‘কাকে কে সান্তনা দেবে’

 নিজস্ব প্রতিবেদক:


‘কার কান্দন কে দেখবে। কে কাকে সান্তনা দেবে। নিহত চারজনের বাড়ি পাশা-পাশি। আর পাড়া-প্রতিবেশী হিসেবে একে অপরের আত্মীয়। এমন পরিস্থিতিতে সান্তনাই কি বা হতে পারে।’

মঙ্গলবার (৮ জুন) সকালে দেখতে গিয়ে ঈদ মাঠে জানাযার আগে এই ভাবে বলছিলেন শামসুল নামের এক ব্যক্তি। তার বাড়ি রাজশাহী নগরে। এর আগে সোমবার (৭জুন) বজ্রপাতে চারঘাটের ইউসুফপুর ইউনিয়নের চককাপাসিয়ার আম কুড়াতে গিয়ে চার জনের মৃত্যু হয়। নিহত চারজনের নামাজের জানাযা মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত হয়েছে।

নিহতরা হলেন- আজম আলীর স্ত্রী মুক্তা বেগম (৩৫), মাহাবুবের ছেলে সোহান আলী (৯), কাবিল উদ্দিনের স্ত্রী আলেয়া বেগম (৫৫) ও জনির ছেলে পরশ আলী (১০)। এছাড়াও আহত হয়েছেন- উকিল হোসেনের ছেলে ভুট্টু (১৮) ও অপর একজন।

ওই এলাকার জীয়াদ আলী নামের এক ব্যক্তি বলেন, ‘মরা চারডি (চারটা)। গুটা পাড়া মিলি আমারে মসজিদ একটা, পাশের পাড়াতে আরেক টা। দুই মসজিদের দুইডি (দুইটা) খাটলা পাবনি। আর দুডি (দুইটা) কতি পাবো। উপাই না জুগার (জোগার) করতে হবে।’

নিহত পরশের মা মিলিনা বিলাপ করতে করতে বলছিলেন-‘ওরে ব্যাটা (ছেলে), আমার জান, তুমি আম কাড়াতে গেলা কেন। ঘরে আমার কত আম পচছে (নষ্ট হচ্ছে)। আমি তোমাকে দুপুরে মাছ বাছি দিনু (বেছে দিলাম)। তুমি বেটা খ্যালা (খেলা)। আমি তোমাকে আর দেখতে পাবো না। তুমি কতি (কোথায়) চলি (চলে) গেলে।’

ওই আমবাগানের পাশের বাসিন্দা মানুয়ারা বেগম সিল্কসিটিনিউজকে জানান, সেই সময় বৃষ্টি হচ্ছিল। তাই তারা একসাথে আম গাছের নিচে দাঁড়িয়ে ছিলো। হঠাৎ করে মেঘ গর্জন দেয়। আর আগুন আম গাছের উপরে পড়ে। তখন আমার (মানুয়ারা) মনে হলো- ছেলে-মেয়েরা তো আম কুড়াচ্ছিল। দ্রুত বাইরে এসে দেখি আলেয়া মাটিয়ে শুয়ে ছিলো। আর বাকিরা ব্যাগ হাতে বসেছিলো গাছের নিচে। কাছে গিয়ে দেখি তারা চোখ ফুটিয়ে আছে। তখন পাশের বাড়ির অন্য মানুষদের ডেকে ভ্যানে তুলতে তুলতে মুক্তা ও আলেয়ার মৃত্যু হয়। পরে পরশ ও সোহানকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে নেওয়া হয়।

নিহত সোহানের চাচি মর্জিনা বেগম সিল্কসিটিনিউজকে জানান, রাস্তাতেই সোহানের মৃত্যু হয়। নিস্তেজ হয়ে গিয়ে ছিলো। তারপরেও পরশ ও সোহানকে রামেক হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে সেখানে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। নিহত ও আহতদের বাড়ি পাশাপাশি হওয়ায় আহাজারিতে ভারি হয়ে গেছে চক-কাপাসিয়ার এই ছোট এলাকাটি। দুর্ঘটনার খবরে ছুটে আসছেন দূর-দূরান্তের মানুষ। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান শফিউল আলম রতন জানান, তাদের দাফন সম্পন্ন হয়েছে।

স/নূ