কাটাখালীতে ১৭ জনের প্রাণহানী: ‘দ্রুত গতিতে ওভার টেকিং’-তদন্ত প্রতিবেদন

শাহিনুল আশিক:


কাটাখালীতে বাস ও মাইক্রোবাসের মধ্যে সংঘর্ষের কারণ হিসেবে তদন্তে প্রতিবেদনে উঠে এসেছে ‘দ্রুতগতিতে বিপজ্জনক ওভার টেকিং’। দুর্ঘটনা রোধে করা হয়েছে ১২টি সুপারিশও। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন- রাজশাহী জেলা প্রশাসকের সহকারী কমিশনার মোহাম্মদ কাউছার হামিদ। তিনি বলেন- দুর্ঘটনার কারণ উল্লেখসহ ১২টি সুপারিশ ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।

এর আগে চলতি বছরের গত ২৬ মার্চ (শুক্রবার) দুপুরে নগরীর উপকণ্ঠ কাটাখালীতে মর্মান্তিক এক সড়ক দুর্ঘটনায় ১৭ জনের মৃত্যু হয়। সেখানে ১১ জনের আগুনে পুড়ে মৃত্যু হয় মাইক্রোবাসের ভেতরে। যার মধ্যে ৪ মেয়ে, ২ শিশু ও ৫ জন পুরুষের পোড়া মরদেহ উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশের কর্মীরা। এই দুর্ঘটনায় রাজশাহী জেলা প্রশাসক তদন্ত কমিটি গঠন করেন।

তদন্তের বিষয়ে সহকারী কমিশনার মোহাম্মদ কাউছার হামিদ আরও জানান- দুর্ঘটনা রোধে বেশি কিছু সুপারিশের মধ্যে মহাসড়কে ধীরগতির (ভ্যান, রিক্সা, সাইকেল) যানবাহন বন্ধ করা, এই যানবাহনগুলোর জন্য সড়কের দুই পাশে আলাদা লেন, যানবাহনের গতি নিয়ন্ত্রক যন্ত্র বসানো, রোড ডিভাইডার না থাকা, গাড়িতে জিপিএস বাধ্যতামূলক করা।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, কাটাখালীর দুর্ঘটনায় ১৭ জনের মৃত্যুর পরে আরও পৃথক তিনটি দুর্ঘটনায় ছয় জনের মৃত্যু হয়। এসব দুর্ঘটনা ২৬ মার্চ থেকে ৯ এপ্রিলের মধ্যে ঘটেছে। এসময় ২৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। দুর্ঘটনার সংখ্যা অল্প হলেও প্রাণহানি বেশি বলে সংশ্লিষ্টরা বলছেন। দুর্ঘটনাগুলোর মধ্যে ওভার স্পিড, ওভার টেকিং-এর বিষয়গুলো ছিলো। যে কারণে চালক নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারেনি যানবাহনের। ফলে কোনো দুর্ঘটনায় ধাক্কা এবং পিষ্ট করেছে যাত্রী বা পথচারীদের।

দেখা গেছে, চলতি মাসের গত পাঁচ ও ১০ এপ্রিল পৃথক দুর্ঘটনায় ৭ জনের মৃত্যু হয়। এর মধ্যে পবায় তিন ও পুঠিয়ার দুইজন। সর্বশেষ শুক্রবার (৯) পুঠিয়া ট্রলির চাপায় সাইকেল অরোহী নাবিল হোসেনের (১৩) মৃত্যু হয়। তার আগের দিন বৃহস্পতিবার বিকেলে চারঘাটের নিমপাড়ায় মাটি ট্রলির চাপায় মোটরসাইকেল সংঘর্ষের মিজানুর রহমান মন্টুর (২৩) মৃত্যু হয়।

এর আগে বুধবার (৭এপ্রিল) দুপুরে রাজশাহী-চাঁপাইনবাবগঞ্জ মহাসড়কে পবার মুরারিপুরে অটোরিকশা ও ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে এক দম্পতিসহ তিনজন নিহত হন। নিহতরা হলেন- চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার ঘাসিয়ালপাড়া গ্রামের বাসিন্দা আবদুস সাত্তার (৫৫), তার স্ত্রী ফেরদৌসি বেগম (৪৭)। এছাড়া নিহত সিএনজি অটোরিকশার চালক আনসার আলী (৪৫) গোমস্তাপুর উপজেলার বাগডাস গ্রামের ইসাহাক বিহারীর ছেলে।

দামকুড়া থানার ওসি মাহবুব হোসেন জানান, আবদুস সাত্তার অসুস্থ স্ত্রীকে নিয়ে গোমস্তাপুর থেকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে যাচ্ছিলেন। সিএনজি অটোরিকশাটি মুরারিপুর এলাকায় দুর্ঘটনার কবলে পরে। এই দুর্ঘটনায় ফেরদৌসি বেগম ও সিএনজি চালক আনসার আলীর ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয়। আহত সাত্তার ও যাত্রী শুভকে উদ্ধার করে রামেক হাসপাতালে নিলে আবদুস সাত্তারের মৃত্যু হয়। দুর্ঘটনার পর ট্রাকের চালক-হেলপার পালিয়েছেন।

এর আগে সোমবার (৫ এপ্রিল) ভোরে পুঠিয়ার সেনভাগ এলাকায় ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়কে ট্রাকের চাপায় ভ্যানের চালক ও যাত্রীর মৃত্যু হয়েছে। নিহত ভ্যানচালক শহিদুল ইসলাম (৪৫)। তিনি নাটোর সদর এলাকার সুলতানপুরের শাহাদাৎ হোসেনের ছেলে এবং নিহত অপর ভ্যানযাত্রী আবদুস সালাম (৫০)। একই এলাকার মৃত সোবহান শেখের ছেলে। আহতরা হলেন, মোজাম্মেল হোসেন (৪০) ও আবুল কালাম আজাদকে (৫০) পুঠিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। পবা হাইওয়ে শিবপুর থানার ইনচার্জ (ওসি) লুৎফর রহমান জানান, চালক ও হেলপার পালিয়েছে।

আর গত বুধবার (৩১ মার্চ) দুপুরে বাঘার বেড়েরবাড়ির কটারমোড়ে মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তায় ছিঁটকে পড়ে মেহেদী হাসান চঞ্চল নামের কলেজছাত্রের মৃত্যু হয়।

কাটাখালী পৌরসভার মেয়র আব্বাস আলী বলেন, ১৭ জনের মৃত্যু কাটাখালীর ইতিহাসে সবচেয়ে বড় দুর্ঘটনা। এই হাইওয়ে সড়কে যানবাহনের গতি নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা করতে হবে। এমন গতি নিয়ন্ত্রক যন্ত্র বসাতে আরএমপি পুলিশ কমিশনারের সহায়তা চাওয়া হয়েছে। এছাড়া কাটখালী এলাকায় হাইওয়েতে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা হবে।