কোথায় গেল মার্কিন সেনার হাতে তুলে দেওয়া সেই আফগান শিশু

 

চলতি বছরের ১৫ আগস্ট তালেবান দ্বিতীয় দফায় আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখলের পর দেশটি থেকে পালতে মরিয়া হাজার হাজার মানুষ কাবুল বিমানবন্দরে ভিড় করেন। অনিশ্চিত ভবিষ্যতের চিন্তায় উদ্বিগ্ন অনেক আফগান বাবা-মা দেয়ালের কাঁটাতারের ওপর দিয়ে মার্কিন সেনার হাত দিয়ে সন্তানকে বিমানবন্দরের ভেতরে পাঠিয়ে দেন।

সে সময় মার্কিন সেনাদের মানবিক তৎপরতা প্রশংসা কুড়িয়েছিল। কিন্তু সেই শিশুদের মধ্যে থেকে একজনের কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না বলে বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে জানা গেছে।

ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মির্জা আলী আহমদী এবং তার স্ত্রী সুরাইয়া গত ১৯ আগস্ট কাবুল বিমানবন্দরের বাইরের ভিড়ে ছিলেন। সঙ্গে ছিল তাদের দু’মাসের শিশুপুত্র সোহাইলসহ পাঁচ সন্তান। বিমানবন্দরের প্রবেশপথ তখন মাত্র ১৬ ফুট দূরে। হঠাৎই শুরু হয় প্রচণ্ড ধাক্কাধাক্কি। সোহাইলের প্রাণ বাঁচাতে তাকে পাঁচিলের উপরে দাঁড়ানো এক মার্কিন সেনার হাতে তুলে দিয়েছিলেন মির্জা। ভেবেছিলেন ভেতরে ঢুকেই ছেলেকে ফেরত নেবেন। কিন্তু সেদিন ওই ১৬ ফুটের ব্যবধান পেরোতে লেগেছিল দেড় ঘণ্টা! ভেতরে ঢুকে সেই সেনাকে দেখতে পাননি মির্জা। খোঁজ পাননি সোহাইলেরও।

মার্কিন দূতাবাসের নিরাপত্তারক্ষী হওয়ার সুবাদে সেনা মহলে কিছু যোগাযোগ ছিল মির্জার। মার্কিন সেনার এক কর্মকর্তার কাছে খোঁজ নিয়ে তিনি জানতে পারেন, উদ্ধার হওয়া কয়েকজন শিশুকে বিমানবন্দরের অদূরে একটি জায়গায় রাখা হয়েছে। কিন্তু সেখানে গিয়েও ছেলের সন্ধান পাননি তিনি।

এদিকে ইংরেজি না জানায় সোহাইলকে খোঁজার কাজে অসুবিধায় পড়েন মির্জা। দূতাবাসের আফগান সহকর্মীদের সাহায্যে পরবর্তী তিনদিনে অনেকের সঙ্গে কথা বলেও শিশুপুত্রের খোঁজ পাননি ওই দম্পতি।

এরই মধ্যে উদ্ধারকারী বিমানে জায়গাও হয়ে যায় ওই পরিবারের। কাতার এবং জার্মানি হয়ে শেষ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয় পান ৩৫ বছর বয়সী মির্জা, ৩২ বছর বয়সী সুরাইয়া এবং তাদের ১৭, ৯, ৬ ও ৩ বছর বয়সী চার সন্তান।

মির্জা জানান, সোহাইল ছাড়াও সেদিন অনেক আফগান শিশুকে কাবুল বিমানবন্দরের দেয়ালে কাঁটাতারের উপর থাকা মার্কিন সেনাদের হাতে তুলে দিতে দেখেছিলেন তিনি।

তাদের মধ্যে হামিদ আর সাদিয়া দম্পতির সন্তান লিরাকে কাঁটাতারের উপর দিয়ে মার্কিন সেনাদের হাতে তুলে দেওয়ার ছবি সে সময় ভাইরালও হয়েছিল। অবশ্য লিরা শেষ পর্যন্ত মা-বাবার কাছে পৌঁছেছে। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারিজোনায় মা-বাবার সঙ্গে সে ভালো আছে।

কিন্তু লিরার মতো সৌভাগ্য সোহাইলের হয়নি। এখনো তার বাবা-মা তাকে খুঁজে যাচ্ছে।

 

সূত্রঃ যুগান্তর