কোভিড-১৯ মোকাবেলায় সরকার সর্বোতভাবে ব্যর্থ: মির্জা ফখরুল

মহামারী কোভিড-১৯ মোকাবেলায় সরকার সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। আর ব্যর্থতা ঢাকতেই তারা একেক সময়ে একেক তুঘলকি সিদ্ধান্ত নিচ্ছে বলে অভিযোগ তার।

সোমবার সকালে রাজধানীতে দুঃস্থ ও কর্মহীন মানুষের মাঝে রমজান উপলক্ষে ইফতার ও উপহার সামগ্রী বিতরণের কর্মসূচির উদ্বোধনকালে তিনি এসব কথা বলেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, এই সরকার সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হয়েছে, মানুষের মধ্যে আশার সৃষ্টি করার ক্ষেত্রেও তারা ব্যর্থ হয়েছে। আজকে তারা একেক সময় একেকটা তুঘলকি সিদ্ধান্ত নেয়। কিছুদিন আগে সিদ্ধান্ত নিল যে, গার্মেন্ট ফ্যাক্টরিগুলো বন্ধ হয়ে যাবে। বন্ধ করলো। কিন্তু দুদিন পরে গণ-পরিবহন খোলা রাখল। ফলে সারাদেশে মানুষের বিচরণ হল, করোনা ছড়িয়ে পড়ল সবখানে। এই বিষয়গুলো আজকে সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। আবার আজকে গার্মেন্টস খুলেছে, কিন্তু গার্মেন্ট কর্মৗদের যে নিরাপত্তা সেই নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেই। গার্মেন্টস কর্মীদের এখন আবার অনেকেই আক্রান্ত হওয়া শুরু হয়েছে ঢাকার সাভারে, আশুলিয়ায়, গাজীপুরে ও নারায়নগঞ্জে। অর্থাৎ শ্রমিকদের পর্যাপ্ত নিরাপত্তা দিতে সরকার ব্যর্থ হয়েছে।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমি সরকারকে বারবার বলেছি যে, আপনারা সবাইকে নিয়ে এক সঙ্গে আলোচনা করে, পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করুন। তারা সেই সিদ্ধান্ত নিচ্ছে না এবং তারা সেই এক সঙ্গে অন্যান্য রাজনৈতিক দল, বিশেষজ্ঞ বা যারা এক্সপার্টস আছেন তাদের কারো সঙ্গে পরামর্শ করে এই কাজগুলো করছেন না। সবার একতায় দুর্যোগ মোকাবেলা করার প্রত্যয় ব্যক্ত করে মির্জ ফখরুল বলেন, আজকের এই দুঃসময়ে আমি কোনো সমালোচনা করতে চাই না। শুধু যে ক্রটিগুলো, যে সমস্যাগুলো আছে সেগুলো আমরা দেখিয়ে দিচ্ছি। আমরা মনে করি যে, এই ত্রুটিগুলো দেখে মানুষকে এক করে, সবাইকে একত্রিত করে, ঐক্যবদ্ধ করে সব মানুষকে নিয়ে আজকে এই দুযোর্গ মোকাবেলা করতে হবে।

তিনি বলেন, আমরা অত্যন্ত দুঃসময়ে অতিক্রম করছি। এই দুঃসময়েও আমরা আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সাহেবের নির্দেশে প্রতিটি জায়গায় আমাদের সাধ্যমতো যতটুকু আমাদের সম্পদ আছে তা নিয়ে মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছি। আমরা প্রথম দিকে মানুষকে সচেতন করতে লিফলেট বিলি করেছি, মাস্ক বিতরন করেছি এর পরে আমরা উপহার নিয়ে এই রোজা মাসে আমরা চেষ্টা করছি সমগ্র দেশেই যতটুকু সম্ভব মানুষের কাছে দাঁড়ানোর জন্য। যারা বিত্তশালী ব্যক্তি আছেন এলাকাতে, দেশে তাদের প্রতি অনুরোধ জানাব যে, আপনারা সবাই এগিয়ে আসুন এভাবে যেন আমরা আমাদের ভাই-বোনদের পাশে দাঁড়াতে পারি যারা এখন অত্যন্ত দুঃসময় কাটাচ্ছেন।

গুলশানের নিজের বাসায় কোয়ারেন্টিনে থাকা অসুস্থ দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জনগনকে মাহে রমজানের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন উল্লেখ করে বিএনরপির মহাসচিব বলেন, আমাদের দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া অসুস্থ, তিনি বাসাতেই আছেন। তিনি বেরুতে পারছেন না। কারণ তাকেও কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে। তিনি আপনাদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন এবং আল্লাহ তা’লার কাছে দোয়া করেছেন তিনি যে, এই দুর্যোগ থেকে আমাদের সবাইকে রক্ষা করেন।

