কোরবানি চামড়া কেনায় আগ্রহ কম ব্যবসায়ীদের

নিজস্ব প্রতিবেদক

কোরবানি আসন্ন। এখনও সরকারিভাবে দাম নির্ধারণ হয়নি চামড়ার। তাই আগেভাগেই মন্তব্য করতে রাজি নন রাজশাহীর চামড়া ব্যবসায়ীরা। তবে নিজেদের পুঁজির অভাবে চামড়া কেনা নিয়ে শঙ্কার কথা জানালেন ব্যবসায়ীরা। তাদের দাবি, ট্যানারি মালিকদের কাছে কোটি টাকা বকেয়া পড়ে আছে। সেই টাকা কোরবানির আগে পেলে চামড়া ব্যবসা ভালো হতো।

চামড়া ব্যবসায়ীরা জানান, কোরবানির দিন পাড়া-মহল্লা ঘুরে নগদ টাকায় চামড়া কিনতে হয় ব্যবসায়ীদের। তার পরে আড়ৎ বা ট্যানারিতে বিক্রি। কিন্তু ট্যানারি মালিকরা চামড়া নিয়ে টাকা আটকে দেয়। এক বছরের টাকা অন্য বছরেও পরিশোধ করে না। এমন নানামুখি সমস্যায় অনেক ব্যবসায়ী মূলধন হারিয়ে ঋণে জালে পড়ে গেছেন।

ট্যানারি মালিকদের কাছে রাজশাহীর ব্যবসায়ীদের প্রায় ৩ কোটি টাকা বকেয়া পড়ে আছে। টাকা পরিশোধে ট্যানারি মালিকরা আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। দীর্ঘ সময় এভাবে চলে আসায় চামড়া ব্যবসা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন অনেকেই।

সোমবার (৪ জুলাই) দুপুরে সপুরার চামড়া আড়তপট্টিতে ছাগলের চামড়ায় লবণ দিচ্ছিলেন আজগর আলী। চামড়ার অন্য আড়ৎগুলো বন্ধ রয়েছে। আসগর বলেন, চামড়া ব্যবসা ভালো না। লবণের দাম বেশি।

কশাই আবদুল আহাদ জানায়, সপ্তায় তিন থেকে চারটি গরু জবাই করে বিক্রি করি। গরুর মাংসের দাম থাকলেও নেই চামড়ার দাম। বর্তমানে ৫০ থেকে ৬০ কেজি ওজনের গরুর চামড়া বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২৫০ টাকায়। ৮০ থেকে ১০০ কেজি ওজনের গরুর চামড়া সাড়ে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকায়। ৩ থেকে সাড়ে ৩ মণ ওজনের গরুর চামড়া সাড়ে ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা। তবে ছিদ্র বা চামড়ায় সমস্যা থাকলে তার দাম আরও কম।

তিনি বলেন, ৫ মণ ওজনের ষাড়ের চামড়া ৭০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া খাশির চামড়া ২০ থেকে ৩০ টাকা। বকরির চামড়া নিতে চায় না।

জানা গেছে- গত কোরবানির ইদে (২০২১) গরুর চামড়ায় আকার ভেদে ব্যবসায়ীরা কিনেছেন ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা দরে। খাসির চামড়া ২৫ থেকে ৩০ টাকা। আর বকরির চামড়া ১০ টাকা হলেও ভেড়ার চামড়া ২০ থেকে ২৫ টাকায় কেনা-বেচা হয়েছে।

বুধপাড়া গণির মোড় এলাকার মন্ডল হামিদুজ্জামান হেনা জানিয়েছিলেন, গতবছর তাদের সমাজে ৯টি গরু, ১৪টি খাসি ও ৫টি বকরি কোরবানি হয়েছিল। শফিকুল ইসলাম নামের এক ব্যবসায়ী কিনেছেন সবগুলো চামড়া। তিনি দাম দিয়েছেন- প্রতিটি গরুর চামড়া সাড়ে ৫০০ টাকা করে। আর খাসির চামড়া ২০ টাকা ও বকরির চামড়া ১০ টাকা দরে।

রাজশাহী জেলা চামড়া ব্যবসায়ী গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক আবদুর রউফ জানান, সরকার এখনও চামড়ার দান নির্ধারণ করেনি। দাম নির্ধারণের পরেই জানা যাবে কত দামে চামড়া কেনা-বেচা হবে। চামড়া ব্যবসায়ীরা ভালো নেই। তারা ধার-বাকি করে চামড়ার ব্যবসা করছেন। ট্যানারিতে অনেক টাকা বকেয়া পড়ে আছে ব্যবসায়ীদের।

তিনি বলেন, চামড়ার দাম না থাকাসহ বিভিন্ন কারণে অনেকেই এই পেশা পরিবর্তন করেছেন। কেউ অটোরিক্সা চালায়, কেউ বা হোটেলে কাজ করে। রাজশাহীর এই ব্যবসায়ী গ্রুপের ১৩০ জন সদস্য। এর মধ্যে ৬০ থেকে ৭০ জন এই ব্যবসার সাথে আছে।

এই ব্যবসায়ী নেতা আরো বলেন, চামড়াকে রক্ষা করা লাগবে। কারণ এটি জাতীয় সম্পদ। আমাদের প্রত্যাশা ট্যানারি মালিকরা কোরবানির আগে আমাদের বকেয়া টাকা কিছু হলেও দেবেন। তাতে করে আমরা চামড়া ব্যবসা চালিয়ে যেতে পারি।

রাজশাহী জেলা চামড়া ব্যবসায়ী গ্রুপের সভাপতি আসাদুজ্জামান মাসুদ বলেন, ‘রাজশাহীর চামড়া ব্যবসায়ীরা নাটোরের ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে কেনা-বেচা করে থাকে। রাজশাহীর ব্যবসায়ীদের ২ থেকে ৩ কোটি টাকা বকেয়া রয়েছে ট্যানারি মালিকদের কাছে।

ট্যানারি মালিকরা কোরবানির আগে বকেয়া পরিশোধ করার বিষয়ে তিনি জানান, মুঠোফোনে রিং দিলে অনেকেই রিং ধরেন না, টাকা তো দূরের কথা।’

জি/আর