কুতুবদিয়া দ্বীপকে রক্ষা করছে ঝিনুকের বাঁধ

সিল্কসিটিনিউজি ডেস্ক:

বাংলাদেশের দক্ষিণে কুতুবদিয়া দ্বীপকে সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা থেকে রক্ষা করছে ঝিনুকের বাঁধ। এ দ্বীপটি অতি দ্রুত সাগরগর্ভে হারিয়ে যাচ্ছিল। ফলে হাজার হাজার মানুষ উদ্বাস্তু হয়ে পড়ছিল। বলা হয়ে থাকে, ২০৫০ সালের মধ্যে বাংলাদেশের ১ কোটি ৩৩ লাখ মানুষ জলবায়ু উদ্বাস্তু হয়ে যাবে। মানচিত্র থেকে এ সময়ের মধ্যেই হারিয়ে যাওয়ার কথা ছিল কুতুবদিয়ার।

তীব্র ঢেউ এর মাঝেও কুতুবদিয়ায় এক নতুন আশা দেখা দিয়েছে। সেখানে ঢেউয়ের মাঝে সূর্যালোককে চুমু খাচ্ছে ঝিনুকে মোড়া প্রাচীর। এই প্রবাল প্রাচীরগুলো সাগরের প্রাণের এক স্বর্গে পরিণত হয়েছে।

সাগরতীরে এই ধরনের প্রাচীর ধারণা জন্ম নেয় ২০১২ সালে। সেসময় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্সটিটিউট অব মেরিন সায়েন্সের সদস্য ছিলেন মোহাম্মদ শাহ নেওয়াজ চৌধুরী। ধারণাটি ছিল খুব সহজ। ঝিনুকের প্রাচীর সাগরের ঢেউকে তীরে আঘাত হানার আগেই গতি কমিয়ে ভাঙন ঠেকাতে পারবে। এর আগে নেদারল্যান্ডে এই ধারণা কাজে এসছিল। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের লুইজিয়ানায় এই সাফল্যের গল্প আছে।

তবে শাহ নেওয়াজ চৌধুরী আর তার দল নেদারল্যান্ডসের ওয়াগেনিনগেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে কাজ করে এই পদ্ধতিটিকে  ব্যাপক ব্যবহারের উপযোগী করে তুলেছেন। তিনি আশা প্রকাশ করেন এই পদ্ধতি সাগর পাড়ের মানুষের জীবিকা নির্বাহ বাড়িয়ে তুলবে। তিনি আশা প্রকাশ করেন এই ধরনের বাঁধ সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা থেকে কুতুবদিয়া দ্বীপ রক্ষা করবে।

শাহ নেওয়াজ জানিয়েছেন বাংলাদেশের পরিস্থিতি নেদারল্যান্ড আর লুইজিয়ানার মতো সহজ ছিলো না। তিনি বলেন, ‘নদী প্রবাহের কারণে আমাদের প্রাকৃতিক লবণাক্ততা মোকাবিলা করতে হয়েছে। আমরা মোকাবিলা করেছি ঝড় ও বর্ষার প্রভাব।’

ঝিনুকের মাধ্যমে পরিবেশগত প্রকৌশল কি গতিশীল উপকূলরেখা রক্ষা করতে পারে? এটি অনুসন্ধান করতে পরবর্তী ৬ বছর, ৬০০ দিনের বেশি তিনি তার ২৭ জন শিক্ষার্থী নিয়ে কুতুবদিয়া দ্বীপে থেকে অনুসন্ধান করেছেন।

এই ধরনের বাস্তু প্রকৌশল প্রকৃতির কোনো ক্ষতি না করেই একটি জনপদকে রক্ষা করতে পারে। এত খরচও খুব বেশি হয় না। বাংলাদেশে যে নতুন নতুন ভূমি জেগে উঠছে, সেখানেও এই পদ্ধতি প্রয়োগ হচ্ছে। ফলে বাংলাদেশের আয়তন বস্তুত বাড়ছে।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, ঝিনুকের প্রাচীর জলজ প্রাণীর আবাস তৈরি করে, পানির মান বাড়ায়, সাগর ঘাসের বৃদ্ধিতে সহায়ক এবং বেশ সস্তা। প্রাকৃতিক ব্রেকওয়াটার হিসেবেও এর তুলনা নেই বললেই চলে। এটি প্রকৃতির ক্ষতির কারণও হচ্ছে না। এজন্য ব্যবহার করা হচ্ছে সিমেন্টের তৈরি রিং। যা একসময় অদৃশ্য হয়ে যাবে। পড়ে থাকবে শুধু ঝিনুকের বর্ম।

তবে এই দেওয়াল আসলে নিরাপত্তার প্রথম ঢাল। এরপরেই থাকছে ম্যানগ্রোভ বন। যা পুরো উপকূলজুড়েই ছড়িয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ। প্রকৃতিকে শাসন করেনি বাংলাদেশ, বরং তার সঙ্গে জোট বেধেছে। এ কারণেই বাংলাদেশের আয়তন কমছে না, বছর বছর বাড়ছে।

সূত্র: বিবিসি