ডা. মো. আবু হাসান (পিটি):
ব্যথা ! বর্তমান সময়ের সবচেয়ে পরিচিত শব্দ ! আমরা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন কারণে শরীরে ব্যথা অনুভব করি । তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি হয় কোমর ব্যথা। দেশব্যাপি প্রায় ৭০-৮০ শতাংশ মানুষ জীবনের কোনো সময় কোমর ব্যথায় ভুগে থাকেন । যদি একজন রোগী কোমর ব্যথার সঠিক চিকিৎসা সঠিক সময়ে পেয়ে থাকেন তবে খুব দ্রুত ব্যথা থেকে মুক্তি লাভ করবেন।
কোমর ব্যথার কারণ:
কোমর ব্যথার সবচেয়ে বেশি রোগী আসেন (৯০ শতাংশ) বিভিন্ন মেকানিক্যাল সমস্যা নিয়ে। মেকানিক্যাল ব্যথার কারণ হতে পারে দীর্ঘক্ষণ কম্পিউটার বা মোবাইল ব্যবহার, দীর্ঘ সময় একই পজিশন এ বসে থাকা, সঠিক দেহাবস্থান মেনে না কাজ করা, ডিস্ক প্রলাপস, মেরুদন্ড এর মাংসপেশিতে আঘাত, মেরুদন্ড এর নির্দিষ্ট গঠন পরিবর্তন ইত্যাদি।
এছাড়াও বয়সজনিত মেরুদণ্ডের হাড় ক্ষয় বা বৃদ্ধি, অস্টিওপোরোসিস, স্পনডায়লোসিস, স্পন্ডডাইলোলিসথেসিস, মেরুদণ্ডের নার্ভজনিত সমস্যা, অতিরিক্ত ওজন , বোন টিবি, অপুষ্টিজনিত সমস্যা ইত্যাদি কারণে কোমর ব্যথা হয়ে থাকে। নগরায়ন, শরীর চর্চার অভাব, কর্পোরেট পেশা, শারীরিক দুর্ঘটনা, শ্রমিক -পেশাজীবী ,অত্যাধিক পরিশ্রম, নার্ভ কম্প্রেশন, মেরুদণ্ডের রক্তবাহী নালিকা এর সমস্যা ইত্যাদি কারণেও কোমর ব্যথা হয়ে থাকে।
কীভাবে জানবেন কোমর ব্যথার কারণ :
যেকোনো ব্যথার ক্ষেত্রে বা ব্যথার চিকিৎসা এর ক্ষেত্রে আমাদের জানা প্রয়োজন রোগীর কেনো ব্যথা হচ্ছে বা কী কারণে ব্যথা হচ্ছে । সে জন্য আমাদের প্রথমত এক্স-রে বা এমআরআই করা লাগতে পারে। বেশির ভাগ রোগীই ফিজিওথেরাপি চিকিৎসক এর কাছে আসে এক্স-রে বা এমআরআই নিয়ে। আমাদের প্রথমত প্রয়োজন রোগীর স্পেসিফিক ডায়াগনোসিস বা রোগ নির্ণয় তার জন্য প্রয়োজন ফিজিক্যাল অ্যাসেসমেন্ট করা এবং আসলে তার কোন মাংসপেশি , নার্ভ, লিগামেন্ট বা অন্য কোনো স্ট্রাকচার এ সমস্যা আছে কী না সেটা নির্ণয় করা। মাংস পেশীর সমস্যায় বেশি ব্যথা হয়। অবশ্যই দরকার হলে প্যাথলজিক্যাল টেস্ট করতে হবে। বর্তমানে মাসকুলোস্কেলেটাল আল্ট্রাসোনোগ্রাফি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে । যার মাধ্যমে মাংসপেশি এর রোগ নির্ণয় এবং এটার কোনো ক্ষতিকর প্রভাব নেই ও সল্প খরচেই তা সম্ভব।
কোমর ব্যথায় ফিজিওথেরাপি চিকিৎসার গুরুত্ব:
কোমর ব্যথা নিয়ে আর ভোগান্তি নয়। আমাদের দেশেই রয়েছে এর সর্বাধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থা। গবেষণা অনুযায়ী ৯০% রোগী শুধু সঠিক ফিজিওথেরাপি চিকিৎসার মাধ্যমেই শতভাগ সুস্থ হয়ে যায়। অপারেশন এর কোনো প্রয়োজন নেই। যদি রোগী খুব খারাপ অবস্থায় থাকে যেটাকে আমরা বলি রেড ফ্ল্যাগ থাকলে আমরা রোগীকে নিউরোসার্জন এর নিকট পাঠিয়ে দেই। তবে প্রতিটি রোগীর উচিত অপারেশন এর পূর্বে একজন ফিজিওথেরাপি চিকিৎসক ( অবশ্যই বিপিটি ) এর পরামর্শ অনুযায়ী ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা নেয়া।
ফিজিওথেরাপি শুধু গরম সেক বা হিট মেশিনে সীমাবদ্ধ নয়। ফিজিওথেরাপি চিকিৎসক ( অবশ্যই বিপিটি ডিগ্রি সম্পন্ন) এর পরামর্শ অনুযায়ী ম্যানুয়াল থেরাপি (যেমন বিভিন্ন থেরাপিউটিক এক্সারসাইজ,স্ট্রেচিং, মোবিলাইজেশন,ম্যানিপুলেশন, মায়োফেসিয়াল রিলিজ), ড্রাই নিডলিং, ইলেকট্রোথেরাপি (যেমন : লেজার থেরাপি,আল্ট্রা সাউন্ড থেরাপি, ট্রাকশান) দেয়া হয়। ফিজিওথেরাপি চিকিৎসক এর অধীনে পূর্ণ রিহ্যাবিলিটেশন সেবা নিতে হবে ও পরবর্তী নিয়ম কানুন মেনে চলতে হবে। কোমর ব্যথার রোগী শুধু ব্যথার ওষুধ খেয়ে ব্যথা থেকে কোনো দিন ই মুক্তি পাবেন না । তাই অবশ্যই একজন ফিজিওথেরাপি চিকিৎসক এর পরামর্শ মেনে চললে অবশ্যই ব্যথা থেকে পরিপূর্ণ সুস্থ বা মুক্তি লাভ করবেন।
পরিশেষ একটি কথা; ব্যথার ওষুধ খেয়ে কিডনি এর সমস্যা বা অন্য আরও কোনো সমস্যায় ভুগতে পারেন। ব্যথার জন্য ব্যথার ওষুধই মুখ্য চিকিৎসা নয় । অবশ্যই ব্যথার জন্য একজন ফিজিওথেরাপি চিকিৎসক এর নিকট ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা নিন । সুস্থ থাকুন ,ভালো থাকুন।
লেখক : ডা. মো. আবু হাসান (পিটি)
ক্লিনিক্যাল ফিজিওথেরাপিস্ট
চেম্বার : আইডিয়াল ফিজিওথেরাপি এন্ড রিহাবিলিটেশন সেন্টার
শিরোইল, রাজশাহী ।
সদস্য ,রাজশাহী ফিজিওথেরাপি পেশাজীবী পরিষদ।