কোটি টাকা লুটের প্রতিবাদ: রাজশাহী মোটর শ্রমিক নেতা জনিকেই এবার বহিস্কার

নিজস্ব প্রতিবেদক:

রাজশাহী জেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের জহুরুল ইসলাম জনি জানিয়েছেন, তার সংগঠনের শ্রমিক নেতাদের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির প্রতিবাদ করায় তাকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বুধববার রাজশাহী নগরীর উপকণ্ঠ কাটাখালী বাজারে তিনি সংবাদ সম্মেলন করেন। এসময় তিনি মোটর শ্রমিকদের একত্রিত হতে আহ্বান জানান।

এদিকে মঙ্গলবার দুপুরে জেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নে আয়োজিত এক জরুরি সভায় সংগঠনটির কোষাধ্যক্ষ জহুরুল ইসলাম জনির বিরুদ্ধে কয়েক দফায় ১২ লাখ ৩০ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগ এনে তাকে সংগঠন থেকে বহিস্কারের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। তার আগে সোমবার বিকেলে রাজশাহী নগরীর একটি রেস্তুরেন্টে জনি সংবাদ সম্মেলন করে তার সংগঠনের নেতাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে ধরে জানান, শ্রমিকদের নামে তোলা কোটি টাকা চাঁদা আত্মসাত করা হয়েছে। একই সাথে সংগঠনের নামে থাকা জমি-বাড়ি বিক্রি করে সেই অর্থও হাতিয়ে নেয়া হয়েছে। সংগঠনের কোষাধ্যক্ষ হবার কারণে বিভিন্ন চেক, ভাউচার ও হিসাবের খাতায় তার স্বাক্ষর নিয়ে নেয়া হয়। এসব অর্থ কোথায় বা কোন খাতে যাচ্ছে তা তাকে জানতে দেয়া হয় না।

বুধবার দুপুরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে জনি দাবি করেন, শ্রমিক নেতাদের আর্থিক অনিয়ম ও দুর্নীতির কথা গণমাধ্যমে প্রকাশ করায় তাকে নানা ভাবে হুমকী ধামকী দেয়া হচ্ছে। এসময় তিনি সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক মাহাতাব হোসেন চৌধুরীর বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলে ধরে জানান, সোমবার তিনি সংবাদ সম্মেলনে শ্রমিক নেতাদের মুখোশ উন্মোচনের পর মঙ্গলবার তাকে সংগঠন থেকে বহিস্কারের ঘোষণা দিয়েছেন মাহাতাব হোসেন চৌধুরী। একই সাথে শিঘ্রই কোষাধ্যক্ষ পদ সহ আরও দুইটি পদে উপনির্বাচনের ঘোষণা দেয়া হয়েছে। নিজেদের অনিয়ম ঢাকতে দ্রুত নির্বাচনের আয়োজন করছেন মাহাতাব হোসেন চৌধুরী।

নেতাদের বিরুদ্ধে কোন শ্রমিকের কথা বলার বা প্রতিবাদ করার সাহস নেই উল্লেখকরে জনি জানান, মাহাতাব হোসেন চৌধুরীর বিরুদ্ধে কোন শ্রমিক কথা বললেই তার কার্ড স্থগিত করার পাশাপাশি ওই শ্রমিকের কাজ বন্ধ করে দেয়া হয়। কর্ম হারানোর ভয়ে কেউ কোন প্রতিবাদ করে না। জনি অনিয়মের চিত্র তুলে ধরেছিলেন। আর তাই পরদিন তার বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ দিয়ে তাকে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তাকে দল থেকে বহিষ্কার করতেই তার বিরুদ্ধে ১২ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়েছে। যার কোন প্রমাণ সংগঠনের কাছে নেই বলেও দাবি করেন জনি।

সংবাদ সম্মেলন জনি বলেন, এক সভায় ১৫ মাসের হিসাব চেয়েছিলাম বলে ওই সভা মধ্যেই আমাকে মারধর করা হয়েছিল। মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের বর্তমান নেতারা প্রতিদিন শ্রমিকদের টাকা আত্মসাত করছেন। আর আমি শ্রমিকদের ভালবাসা নিয়ে নির্বাচিত হয়েছি। তাদের স্বার্থ রক্ষা হচ্ছে না বলে প্রতিবাদ করেছি।

জনি বলেন, আমি যদি ১২ লাখ ৩০ হাজার টাকা আত্মসাত করি, তাহলে এতদিন বলা হলো না কেন? এখন আমি প্রতিবাদ করেছি বলে মিথ্যা অভিযোগ তোলা হচ্ছে। এ কারণেই কেউ প্রতিবাদের সাহস পায় না। কেউ প্রতিবাদ করলে তার শ্রমিক কার্ড স্থগিত করে দেওয়া হয়। জনি শ্রমিক ইউনিয়নের ১৯ কাঠা জমি বিক্রি করে দেওয়ারও অভিযোগ করেন এই সংবাদ সম্মেলনে। আর তাঁর বিরুদ্ধে তোলা সব অভিযোগই অস্বীকার করেন।

জেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মাহাতাব হোসেন চৌধুরী বলেন, অর্থ আত্মসাতের কারণে শ্রমিকরা জনির ওপর ক্ষুব্ধ। তাই সবাই মিলেই তাকে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এটাক কারও একার সিদ্ধান্ত নয়। এখন এ কারণে জনি মিথ্যা কথা বলে বেড়াচ্ছে। তিনি আরও জানান, অত্যন্ত স্বচ্ছভাবেই সংগঠনের অর্থ ও সম্পদের সব হিসাব-নিকাশ রাখা হয়।

স/আর