রবিবার , ২৮ জুলাই ২০২৪ | ১৫ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. অন্যান্য
  2. অপরাধ ও দুর্নীতি
  3. অর্থ ও বাণিজ্য
  4. আইন আদালত
  5. আন্তর্জাতিক
  6. কৃষি
  7. খেলা
  8. চাকরি
  9. ছবিঘর
  10. জাতীয়
  11. তথ্যপ্রযুক্তি
  12. দুর্ঘটনা
  13. ধর্ম
  14. নারী
  15. নির্বাচিত খবর

ক্লাসে ফিরতে চায় শিক্ষার্থীরা

Paris
জুলাই ২৮, ২০২৪ ১১:১৯ পূর্বাহ্ণ

 

সিল্কসিটি নিউজ ডেস্ক:

আযমিল ওমর আরিদ জুনিয়র ওয়ানে ভর্তি হয়েছে এ বছর। নতুন স্কুলজীবন আনন্দময় হয়ে ওঠে তার। নতুন নতুন বন্ধু, তাদের সঙ্গে খেলাধুলা, গল্প, ছুটির পর হইহুল্লোড় করে সময় কাটে। শহরে চার দেয়াল বন্দি শিশুদের কাছে স্কুল সময়টা বেশ আনন্দের। সেই আনন্দে ভাটা পড়ে যখন স্কুল ছুটি থাকে। প্রতি মুহূর্তে সে অনুভব করে ক্লাস, সহপাঠী আর স্কুলের হইহুল্লোড়ে কেটে যাওয়া সময়টা। গত ঈদুল আজহা আর গ্রীষ্মকালের ছুটি কাটিয়ে এক মাস না যেতেই ফের লম্বা ছুটিতে হাঁপিয়ে উঠছে দেয়ালবন্দি শিশু আরিদ। তার মতো প্রাক-প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক পর্যন্ত প্রায় পৌনে চার কোটি শিক্ষার্থী এখন মুখিয়ে আছে ক্লাসে ফিরতে।

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের আন্দোলন ঘিরে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে গত ১৬ জুলাই শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শ্রেণি কার্যক্রম পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বন্ধের ঘোষণা দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। একই ভাবে বন্ধ আছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন সারাদেশের সব প্রাথমিক বিদ্যালয়।

এ অবস্থায় প্রাথমিক বিদ্যালয় খুলে দেওয়ার প্রসঙ্গে  প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব ফরিদ আহাম্মদ বলেন, ‘চলতি সপ্তাহের মধ্যে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় খুলে দেওয়ার চেষ্টা চলছে। বিদ্যালয় কবে খোলা হবে, সে বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য  রবিবার মিটিং হবে। মিটিংয়ে এ নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হলে খোলার দিনক্ষণ জানিয়ে দেব।’

দীর্ঘদিন ছুটির কারণে শিক্ষার্থীরা তাদের প্রতিদিনের শ্রেণিপাঠ এবং বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটানোর আনন্দ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে— সেটি বেশ অনুভব করেন বলে জানালেন রাজধানীর মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) মো. মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, ‘শিশুদের কাছে স্কুলজীবন অন্যরকম একটা আনন্দের ব্যাপার। তারা সাধারণত সাপ্তাহিক দুদিন ছুটির সময়ও মা-বাবার কাছে আর্জি করে স্কুল যেতে। এটি ছোটদের ক্ষেত্রে ঘটে। আবার একটু বড়, যারা মাধ্যমিকে পড়ে এদের কাছে স্কুলিংটা হচ্ছে একটা পড়ালেখার চাপ। তবে সবার ক্ষেত্রে সেটা এক রকম হয় না।’

মিজানুর রহমান বলেন, এখন যে ছুটি যাচ্ছে, শিক্ষাবর্ষের এই সময়টা লেখাপড়ার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ সময়। এখনো অর্ধবার্ষিক পরীক্ষা শেষ করা যায়নি। বিভিন্ন শ্রেণির পরীক্ষা স্কুলগুলো নিচ্ছে। এই বন্ধের জন্য বিলম্বিত হচ্ছে। যত বেশি ছুটি থাকবে, পরীক্ষা সম্পন্ন করে আবার ক্লাস নিতে হবে। নতুন কারিকুলাম, ক্লাসগুলোয় শেষ করতে হবে। সামনে ডিসেম্বরে আবার বার্ষিক পরীক্ষা। এখন ক্লাসগুলো বন্ধ। এগুলো পুষিয়ে নিতে একটা কৌশল তো সরকারকে নিতে হবে। সে জন্য বাড়তি ক্লাস নিতে হবে।