তিনি বলেন, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান প্রতিদিন আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। কোথায় কে যাবেন, না যাবেন,কোথায় কে কি করবে সেগুলো নির্দেশ দিচ্ছেন। আসুন দোয়া করি- আল্লাহ‘তালা যেন এই দুযোর্গ থেকে দেশ ও পৃথিবীর সব মানুষকে রক্ষা করেন।

সাংবাদিকদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত এবং তাদের চাকরির নিশ্চয়তা বিধান এবং হাসপাতালের চিকিৎসক-নার্স-স্বাস্থ্যকর্মী ও শিল্পকারখানার শ্রমিকদের চাকুরিচ্যুত না করা দাবিও জানান ফখরুল।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আজকে সারা বাংলাদেশের মানুষ সংগ্রাম করছে, লড়াই করছে এই অসুখ থেকে বাঁচার জন্য। কি দুর্ভাগ্য আমাদের যে সরকার যাদের থেকে মানুষ আশা করে যে দুর্যোগের দিনে, দুঃসময়ের দিনে তারা সঠিক পথ দেখাবে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে সরকার আমাদেরকে সঠিক পথ দেখাতে পারেনি। এই সরকার যেহেতু জনগনের জন্য নির্বাচিত নয়, জনগনের দ্বারা নির্বাচিত নয়, জনগনের কাছে তাদের কোনো রকমের কোনো জবাবদিহি নাই। সেই কারণে প্রথম দিকে মার্চ পর্যন্ত তারা এটাকে অবহেলা করেছে এবং অবহেলা এমন পর্যায়ে করেছে যে এটাকে তারা গুরুত্বই দেয়নি। দুঃখজনক ব্যাপার হচ্ছে, পৃথিবীর অন্যান্য দেশ যখন লকডাউন ঘোষণা করেছে তখন এরা কিন্তু লকডাউন ঘোষণা করেনি, স্থানীয়ভাবে লকডাউন দিচ্ছে কিন্তু রাষ্ট্রীয়ভাবে জাতীয়ভাবে কোনো লকডাউন ঘোষণা করা হয়নি। যার ফলে মানুষ এটার গুরুত্ব সেভাবে উপলব্ধি করতে পারেনি।

ত্রাণ বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, আমরা দেখেছি ত্রাণ বিতরণ যেটা মানুষের এই দুঃসময়ে কাছে পৌঁছানোর কথা সেই কাজটা কখনো সরকার সঠিকভাবে করতে পারছে না বলেই আজকে এতো অভাব সৃষ্টি হয়েছে। ৪ এপ্রিল সরকারকে একটা প্রস্তাব দিয়েছিলাম সাধারণ মানুষ যারা আছে যারা এখন কাজ করতে পারবে না তাদেরকে প্রতি মাসে ৫ হাজার টাকা করে দেয়ার জন্য, তিন মাস আমরা দেয়ার জন্য বলেছিলাম। এগুলো স্থানীয় নেতৃবৃন্দের মাধ্যমে তালিকা করে সেনাবাহিনীর মাধ্যমে বিতরণ করা যেতে পারে। এখন পর্যন্ত সরকার এটা পাত্তাই দেয় নি, গায়েই লাগায়নি। প্রতিটি ক্ষেত্রেই হাসপাতালের যে ব্যবস্থা সেই ব্যবস্থা পর্যাপ্ত না, একেবারেই অপ্রতুল ব্যবস্থা। ডাক্তার আক্রান্ত হচ্ছেন সবচেয়ে বেশি,সাংবাদিকরা সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন, পুলিশ সবেচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছে যারা আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ করছিলো।

উত্তরার দক্ষিনখানে প্রেম বাগানে কেসি স্কুলের কাছে আবদুল জব্বারের বাসার আঙিনায় বিমানবন্দর থানা বিএনপিসহ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের উদ্যোগে রমজান উপলক্ষে দুস্থ ও দরিদ্রদের মধ্যে উপহারসামগ্রী বিতরণের এই অনুষ্ঠান হয়।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন মহানগর উত্তর যুবদলের সভাপতি এস এম জাহাঙ্গীর, বিমানবন্দর থানা বিএনপি নেতা জুলহাস মোল্লা, মুনির ভুঁইয়া, পূর্ব বিমান বন্দর থানার এস আই টুটুল, স্থানীয় যুবদলের দেলোয়ার হোসেন সবুজ, আলমগীর হোসেন, স্থানীয় কমিশনার আলী আকবর, কৃষক দলের শহীদুল ইসলাম ভুঁইয়া ও চেয়ারপারসনের প্রেস উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবির খান প্রমুখ।