কর্মজীবী বউয়ের সঙ্গে যেমন হওয়া উচিত শ্বশুরবাড়ির লোকদের আচরণ

কর্মজীবী নারী বাড়িতে বউ হয়ে এলে নতুন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়। অফিস, শ্বশুরবাড়ি, নতুন সংসারজীবন। এ সময় শ্বশুরবাড়ির সদস্যদের ভূমিকা নববধূর জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিক্যাল কাউন্সেলিং সাইকোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. মেহজাবিন হকের সঙ্গে কথা বলে লিখেছেন আতিফ আতাউর।

একটি আইটি কম্পানিতে চাকরি করতেন দিলরুবা ইয়াসমীন। ছোট থেকেই স্বপ্ন ছিল পড়াশোনা শেষ করে চাকরি করবেন। স্বাবলম্বী হবেন। চাকরির চার বছরের মাথায় বিয়ের পিঁড়িতে বসেন দিলরুবা।

স্বামী একটি সরকারি প্রতিষ্ঠানের সহকারী প্রকৌশলী। বাবা-মা-ভাইবোন নিয়ে বাস করেন ঢাকায়। বিয়ের পর যৌথ পরিবারে বসবাস শুরু হয় দিলরুবার। ছোট পরিবারে বেড়ে ওঠা দিলরুবা একটু কঠিন হলেও ধীরে ধীরে মানিয়ে চলতে শুরু করেন স্বামীর বড় পরিবারে। তিনি যে চাকরিজীবী তা জেনেই সব ঠিক হয়েছিল। বিয়ের পর তিনি চাকরি করবেন তা জানিয়েছিলেন স্বামীকে। স্বামীর কোনো আপত্তি ছিল না।

কিন্তু কয়েক মাস যেতে না যেতেই কথা উঠতে শুরু করে। রান্নাবান্না ও ঘরকন্নার সব কিছুতে সাহায্য করতেন দিলরুবা। তবু কোনো দিন মিটিং শেষে রাত করে বাসায় ফিরলে বা দেরিতে ঘুম থেকে উঠলে শাশুড়ি ও ননদের চক্ষুশূলের শিকার হতেন। মাঝখানে একবার গ্রাম থেকে নানিশাশুড়ি বেড়াতে এসে দু-চার কথা শুনিয়ে যান। স্বামীর উপার্জনের কমতি নেই, সংসারে অভাব নেই তো নতুন বউয়ের চাকরি করার কী দরকার! এমন অভিজ্ঞতা মেনে নিয়েই চাকরি করছেন তিনি। কারণ ছোটবেলায় দেখা স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্নটা ছাড়তে চান না। হতে চান না কারো ওপর নির্ভরশীল।

কর্মজীবী প্রত্যেক নববধূকেই শ্বশুরবাড়িতে নানা বিড়ম্বনার শিকার হতে হয়। এত দিন কম শিক্ষিত পরিবারে কর্মজীবী নববধূদের নিয়ে কটু কথা বেশি হলেও এখন তা উচ্চশিক্ষিত পরিবারেও ছড়িয়ে গেছে। নতুন বউয়ের চাকরিকে বাঁকা চোখে দেখেন অনেক শাশুড়ি। তবে সব পরিবারেই যে এমন চিত্র তা নয়। দিন দিন পরিস্থিতির বদল ঘটলেও চিত্রটা যে একেবারে হারিয়ে যায়নি পত্রিকার পাতা পড়লেই বোঝা যায়। এ জন্য সবার আগে আমাদের মনোভাবের বদল ঘটানো জরুরি। বিষয়টিকে ইতিবাচকভাবে দেখা উচিত। নতুন বউয়ের চাকরি সম্মানের চোখে দেখুন। এখন সারা বিশ্বেই নারীদের জয়জয়কার। দেশ চালানো থেকে শুরু করে মহাকাশও দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন নারীরা। নারীদের এই অগ্রযাত্রায় আপনার বাড়ির চাকরিজীবী বউটিও একজন অংশীদার। সমাজ ও জীবন পরিবর্তনে তাঁর এই ভূমিকাকে সম্মান করুন। আগেকার আমলের মতো বউয়ের বাড়ির বাইরে যাওয়া নিষেধ এই বেড়াজালে আটকে থাকবেন না। নিজে আগে শ্বশুরবাড়িতে যে অবহেলা ও অনাচারের শিকার হয়েছেন তার প্রতিফলন ছেলের কর্মজীবী বউয়ের মধ্যে দেখতে চাওয়াটা বোকামি। বরং নতুন বউকে আপনার আসনে বসিয়ে দেখুন।

বাড়ির বউ কর্মজীবী হলে সবাইকে কিছুটা ত্যাগ স্বীকার করতে হয়। এমন মানসিকতা বজায় রাখুন। সকালে অফিস হলে তিনি হয়তো রান্নাটা করতে পারবেন না। আবার ফিরতে দেরি হলেও চুলায় হাঁড়ি বসাবেন না। এ জন্য সবার কাজ ভাগ করে নিন। ছুটির দিন নতুন বউয়ের জন্য বরাদ্দ করে দিন। বাসায় একজন কাজের সহকারী রাখতে পারেন।

চাকরিজীবী বউ নিয়ে সমস্যাগুলো সাধারণত যৌথ পরিবারে বেশি দেখা যায়। কিন্তু একটু ছাড় দেওয়ার মানসিকতা থাকলেই এই সমস্যা হয় না। এ ক্ষেত্রে স্বামীর বেশি ভূমিকা রাখা দরকার। মনে রাখুন আপনিই তাঁর সবচেয়ে কাছের মানুষ, প্রিয় ব্যক্তি। তাঁর সুবিধা-অসুবিধার জন্য আপনাকে সবার আগে এগিয়ে আসতে হবে। বাড়ির বউ নতুন হলে অনেক কথাই বলতে পারেন না বা এড়িয়ে যান। এই সময় সবাই তাঁকে বোঝার চেষ্টা করুন। ধীরে ধীরে সে সব কিছুতে অভ্যস্ত হয়ে উঠবে। তখন নিজ থেকেই সুবিধা-অসুবিধার কথা বলতে শুরু করবে। এরপর না হয় বউ-শাশুড়ি মিলেই সব কুল সামলে চলুন। দেখবেন দিন শেষে দারুণ ছন্দে কাটতে শুরু করবে সবার জীবন। পরিবারে বইবে সুখের ঢেউ।

 

সূত্রঃ কালের কণ্ঠ