সরকার সিদ্ধান্ত নিলে ক্লাসের জন্য প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ কেকা রায় চৌধুরী। তিনি বলেন, সরকার হয়তো শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দিচ্ছে না। যখনই ঘোষণা দেবে, আমরা নতুন করে ক্লাসরুটিন করে বাচ্চাদের বন্ধের ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করব।

ভিকারুননিসা নূন স্কুলের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী সাবিহা তাবাসসুম বলে, দ্রুত স্কুল খুলে দেওয়া দরকার। ক্লাসের বাইরে আর ভালো লাগছে না। অর্ধবার্ষিক পরীক্ষা শুরু হয়েছিল। এর মধ্যে ফের স্কুল ছুটি হয়ে গেল। সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে ঘর থেকে বেরও হচ্ছি না।

শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি পুষিয়ে নিতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো যেন অনলাইনে ক্লাস ও পরীক্ষার আয়োজন করতে পারে, সেই সক্ষমতা সব প্রতিষ্ঠানের থাকা উচিত বলে মনে করেন শিক্ষাবিদ, বুয়েটের সাবেক ডিন ও ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির প্রফেসর ড. মোহাম্মদ কায়কোবাদ। তিনি বলেন, আমাদের শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন নষ্ট যেন না হয়, যতটা সম্ভব অনলাইনে ক্লাস শুরু করতে হবে প্রতিষ্ঠানগুলোকে। স্কুল খুলে দেওয়ার পরও তাদের বন্ধের ক্লাসের শিখন ঘাটতি পোষানোর জন্য বাড়তি ক্লাস নেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে কর্তৃপক্ষকে।

জানা গেছে, তাপপ্রবাহের কারণে গত ২১ থেকে ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত দেশের সব স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সরকার। এরপর স্কুল খুলে দেওয়ার পর ওই সময়ে শ্রেণি কার্যক্রম বন্ধ থাকার ফলে যে শিখন ঘাটতি তৈরি হয়েছে, তা পূরণ এবং নতুন কারিকুলাম অনুযায়ী শিখন ফল অর্জনের জন্য শনিবারও শ্রেণি কার্যক্রম চলে। এরপর আবার শনিবারও ছুটি ঘোষণা দেওয়া হয়। কমিয়ে দেওয়া হয় গ্রীষ্মকালীন ছুটি।

অন্যদিকে উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে ক্লাস শুরুর আগে ক্ষতিগ্রস্ত স্থাপনা মেরামত করতে চায় বিশ^বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। গত শুক্রবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষতিগ্রস্ত আবাসিক হল পরিদর্শন করেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. এএসএম মাকসুদ কামাল। পরে তিনি জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলে প্রায় ৩০০ কক্ষ ভাঙচুর করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ইতোমধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত হলগুলোর ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করেছে। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের কাছ থেকে আর্থিক বরাদ্দ পাওয়া সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়া সম্পন্নের মাধ্যমে হলগুলো সংস্কার করে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মিত শিক্ষা কার্যক্রম চালু করা হবে।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. নূরুল আলম জানান, গত কয়েক দিনের অরাজক পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এসব ক্ষতি নিরূপণ করে আবাসিক হলগুলো শিক্ষার্থীদের বসবাসের উপযুক্ত করে ক্যাম্পাস খুলে দেওয়া হবে। সরকারও চায় শিক্ষার্থীরা দ্রুত পড়ার টেবিলে ফিরে যাক। আমরা সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী দ্রুতই বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রম চালু করব।

অন্যদিকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার ব্যাপারে নিরাপত্তা বিষয়টি সরকার সবচেয়ে গুরুত্ব দিচ্ছে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী। সম্প্রতি তিনি বলেন, ‘আমরা শিক্ষার্থীদের শতভাগ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা ছাড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার কথা এ মুহূর্তে বিবেচনা করতে পারছি না।’

 

 

সর্বশেষ - শিক্ষা