‘ক্যাসিনো খালেদ’ ডিবি কার্যালয়ে

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

রাজধানীর ফকিরাপুলের ইয়াংমেনস ক্লাবের অবৈধ ক্যাসিনো মালিক যুবলীগের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া অস্ত্র ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের মামলা দুটি মহানগর গোয়েন্দা পুলিশে (ডিবি,উত্তর) স্থানান্তর করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার আদালত থেকে খালেদ মাহমুদকে ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে আসা হয়েছে। ডিবি কার্যালয়েই তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।

এ তথ্য গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন ডিবি উত্তর বিভাগের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার মশিউর রহমান।

মশিউর রহমান বলেন, খালেদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ও মাদক আইনে দায়ের করা মামলার তদন্ত করবে ডিবি উত্তর। এরই মধ্যে মামলাগুলো গুলশান থেকে ডিবিতে হস্তান্তর করা হয়েছে। খালেদকেও ডিবিতে নিয়ে আসা হয়েছে।

এর আগে অস্ত্র মামলায় চার দিন এবং মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের মামলায় ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়ার ৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মাহমুদা আক্তার ও শাহিনুর রহমান এই আদেশ দেন। আদালতে রিমান্ড বাতিল করে জামিন আবেদন করেন খালেদের আইনজীবীরা। বিচারক শুনানি নিয়ে অস্ত্র আইনের মামলায় চার দিন ও মাদক আইনের মামলায় খালেদের তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

আদালত সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার রাত ৮টা ২৫ মিনিটের দিকে আসামি খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াকে আদালতে উপস্থাপন করা হয়। এ সময় হাতে হাতকড়া ও গায়ে বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট পরানো অবস্থায় তাকে এজলাসের ডকে (আসামিদের জন্য নির্ধারিত স্থান) রাখা হয়।

শুরুতেই অস্ত্র ও মাদক আইনের পৃথক দুই মামলায় আসামিকে গ্রেফতার দেখানোর আবেদনের শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। ঢাকা মহানগর হাকিম দেবদাস চন্দ্র অধিকারীর আদালতে এ শুনানি হয়।

গ্রেফতার দেখানোর শুনানিতে আদালতের সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা শেখ রাকিবুর রহমান বলেন, র‌্যাবের বিশেষ অভিযানে আসামি খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

তার কাছ থেকে অবৈধ অস্ত্র, মাদক ও প্রচুর টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। তবে উদ্ধার করা অস্ত্র, মাদক ও অর্থের উৎস সম্পর্কে জানা যায়নি। তাই আসামিকে এ দুই মামলায় গ্রেফতার দেখানো প্রয়োজন। শুনানি শেষে আদালত ওই দুই মামলায় আসামিকে গ্রেফতার দেখানোর আবেদন মঞ্জুর করেন।

এরপর একই এজলাসে বিচারক পরিবর্তন হয়। ঢাকা মহানগর হাকিম মাহমুদা আক্তারের আদালতে অস্ত্র আইনের মামলার রিমান্ড শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। এ মামলায় আসামির সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গুলশান থানার পরিদর্শক মো. আমিনুল ইসলাম।

অপরদিকে আসামিপক্ষে মাহমুদুল হক রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিন শুনানি করেন। শুনানিতে তিনি বলেন, আসামি পলিটিক্যালি ভিকটিমাইজ হয়ে গ্রেফতার হয়েছেন। ২০১৭ সাল পর্যন্ত তার নামে থাকা অস্ত্রের সব কাগজপত্র ঠিক ছিল। পরবর্তী সময়ে তা আর নবায়ন করা হয়নি।

ফলে এটি অবৈধ হয়েছে। তিনি (খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া) সরকারকে লাখ লাখ টাকা ট্যাক্স দিচ্ছেন। তিনি অসুস্থ। তার রিমান্ডের কোনো প্রয়োজন নেই। সবকিছু উদ্ধার হয়েছে। বড়জোর জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদ করা যেতে পারে।

তিনি কোনো খুন করেননি। আর বড় ব্যবসায়ীর কাছে লাখ লাখ টাকা থাকতেই পারে। রিমান্ডে নেয়ার কোনো যৌক্তিকতা নেই। শুনানি শেষে আদালত এ মামলায় আসামির চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

এরপর একই এজলাসে বিচারক পরিবর্তন হয়ে ঢাকা মহানগর হাকিম শাহিনুর রহমান আসেন। এ আদালতে গুলশান থানায় করা মাদক আইনের মামলার রিমান্ড শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। এ মামলায়ও আসামির সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা।

অপরদিকে রিমান্ড বাতিলপূর্বক আসামির জামিন আবেদন করা হয়। শুনানি শেষে এ মামলায় আদালত আসামির তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

রিমান্ড শুনানিতে আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে উপস্থিত ছিলেন আইনজীবী আজাদ রহমান। শুনানি শেষে তিনি বলেন, অস্ত্র মামলায় চার দিনের রিমান্ড শেষ হওয়ার পর থেকে মাদক মামলায় তিন দিনের রিমান্ড শুরু হবে।

দুই মামলার রিমান্ড আবেদনে বলা হয়, একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে র‌্যাবের বিশেষ অভিযানে আসামিকে গ্রেফতার করা হয়।

