কোয়ারেন্টাইন মানায় বাংলাদেশকে নিউজিল্যান্ডের ধন্যবাদ

করোনাভাইরাস মহামারিতেও থেমে নেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট। যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে হচ্ছে ব্যাটে-বলের লড়াই। কঠোর কোয়ারেন্টাইন মেনে খেলতে হচ্ছে ক্রিকেটারদের। তবে কোনও কোনও দল বিতর্কিত হচ্ছে তাদের খেলোয়াড়দের কোয়ারেন্টাইন ভাঙার অভিযোগে। এদিক থেকে ব্যতিক্রমই বলা চলে বাংলাদেশকে। প্রাণঘাতী ভাইরাসটি সারা বিশ্বে থাবা বসানোর পর প্রথম সফরে তারা এখন নিউ জিল্যান্ডে। সেখানে ছয় দিন হয়ে গেলো কোয়ারেন্টাইনে আছেন তামিম-মুশফিকরা। তারা যেভাবে এই কঠিন সময় মোকাবিলা করছেন, তাতে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে নিউ জিল্যান্ড সরকার।

গত বুধবার ক্রাইস্টচার্চে পা রাখার পর সরাসরি হোটেলে ওঠেন সফরকারী ক্রিকেটার ও কোচিং স্টাফরা। সেখানে একেবারে টানা দুই দিন যে যার রুমে বন্দি ছিলেন তারা। শুক্রবার সকালে দুদণ্ড বাইরে বের হয়েছিলেন মুক্ত বাতাসে শ্বাস নিতে। এর পর থেকে সীমিত আকারে চলাফেরা করতে পারছেন রাসেল ডমিঙ্গোর শিষ্যরা। সব কিছু চলছে ঠিকঠাক। তাই বাংলাদেশ ক্রিকেট দলকে ধন্যবাদ জানিয়েছে নিউ জিল্যান্ড সরকার।

সোমবার বিসিবির কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে নিজেদের সন্তুষ্টির কথা জানান নিউ জিল্যান্ড সরকারের প্রতিনিধি দলের সদস্যরা। বিসিবির পরিচালক ও টিম লিডার হিসেবে নিউ জিল্যান্ডে যাওয়া জালাল ইউনুস জানান, দেশটিতে করোনার নিয়মকানুন নিয়ে বেশ সচেতন বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটাররা। কী করতে পারবেন, কী করতে পারবেন না; তা বারবার মেসেজের মাধ্যমে প্রত্যেককে সতর্ক করছেন টিম লিডার ও দলের ম্যানেজার। তাতে ক্রিকেটার, কোচ ও সফরকারী দলের প্রত্যেকেই রয়েছেন বাড়তি মনোযোগী।

করোনা ইস্যুতে বেশ কঠোর নিউ জিল্যান্ড। মহামারির শুরু থেকেই নিয়ন্ত্রিত পদক্ষেপের সফলতাও পেয়েছে দেশটি। এই করোনাকালে নিউ জিল্যান্ডে প্রথম দল হিসেবে সফর করছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। একই সময়ে পাকিস্তান গিয়েছিল। কিন্তু কোয়ারেন্টাইন নিয়ম ভাঙায় তাদের কোয়ারেন্টাইনের সময় বৃদ্ধিসহ দেশে ফেরত পাঠানোর হুমকিও দিয়েছিল নিউ জিল্যান্ড সরকার।

বাংলাদেশের কোয়ারেন্টাইন নিয়ে জালাল রাইজিংবিডি বলেন, ‘ক্রিকেটার, কোচিং স্টাফসহ আমাদের যে পুরো গ্রুপ আছে সেখানে বারবার মেসেজ দিয়ে সবাইকে সচেতন করা হচ্ছে। প্রত্যেককেই বলা হচ্ছে মাস্ক যেন ব্যবহার করে। আমরা রুমের বাইরে থেকে যে খাবার গ্রহণ করি, তা নেওয়ার সময়ও মাস্ক ব্যবহার করছি। বাইরে দুইবেলা যখন হাঁটতে যাচ্ছি, তখন নির্দিষ্ট দূরত্ব মেনে চলছি। ছেলেরা খুবই সচেতন এবং এখন ভালো অবস্থায় আছে। প্রথম তিন দিন একটু সমস্যা হয়েছিল। এখন বাইরে হাঁটা-চলা করায় সমস্যা হচ্ছে না।’

আইসোলেশনে থাকা বাংলাদেশ জাতীয় দলের ক্রিকেটাররা মঙ্গলবার দ্বিতীয় দফা করোনা টেস্ট করাবেন। করোনা পরীক্ষায় সবার নেগেটিভ এলে বুধবার থেকে অনুশীলনে ফিরতে পারবেন। ফিটনেস ট্রেনিং দিয়ে শুরু হবে অনুশীলন। বৃহস্পতিবার থেকে হবে স্কিল ট্রেনিং।

তবে অনুশীলনেও রয়েছে সীমাবদ্ধতা। গ্রুপ করে একেক সময়ে হবে অনুশীলন। এক গ্রুপে থাকবেন সর্বোচ্চ পাঁচজন করে ক্রিকেটার। কোচিং স্টাফরাও নির্দিষ্ট জায়গার বাইরে যেতে পারবেন না। জালাল বলেন, ‘আমরা সাত দিন আইসোলেশনে থেকে অষ্টম দিন থেকে মাঠে নামতে যাচ্ছি। ৪ মার্চ থেকে অনুশীলন শুরু করতে পারবো। এরই মধ্যে গ্রুপ করা হয়েছে। সবাই রুমের ভেতরে নিজেদের ফিটনেস ট্রেনিং চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু প্রত্যেকেই বাইরে গিয়ে অনুশীলন করতে চাচ্ছে। ৪ তারিখ থেকে সেই সুযোগটি পাওয়া যাবে।’

তিনটি ওয়ানডে ও তিনটি টি-টোয়েন্টি খেলতে নিউ জিল্যান্ড সফরে তামিম, মুশফিকরা। ২০ মার্চ প্রথম ম্যাচ, তার ২৪ দিন আগেই সেখানে যেতে হয়েছে ক্রিকেট দলকে। কারণ কোয়ারেন্টাইনেই কাটাতে হবে দুই সপ্তাহ।

সোমবার পঞ্চম দিনেও ক্রিকেটাররা দুই বেলা রুম থেকে বের হন। ৩০-৪০ মিনিটের মতো মুক্ত বাতাসে হাঁটাহাঁটির পর আবার রুমে চলে যান। বাংলাদেশ- নিউ জিল্যান্ডের দিন-রাতের পার্থক্য থাকায় দুই-তিন ক্রিকেটারের ঘুমের সমস্যা হচ্ছে। সেটাও দ্রুত ঠিক হয়ে যাবে বলে মনে করছেন জালাল ইউনুস।

১১ মার্চ বাংলাদেশ দল ক্রাইস্টচার্চ থেকে যাবে কুইন্সল্যান্ডে। সেখানে হবে বাংলাদেশের পাঁচ দিনের ক্যাম্প। বাংলাদেশ দলের আসল প্রস্তুতি হবে সেখানেই।