কানাডার আদালতের রায়: বিশ্বব্যাংকের প্রতিক্রিয়ার অপেক্ষায় সরকার

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

কানাডার আদালত পদ্মা সেতুর দুর্নীতির অভিযোগকে গুজব বলে রায় ঘোষণার পর বিশ্বব্যাংকের পরবর্তী পদক্ষেপের অপেক্ষায় রয়েছে সরকার। বিশ্বব্যাংকের প্রতিক্রিয়ার ধরন দেখেই সার্বিক পর্যালোচনা করে সরকার করণীয় নির্ধারণ করবে। তবে বাংলাদেশের উন্নয়ন সহযোগী এই সংস্থাটির সঙ্গে মুখোমুখি হওয়ার মতো পদক্ষেপ নেওয়ার প্রশ্নে সরকারের আপাতত কোনও আগ্রহ নেই। এক্ষেত্রে বিশ্বব্যাংক অনুশোচনা জানালে এবং তা গ্রহণযোগ্য হলে সংস্থাটির ব্যাপারে কড়া সমালোচনা থেকেও বিরত থাকবেন সরকারের নীতি-নির্ধারকরা। সরকারের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।

 
সরকারের দু’জন মন্ত্রী বলেন, কানাডার আদালতের রায়ের পরে বিশ্বব্যাংকের আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানা জরুরি।

 
সরকারের নীতি-নির্ধারণী সূত্র জানিয়েছে, বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের ‘ডেভেলপমেন্ট পার্টনার’। তারা নিজেরা এসে এখানে কাজ করে না। এখানে এ দেশের মানুষই এ প্রতিষ্ঠানের হয়ে কাজ করে। ফলে কোনও ধরনের ষড়যন্ত্র থাকলে তা দেশের মানুষেরই তৈরি। তাই এই ষড়যন্ত্রের সঙ্গে দেশের যারা জড়িত, সরকার তাদের ছাড় দিতে চায় না। সরকারের নীতিনির্ধারকরা মনে করছেন, সবচেয়ে বড় উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা বিশ্বব্যাংক এ দেশের কিছু মানুষের বুদ্ধি-পরামর্শেই পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ এনে এর নির্মাণ কাজ থেকে পিছিয়ে গেছে। তাই সরকার এই নেপথ্যের মানুষগুলোর ব্যাপারে কড়া অবস্থান নেবে।

 
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কৃষিমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ অভিযোগকে আগেই ষড়যন্ত্র বলে উড়িয়ে দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী আগে যা বলেছিলেন, কানাডার আদালত পরে রায়ে সেটাই বলেছেন। এটাই তার (প্রধানমন্ত্রী) রাজনৈতিক বিচক্ষণতা।’ তিনি আরও বলেন, ‘দুর্নীতি হয়েছে বলে বিশ্বব্যাংককে কারা প্রভাবিত করেছে সেটা খুঁজে বের করা উচিত।’

 
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বরাবরই বলে আসছেন, পদ্মা সেতু প্রকল্প নিয়ে বিশ্বব্যাংকের অভিযোগ তোলা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অংশ। এতে বাংলাদেশিরাও জড়িত ছিলেন। সম্প্রতি সংসদে তিনি বলেন, ‘হিলারি ক্লিনটনকে দিয়ে পদ্মা সেতুতে বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়ন আটকে দিয়েছিলেন নোবেলজয়ী বাংলাদেশি অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তাতে বাংলাদেশের এক সম্পাদকেরও ভূমিকা ছিল।’

 
এদিকে গত বুধবার পদ্মাসেতু প্রকল্পে ‘দুর্নীতির মিথ্যা গল্প’ বানানোর নেপথ্যে ‘প্রকৃত ষড়যন্ত্রকারীদের’ খুঁজে বের করতে হাইকোর্ট একটি রুলও জারি করেছে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের পক্ষ থেকে বিশ্বব্যাংকের কাছে এক বিলিয়ন ডলার ক্ষতিপূরণ দাবি করা হয়েছে। একইসঙ্গে সংসীয় কমিটি যেন নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে তলব করে তার ভূমিকা সম্পর্কে জানতে চায়, সেই দাবিও উঠেছে।

 
এ প্রসঙ্গে বৃহস্পতিবার রাজধানীতে একটি অনুষ্ঠানে আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেন, ‘সন্দেহের বশে বিশ্বব্যাংক যে আচরণ করেছে, তার প্রতিকার চায় বাংলাদেশ।’ ওই অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘ওই মামলার কারণে ক্ষতিগ্রস্তরা চাইলে বিশ্বব্যাংকের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থাও নিতে পারেন।’ বিশ্বব্যাংকের কাছে কী ধরনের প্রতিকার আশা করেন, জানতে চাইলে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘প্রতিকার ক্ষতিপূরণ দিয়েও হতে পারে; আবার যেসব কর্মকর্তা আমাদের বিরুদ্ধে এই অবিচার করেছেন, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার মাধ্যমেও হতে পারে।’

সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন