া বিশ্বাস জানান, ‘কলার দাম বেড়েছে। বর্তমানে ভাটা পোড়ানো কয়লা ১৭ থেকে ১৯ হাজার টাকা টন দরে বিক্রি হচ্ছে।’ দাম বাড়ার কারণ হিসেবে তিনি বলেন,‘বিদেশেই কয়লার দাম বেড়েছে। তার সঙ্গে বেড়েছে যাহাজ ভাড়াও।’

বাংলাদেশ ইট প্রস্তুতকারক মালিক সমিতির কেন্দ্রীয় মহাসচিব আসাদুর রহমান রাকিব জানান, একটি ভাটায় ইট তৈরিতে ন্যূনতম ১৫০ থেকে ১৮০ জন শ্রমিক লাগে। প্রতিটি ভাটাকে বাধ্যতামূলকভাবে প্রতি মৌসুমে সাড়ে ৪ লাখ টাকা করে ভ্যাট দিতে হয়। এর বাইরেও অনেক খরচ আছে।

রাজশাহী রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড ডেভেলপারস অ্যাসোসিয়েশনের (রেডা) সভাপতি তৌফিকুর রহমান লাবলু বলেন, ইট প্রস্তুত বন্ধ থাকায় বাণিজ্যিক আবাসন প্রতিষ্ঠানগুলোসহ রাজশাহীর চলমান সব উন্নয়ন কাজে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। ইট প্রস্তুত শুরু না হলে তাদের সব কাজই বন্ধ হয়ে যাবে।

স/আ