কাল মহাঅষ্টমী: মহাসপ্তমীতে দেবীর পায়ে ভক্তদের প্রথম অঞ্জলি

দুর্গোৎসবের দ্বিতীয় দিন মহাসপ্তমীতে দেবী দুর্গার পায়ে প্রথম পুষ্পাঞ্জলী দিয়েছেন ভক্তরা। সপ্তমীর সকালে আজ মঙ্গলবার পূজার শুরুতেই দেবী দুর্গার প্রতিবিম্ব আয়নায় ফেলে বিশেষ ধর্মীয় রীতিতে স্নান করানো হয়। এরপর নবপত্রিকা স্থাপন করা হয়। নবপত্রিকার আরেক নাম হলো কলা বৌ স্নান। এছাড়া দেবীর চক্ষুদানের মাধ্যমে দেবী দুর্গার প্রাণ প্রতিষ্ঠা করা হয়। আজ বুধবার মহাষ্টমী পূজার আয়োজন চলছে। তবে করোনা পরিস্থিতির কারণে অষ্টমীর অন্যতম আকর্ষণ কুমারী পূজা এবারো রাজধানীতে হচ্ছে না বলে পূজা উদযাপন পরিষদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

আজ মঙ্গলবার ঢাকেশ^রী জাতীয় মন্দির, ঢাকা রামকৃষ্ণ মঠ ও রামকৃষ্ণ মিশনে ‘কোভিড-১৯’ সংক্রান্ত নির্দেশনা অনুসরণ করে দুর্গাপূজার আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হয়েছে। পূজা শুরু হয় সকাল ৬ টা ৪৫মিনিটে। পূজা শেষে হাতের মুঠোয় ফুল, বেলপাতা নিয়ে ভক্তরা মন্ত্র উচ্চারণের মধ্য দিয়ে এবারের পূজার প্রথম অঞ্জলি দেন দেবীর পায়ে। করজোরে কাতর কণ্ঠে জগজ্জননীর কাছে করোনা মুক্ত বিশ্বের প্রার্থনা করেছেন ভক্তরা। ঢাকের বাদ্য, কাসর ঘণ্টা কিংবা শঙ্খধ্বনিতে দেবীর আরাধনার পাশাপাশি সবেতেই যেনো ছিলো একই আর্তি। দুপুরে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল ভক্ত ও দর্শনার্থীদের মাঝে খিচুড়ি প্রসাদ বিতরণ করা হয়। বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠনের প্রতিনিধিরা পূজা পরিদর্শন করেন।

পঞ্জিকা অনুযায়ী, আগামীকাল সকাল ৬টা ৪৫ মিনিটের মধ্যে দুর্গাদেবীর মহাষ্টম্যাদি বিহিত পূজা শুরু হবে। এদিন সকাল ৮টা ১৪ মিনিট থেকে ৯টা ২ মিনিটের মধ্যে অনুষ্ঠিত হবে সন্ধিপূজা। অষ্টমী ও নবমী তিথির সন্ধিক্ষণে এই সন্ধিপুজা অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়া মহাষ্টমীতে অনুষ্ঠিত হয় কুমারী পূজা। দেবী পুরাণে কুমারী পূজার সুষ্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে। রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনসহ কয়েকটি স্থানে প্রতিবছর কুমারী পূজা অনুষ্ঠিত হয়। করোনা সংক্রমণের কারণে গত বছরের মতো এবছর কুমারী পূজা হচ্ছে না। তবে সিলেটের বাহুবল উপজেলার জয়পুর গ্রামে শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর মাতুলালয় শ্রীশ্রী শচীঅঙ্গন ধামে কুমারী পূজা হবে।

সপ্তমী পূজা থেকেই মণ্ডপে মণ্ডপে প্রতিমা দর্শনে ভিড় করেছেন ভক্ত ও দর্শনার্থীরা। বিকেলে রাজধানীর খামারবাড়ি কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন অব বাংলাদেশ (কেআইবি) প্রাঙ্গণে সনাতন সমাজ কল্যাণ সংঘ আয়োজিত দুর্গাপূজার ভক্ত-দর্শনার্থীদের ভীড় দেখা গেছে। গত কয়েক বছরে ব্যাপক সাড়া জাগানো এই মণ্ডপে প্রবেশ ও বাহিরের পৃথক পথ করা হয়েছে। প্রবেশ মুখে হাত ধোয়ার ও স্যানিটাইজের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। প্রবেশ পথকে দু’টি লেনে ভাগ করা হয়েছে। ভিতরে স্বাস্থ্যবিধি মেনে বসার আয়োজনও করা হয়েছে। মণ্ডপের ভিতর ও বাইরে পুলিশসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সতর্ক অবস্থা দেখা গেছে।

আজ মঙ্গলবার রাজধানীর স্বামীবাগে লোকনাথ মন্দিরে পূজামণ্ডপ পরিদর্শন ও বস্ত্র বিতরণ শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, দেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সজাগ রয়েছে। পূজামণ্ডপগুলোতে কোনো ধরনের নিরাপত্তা ঝুঁকি নেই। শুধু পূজা নয়, সব ধর্মীয় উৎসবে নিরাপত্তা বাহিনী কাজ করছে। তিনি আরো বলেন, দেশের মানুষ ধর্মভীরু, ধর্মান্ধ নয়। ধর্ম যার যার উৎসব সবার, এ নীতিতে বিশ্বাসী বাংলাদেশের মানুষ। যারা দেশে ধর্মের নামে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে চেয়েছিল, তাদের কঠোরভাবে দমন করা হয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

আয়োজকরা জানান, বুধবার অষ্টমীতে ভক্ত দর্শনার্থীরেদ ভীড় আরো বাড়বে। মণ্ডপে মণ্ডপে হবে আরতী। আর থাকবে আলোর ঝলকানি। তবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে যাতে পুজার এবং প্রতিমা দর্শনের কাজটি ভক্ত দর্শনার্থীরা সম্পন্ন করেন সেই দিকেই বিশেষ নজর দিচ্ছেন আয়োজকরা। মহাঅষ্টমীর দিনে সারা দেশে জুয়েলারি দোকান পূর্ণদিবস বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ জুয়েলারি সমিতি।

 

সূত্রঃ কালের কণ্ঠ