তার দখলে ও হেফাজত থেকে ইতালির তৈরি একটি কালো রঙের ১২ বোর শটগান, শটগানের ৫৭ রাউন্ড গুলি, ফ্রান্সের তৈরি ওয়ালথার ব্র্যান্ডের ৭.৬৫ পিস্তল, তিনটি খালি ম্যাগাজিন ও পিস্তলের ৫৩ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়।

উদ্ধার করা হয় আসামির নিজ নামে করা পিস্তলের লাইসেন্স দুটি যা ২০১৭ সাল পর্যন্ত নবায়ন করা। আর আসামির নামীয় শটগানের লাইসেন্স দুটি যা ২০১৭ সাল পর্যন্ত নবায়ন করা।

এ ছাড়া আসামির একই রুমের দক্ষিণ পাশের দেওয়ালের স্টিলের লকার থেকে ৩টি ছোট নীল রঙের পলিব্যাগে ৫৮৫ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট এবং মাদক বিক্রির নগদ ১০ লাখ ৩৪ হাজার ৫৫০ টাকা উদ্ধার করা হয়।

এ ছাড়াও বিভিন্ন দেশের বৈদেশিক মুদ্রা যা বাংলাদেশি টাকার মূল্যমান আনুমানিক সাত লাখ ৬৪ হাজার ৬০০ টাকা, সিঙ্গাপুরের এক হাজার কারেন্সির ১০টি নোট, ৫০ কারেন্সির একটি নোট, সংযুক্ত আরব আমিরাতের ৫০ কারেন্সির নোট দুটি, ১০ কারেন্সির নোট দুটি, সৌদি ৫০০ কারেন্সির নোট চারটি, ১০০ কারেন্সির নোট তিনটি, ৫ কারেন্সির নোট দুটি, ১০ কারেন্সির নোট একটি, ৫০ পয়সা একটি, এক কারেন্সির কয়েন একটি, ভারতীয় ৫০০ কারেন্সির নোট সাতটি, মালয়েশিয়ার ৫০ কারেন্সির নোট পাঁচটি, এক কারেন্সির নোট ছয়টি, ৫০ কারেন্সির নোট আটটি, থাইল্যান্ডের ১০০ কারেন্সির নোট চারটি, ৫০ কারেন্সির নোট একটি, ২০ কারেন্সির নোট দুটি, এক হাজার কারেন্সির নোট ১০টি উদ্ধার করা হয়।

আসামি দীর্ঘদিন নিজ হেফাজতে অবৈধ অস্ত্র রেখে মাদক (ইয়াব) ব্যবসাসহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধমূলক কাজ করে আসছিলেন বলে জানা যায়। উদ্ধারকৃত অবৈধ অস্ত্র, মাদক ও মানি লন্ডারিংয়ের বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ, অবৈধ অস্ত্র ও মাদকদ্রব্যের সঙ্গে জড়িত সহযোগী আসামিদের বিষয়ে তথ্য, নাম-ঠিকানা উদ্ধারসহ তাদের গ্রেফতার ও ব্যাপক পুলিশি অভিযান পরিচালনার জন্য আসামিকে রিমান্ডে পাওয়া একান্ত প্রয়োজন। অস্ত্র ও মাদকের এ দুটি মামলা ছাড়াও তার বিরুদ্ধে আরও দুটি মামলা করা হয়েছে।

মানি লন্ডারিংসহ বাকি দুই মামলায় আসামিকে এখনও গ্রেফতার দেখানোর আবেদন করা হয়নি।

এর আগে বুধবার রাতে অবৈধ ক্যাসিনো ব্যবসা এবং চাঁদাবাজির অভিযোগে গুলশানের বাসা থেকে খালেদ মাহমুদকে অস্ত্র ও মাদকসহ গ্রেফতার করে র‌্যাব। দুপুরের পর থেকে ইয়াংমেন্স ক্লাবের ক্যাসিনোতেও অভিযান চালায় র‌্যাব।

বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত তিনি র‌্যাব-৩-এর হেফাজতে ছিলেন। দুপুরের পর তাকে গুলশান থানায় হস্তান্তর করা হয়। বিকালে তার বিরুদ্ধে গুলশান থানায় মাদক, অস্ত্র ও মানি লন্ডারিং আইনে আলাদা তিনটি এবং মতিঝিল থানায় মাদক আইনে একটি মামলা করে র‌্যাব।

র‌্যাবের একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, জিজ্ঞাসাবাদে খালেদ জানিয়েছেন, ক্যাসিনো ব্যবসা এবং চাঁদাবাজি করে আয় করা কোটি কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছেন। আন্ডারওয়ার্ল্ডের নেটওয়ার্কের মাধ্যমে এসব টাকা পাচার করেছেন তিনি।

তবে কত টাকা তিনি পাচার করেছেন, এ বিষয়ে নিশ্চিত হতে এরই মধ্যে অনুসন্ধান শুরু করেছেন গোয়েন্দারা।

পুলিশের গুলশান বিভাগের ডিসি সুদীপ কুমার চক্রবর্তী সাংবাদিকদের বলেন, অস্ত্র, মাদক ও মানি লন্ডারিং আইনে খালেদ মাহমুদের বিরুদ্ধে তিনটি মামলা করেছে র‌্যাব।