‘কৃত্রিম ফুসফুস’ বানালো রাজশাহীর তিন শিক্ষার্থী

নিজস্ব প্রতিবেদক:

‘কৃত্রিম ফুসফুস’ আবিষ্কার করে সাড়া ফেলে দিয়েছে রাজশাহীর তিন পলিটেকনিক শিক্ষার্থী। এই আবিষ্কারে তারাও উচ্ছ্বসিত। শিক্ষার্থীরা বলছেন, আগামিতে আরো নতুন নতুন কিছু উদ্ভাবনী উপহার দিতে চাই। এই উদ্ভাবনীগুলো সরকারি পর্যায়ে কাজে লাগালে ভব্যিষতে চিকিৎসা সেবায় অনন্য ভূমিকা রাখতে পারে।
রাজশাহী মহিলা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের রুমান্তা হোসেন মৌ, নাইমা আক্তার আঁখি ও বিপাশা খাতুন তাদের আবিষ্কারের জন্য প্রশংসায় ভাসছেন। তারা ইলেক্টনিক্স ডিপার্টেমেন্টের অষ্টম সেমিস্টারের শিক্ষার্থী। এমন উদ্ভাবনী অবাক করেছে সবাইকে।
গত রোববার (১৬ জুন) জাতীয় পর্যায়ের স্কিলস কম্পিটিশন-২০১৮ তে রাজশাহীর ওই তিন কলেজ শিক্ষার্থীর ‘কৃত্রিম ফুসফুস’ উদ্ভাবন প্রদর্শিত হয়। প্রতিযোগিতার মঞ্চে চৌকস এই উদ্ভাবন নজর কেড়েছে সবার।
রাজশাহী মহিলা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ওমর ফারুক বলেন, রাজশাহীসহ সারা দেশে ১৬২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ২৫১টি উদ্ভাবনী নিয়ে শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করে। এই প্রতিযোগিতা তিনটি পর্যায়ে হয়। প্রথমে নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, পরে বিভাগীয় পর্যায় এবং সর্বশেষ জাতীয় পর্যায়ে। রাজশাহী মহিলা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে ১২টি উদ্ভাবনী প্রদর্শিত হয় এই আসরে। সব প্রজেক্টের উপরে ৬৪ দশমিক ৪ নম্বর পেয়ে চতুর্থ হয় রাজশাহী মহিলা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট।
অধ্যক্ষ ওমর ফারুক আরো বলেন, ‘গত বছরের নভেম্বর মাসে রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে অনুষ্ঠিত উদ্ভাবনী মেলায় ‘কৃত্রিম ফুসফুস’ নিয়ে প্রথম হয় তারা। তার পরে শিক্ষার্থীরা আরো মনযোগী হয়ে প্রজেক্টটির উপরে গবেষণা শুরু করে। শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্য অল্প খরচে মানুষের কল্যাণে কাজে আসে এমন কিছু আবিষ্কার করা। তারা পেরেছেও।’
অন্যদিকে, মৌ-আঁখি-বিপাশার বানানো ‘কৃত্রিম ফুসফুস’ আবিষ্কার বেশ সাড়া ফেলেছে দেশব্যাপি। যদিও এই উদ্ভাবনী একেবারেই নতুন নয়। এর আগে মানুষের কৃত্রিম ফুসফুস আবিষ্কার করে সারাবিশ্বে হৈ চৈ ফেলে দিয়েছিলেন বাংলাদেশি তরুণ বিজ্ঞানী আয়েশা আরেফিন টুম্পা। তবে টুম্পার সঙ্গে রাজশাহীর তিন কিশোরীর পার্থক্য হলোÑ এরা কেউই বিজ্ঞানী নন। তিনজনেই মূলত কলেজ শিক্ষার্থী।
এবিষয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির গাইড টিচার আহসান হাবিব বলেন, ‘সাধারণত ফুসফুস অকেজো হলে মানুষ মারা যায়। মানুষ যখন একেবারে মুমূর্ষু পর্যায়ে তখনই কৃত্রিম ফুসফুসের সাপোর্ট দেয়া হবে।
তিনি বলেন, এই কৃত্রিম ফুসফুস প্রথম দিকে কোরিয়া, থাইল্যান্ড ও নরওয়েতে অবিষ্কারের পরে স্বাস্থ্য সেবায় ব্যবহার শুরু হয়। বর্তমানে দেশের কিছু কিছু বেসরকারি হাসপাতালে কৃত্রিম ফুসফুস ব্যবহার করা হচ্ছে। বিদেশে কৃত্রিম ফুসফুস যন্ত্রটি অনেক বড়। তার দামও অনেক বেশি। পরিবহণ যোগ্য নয়। হাসপাতালে রেখে রোগিদের সেবা দিতে হয়। আমাদের এই যন্ত্রটি কম্পিউটারের সিপিইউর এর সমান। যা অ্যাম্বুলেন্সে ব্যবহার করা সম্ভব।
শিক্ষার্থীরা দাবি করেন, ক্লাসের ফাঁকে তিনজনে মিলে মানুষের জন্য কৃত্রিম ফুসফুস বানিয়েছে তারা। যেটি বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে খুবই উপযোগী ও সাশ্রয়ী একটি প্রকল্প। এর মাধ্যমে চিকিৎসা ব্যয় বহুলাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব।
তারা জানায়, এই যন্ত্র রোগির অবস্থা অনুযায়ী নলের মাধ্যমে শ্বাসনালিতে সংযুক্ত করা সম্ভব। এখানে আলাদা করে কোনো অক্সিজেন সিলিন্ডার লাগবে না। কেননা প্রকৃতি থেকে এটি অক্সিজেন সংগ্রহ করবে। এদিক থেকে প্রচলিত ভেন্টিলেটরের তুলনায় এটি আধুনিক।
রুমান্তা হোসেন মৌ বলেন, ‘প্রচলিত ভেন্টিলেটরের দাম সাত থেকে ১০ লাখ টাকা। আমাদের যন্ত্রটি ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকায় ব্যবহার উপযোগী করে তৈরি করা সম্ভব। দেশের মানুষের জন্য এই সামান্য কাজটুকু করতে পেরে আমরা অনেক বেশি আনন্দিত ও গর্বিত। তারা কলেজে পড়াশোনার ফাঁকে ফাঁকে পুরো কাজটি করেছেন বলে জানান।’