কোরবানি ঈদের পর বাড়তে পারে করোনা রোগীর সংখ্যা

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সাবেক উপাচার্য এবং করোনা বিষয়ক টেকনিক্যাল কমিটির উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বলেছেন, ব্যক্তিগত সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য সবার সচেতনতা ছাড়া এ মুহূর্তে কোনো বিকল্প নেই। কোরবানি ঈদের পর দেশে আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি।

ডক্টরস ফর হেলথ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টের উদ্যোগে শুক্রবার (৩ জুলাই) ‘করোনা পরিস্থিতি, স্বাস্থ্যসেবা ও জাতীয় বাজেট : বর্তমান প্রেক্ষাপট ও করণীয়’ শীর্ষক এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে তিনি এমন মন্তব্য করেন।

সংগঠনের সভাপতি অধ্যাপক ডা. এম আবু সাঈদের সভাপতিত্বে এবং সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ডা. কাজী রকিবুল ইসলামের সঞ্চালনায় এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও সংগঠনের যুগ্ম সম্পাদক ডা. এইচ এম ফারুকী।

 

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত থেকে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বক্তব্য রাখেন অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম, অধ্যাপক ডা. রশিদ-ই-মাহবুব (সাবেক সভাপতি, বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন-বিএমএ এবং আহ্বায়ক ডক্টরস প্লাটফর্ম ফর পিপল’স হেলথ), অধ্যাপক ডা. নাজমুন নাহার (বিশিষ্ট শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ও সাবেক সভাপতি ডক্টরস ফর হেলথ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট), অধ্যাপক ডা. রওশন আরা বেগম (উপদেষ্টা, করোনা বিষয়ক টেকনিক্যাল কমিটি), অধ্যাপক ডা. চন্দন কান্তি দাস (সহ-সভাপতি, ডক্টরস ফর হেলথ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট), অধ্যাপক ডা. শাকিল আখতার, ডা. এ কে এম আরিফ উদ্দিন আহমেদ, ডা. রোকেয়া খাতুন ও ডা. আব্দুল আজিজ প্রমুখ।

অধ্যাপক ডা. রশিদ-ই-মাহবুব বলেন, স্বাস্থ্য খাতে দুর্নীতিবাজদের বিল বন্ধ করে দেয়াটাই সমাধান নয়। দুর্নীতিবাজদের বিচার করাটাই মুখ্য বিষয়। স্বাস্থ্যসরঞ্জামের সরবরাহ ঠিক রাখাটাও প্রয়োজন। তা না হলে স্বাস্থ্যব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়বে।

অধ্যাপক ডা. নাজমুন নাহার বলেন, স্বাস্থ্য খাত যতক্ষণ দুর্নীতি-মুক্ত না করা যাবে ততদিন এ খাতে বাজেট বৃদ্ধি করে কোনো সুফল পাওয়া যাবে না। প্রকৃত ঘটনা উদঘাটন করে দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত সবার বিচার করতে হবে।

অধ্যাপক ডা. রওশন আরা বেগম বলেন, সবাইকে সরকারের গাইডলাইন মেনে চলা উচিত। এতে নিজের পরিবার এবং জনগণ, সবাই এ মহামারির হাত থেকে রক্ষা পাবে। জ্বর, সর্দি-কাশি হলে আবল-তাবল ওষুধ সেবন না করে তিনি ডাক্তারের পরামর্শ মেনে চলার আহ্বান জানান।

 

সংবাদ সম্মেলন থেকে করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় কয়েকটি দাবি উপস্থাপনসহ স্বাস্থ্য খাতের বাজেট সম্পর্কে বেশকিছু প্রস্তাবনা ও সুপারিশ তুলে ধরা হয়।

প্রস্তাবনায় বলা হয়, কোভিড-১৯ কে ‘জাতীয় দুর্যোগ’ ঘোষণা, বিনামূল্যে কোভিড-১৯ এর নমুনা পরীক্ষা ও চিকিৎসার ব্যবস্থা, সকল সরকারি হাসপাতালের পাশাপাশি বেসরকারি হাসপাতালসমূহকে রিকুইজিশন করে কোভিড ও নন-কোভিড চিকিৎসার ব্যবস্থা, জরুরি ভিত্তিতে পর্যাপ্ত সংখ্যক চিকিৎসক, নার্স, টেকনোলজিস্ট ও পরিচ্ছন্নতাকর্মীসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যসেবাকর্মী নিয়োগ, অবিলম্বে মানসম্মত র‌্যাপিড টেস্ট কিট বিনামূল্যে আপামর জনগণের জন্য উন্মুক্ত, একযোগে সারা দেশব্যাপী কোভিড-১৯ অত্যাধিক আক্রান্ত এলাকাসমূহে (রেডজোন) লকডাউন দৃঢ়ভাবে চালু রেখে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর খাদ্য, চিকিৎসা ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা, ইজারাদারদের পকেট ভারি করার কোরবানির হাট বসানোর সরকারি সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার।

 

স্বাস্থ্যসেবা ও বাজেট সম্পর্কিত দাবি ও প্রস্তাবনা

স্বাস্থ্যকে জনগণের ‘মৌলিক অধিকার’ হিসাবে সাংবিধানিক আইনি সুরক্ষা, স্বাস্থ্য খাতে জাতীয় বাজেটের কমপক্ষে ১৫% এবং জিডিপির ৫% বরাদ্দ, সরকারি হাসপাতালে প্রাথমিক থেকে বিশেষায়িত পর্যন্ত সকল চিকিৎসা বিনামূল্যে প্রদান, সরকারি হাসপাতালে ইউজার ফি বাতিল এবং এখন পর্যন্ত আদায়কৃত ইউজার ফি’র স্বচ্ছ হিসাব জনগণের সামনে প্রকাশ, উপজেলাপর্যায়ে সরকারি হাসপাতালসমূহ ১০০ শয্যা এবং জেলাপর্যায়ে ২৫০ শয্যায় উন্নীত করা।

প্রতি ১০ হাজার জনগণের জন্য কমপক্ষে ২৩ জন স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগ, দেশের জন্য উপযোগী রেফারাল পদ্ধতি চালু, পর্যাপ্ত ওষুধ ও চিকিৎসাসামগ্রীর সংস্থান, দারিদ্রসীমার নিচে অবস্থানরত জনগোষ্ঠীর জন্য সুপেয় পানি, মানসম্মত পয়োনিষ্কাশনের ব্যবস্থাসহ স্বাস্থ্যকর আবাসন নিশ্চিত, স্থানীয় সরকারের ক্ষমতায়নের মাধ্যমে জনস্বাস্থ্য ও প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরিচর্যাকে প্রাধান্য দিয়ে গণমুখী স্বাস্থ্যনীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন, শিল্পায়ন, নগরায়ণ, বিদ্যুৎ উৎপাদন ও পরিবহনের নামে বন উজাড়, নদী ভরাটসহ পরিবেশ বিধ্বংসী সকল কার্যক্রম বন্ধ, মেডিকেল শিক্ষার বাণিজ্যিকরণ বন্ধ, মেডিকেল শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবার সকল ক্ষেত্রে দুর্নীতি বন্ধ করা এবং সকলকেই জবাবদিহিতার আওতায় আনা অন্যতম।