‘কাদা ছোড়াছুড়ি না করে ভুল থাকলে ধরিয়ে দিন’

করোনা সংকট মোকাবেলায় কাদা ছোড়াছুড়ি না করে সরকারের ভুল থাকলে তা ধরিয়ে দিতে বিএনপির প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

তিনি বলেন, এখন কোনও রাজনীতি নয়। এখন একটাই রাজনীতি সংক্রমণ রোধ ও মানুষকে বাঁচানো। কাজেই চিরায়ত ভঙ্গির মিথ্যাচার বন্ধ করে সংকট সমাধানে কোনও পরামর্শ থাকলে দিন। জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করুন।

শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর সংসদ ভবন এলাকার সরকারি বাসভবন থেকে এক অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

বিএনপির কঠোর সমালোচনা করে ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপি করোনা সংকটের শুরু থেকেই দায়িত্বশীল রাজনৈতিক দলের ভূমিকা পালন না করে সরকারের সমালোচনাকে নিজেদের রাজনৈতিক কৌশল কিংবা দর্শন হিসেবে নিয়েছে। এতে বিএনপির আদৌ জনসমর্থন বেড়েছে কি?

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার শুরু থেকেই নানা সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও দিনরাত পরিশ্রম করে যাচ্ছে জানিয়ে সেতুমন্ত্রী বলেন, সংক্রমণ রোধ, চিকিৎসা নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ, সুরক্ষা সামগ্রী সংগ্রহসহ অসহায় কর্মহীন মানুষের সুরক্ষায় কাজ করছে। যুক্তরাষ্ট্র যুক্তরাজ্যসহ জগতের তাবৎ সমৃদ্ধ শক্তির দেশগুলোর সীমাবদ্ধতা নিয়ে করোনার বিরুদ্ধে লড়াই করছে। কোন দেশের প্রস্তুতি শতভাগ ছিল? কোন দেশের সীমাবদ্ধতা ছিল না? শুধু সমালোচনা করতে হবে বলে আপনারা জাতিকে অসত্য তথ্য দিয়ে যাবেন?

‘সরকার তথ্য গোপন করছে’- বিএনপির এমন অভিযোগ অস্বীকার করে ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপি অভিযোগ করেছে সরকার নাকি তথ্য গোপন করছে। প্রযুক্তি আর সামাজিক যোগাযোগের উন্মুক্ত প্রবাহের কালে তথ্য গোপনের কোনও সুযোগ নেই। সরকারের সেই ইচ্ছাও নেই। সরকারের নানান সীমাবদ্ধতা আছে। সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে শেখ হাসিনা সরকার ক্রমশ সক্ষমতা অর্জন করছে।

তিনি বলেন, এ পর্যন্ত দেশে সোয়া এক লাখ মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছে। এর মাঝে আল্লাহর রহমতে ৫০ হাজারের বেশি সুস্থ হয়েছে। সংখ্যাগত হিসেবে এটিও কম নয়। চিকিৎসক-নার্স টেকনিশিয়ানসহ ফ্রন্টলাইনে পুলিশ-সেনাবাহিনী জনপপ্রশাসন জীবনবাজি রেখে কাজ করছে। সেবা দিতে গিয়ে প্রাণ হারাচ্ছে। কই বিএনপি তাদের ধন্যবাদ দিয়ে কথা বলে না, তাদের মনোবল যাতে ভেঙে না যায় তা নিয়ে বক্তব্য রাখেন না। নেতিবাচকতা তাদের এতই গ্রাস করেছে যে- তারা দিনের আলোতেই রাতের আঁধার দেখতে পায়।

সঙ্কটে দলীয় নেতাকর্মীদের জনগণের পাশে থাকার আহ্বান জানিয়েছি আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, এখন কোনও রাজনীতি নয়, একটাই রাজনীতি সংক্রমণ রোধ ও মানুষকে বাঁচানো। এই অসময়ে জনগণ কাদা ছোড়াছুড়ি চায় না। এটা মানুষ পছন্দ করে না। অথচ এমন আজগুবি তথ্য তারা দেয় তার জবাব না দিয়ে পারা যায় না। আমরা তাদের উস্কানিমূলক এবং জনবিরোধী অপলাপে অংশ নিতে চাই না।

তিনি বলেন, সরকার সব সময় সব দলের সহযোগিতা চেয়ে আসছে। যেকোনও গঠনমূলক পরামর্শ কিংবা ভুল ধরিয়ে দিলে সেটা গ্রহণ করার সৎসাহস শেখ হাসিনা সরকারের আছে। বৈশ্বিক মহামারী মোকাবিলা করতে প্রতিটি দেশই হিমশিম খাচ্ছে। সরকারও বসে নেই। এই সমস্যা থেকে উত্তরণের কোনও সাজেশন বিএনপি রাখছে না, শুধু অন্ধ সমালোচনাকে রুটিন ওয়ার্কে পরিণত করছে।

এসময় করোনা সংক্রমণকালে মেডিকেল বর্জ্যের বিজ্ঞানভিত্তিক ব্যবস্থাপনার পরামর্শ দিয়ে সেতুমন্ত্রী বলেন, করোনা সংক্রমণ রোধ এবং চিকিৎসায় যেসকল সুরক্ষা সামগ্রী ব্যবহার করা আছে সেগুলো যথাযথ বিজ্ঞান ভিত্তিক ব্যবস্থাপনা জরুরি। যত্রতত্র মাস্ক, গ্লাভস, স্যানিটাইজারের কৌটা ইত্যাদি সামগ্রী ফেলে রাখায় একদিকে দূষণ বাড়ছে অপরদিকে স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। এসব পরিত্যক্ত সামগ্রী নির্দিষ্ট স্থানে ফেলার জন্য সবার প্রতি অনুরোধ জানাচ্ছি। পাশাপাশি হাসপাতালের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা যাতে স্বাস্থ্যসম্মত হয় সেদিকে সংশ্লিষ্টদের নজর দেয়ার আহ্বান জানান তিনি।

গণপরিবহনের বিরুদ্ধে বেশি ভাড়া আদায়ের অভিযোগ প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, করোনা সংক্রমণকালে গণপরিবহনের অধিকাংশ ক্ষেত্রেই যাত্রী সংকট রয়েছে। দূরপাল্লার বাস চলছে স্বল্পসংখ্যক। অথচ কিছু পরিবহন অধিক ভাড়া আদায় করছে- এমন অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। আমি বিআরটিএকে এ বিষয়ে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছি। অভিযোগ সত্য প্রমাণিত হলে ডাম্পিংসহ কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলেছি।