করোনা মোকাবেলায় প্রস্তুত হাসপাতাল, রাজশাহীতে শনাক্তের হার ৩৭.১২ শতাংশ

নিজস্ব প্রতিবেদক:

ওমিক্রনের থাবায় আবারও নাকাল হয়ে যাচ্ছে দেশ। ইতোমধ্যেই করোনা সংক্রমনের দিক থেকে রাজশাহী রেডজোন হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। দিন দিন রাজশাহীতে আক্রান্তের হার ভয়ানকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে।  তাই ‘ওমিক্রন সুনামি’ মোকাবেলায় যথাযথভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পাশাপাশি রাজশাহীতেও ব্যাপক প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে।

রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে- ওমিক্রন মোকাবেলায় রামেক হাসপাতাল পুরোপুরি প্রস্তুত রয়েছে। করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ কমে যাওয়ার কারণে হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে রোগীর সংখ্যাও একেবারেই কমে গিয়েছিলো। কিন্তু গত কয়েকদিন থেকে রামেক হাসপাতালে আক্রান্ত কিংবা সাসপেক্টেড রোগীর সংখ্যা বাড়ছে।

এদিকে শনিবার (২২ জানুয়ারি) করোনা শনাক্তের হার ছিল ৩৭ দশমিক ১২ শতাংশ। শনিবার (২২ জানুয়ারি) রাজশাহীর দুটি পিসিআর ল্যাবে ৩৬৯ জনের করোনার নমুনা পরীক্ষা করে ১৩৭ জনের দেহে করোনা শনাক্ত হয়েছে। সেই হিসেবে শনাক্তের হার ৩৭ দশমিক ১২ শতাংশ। এর মধ্যে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ ল্যাবে ২৭৮ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ৮৮ জনের (৩১ দশমিক ৬৫ শতাংশ) দেহে করোনা শনাক্ত হয়েছে। এছাড়া রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতাল ল্যাবে মোট ৯১ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ৪৯ জনের (৫৩ দশমিক ৮৪ শতাংশ) দেহে করোনাভাইরাসের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় এই দুই ল্যাব থেকে পাঠানো পরিসংখ্যান থেকে এই তথ্য জানা গেছে।

রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী বলেন, ‘করোনার ভারতীয় ধরন ডেল্টা ভেরিয়েন্টের চেয়ে ওমিক্রন ৫ গুণ কম ক্ষমতাসম্পন্ন বলে বলা হচ্ছে। কিন্তু এটি দ্রুত বাতাস কিংবা অন্য কোনো মাধ্যমে ছড়িয়ে যায়। এজন্য এটি সবচেয়ে বেশি ভয়ের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সঙ্গত কারণেই রামেক হাসপাতালের করোনা ইউনিটকে ওমিক্রন মোকাবেলায় প্রস্তুত রাখা হয়েছে। কেননা, হয়তো অদূর ভবিষ্যতে ডেল্টা ভেরিয়েন্টের মত দ্রুত ছড়িয়ে যেতে পারে।’

ওমিক্রন মোকাবেলার প্রস্তুতি সম্পর্কে হাসপাতাল পরিচালক বলেন, হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে প্রায় ৭’শ সেন্ট্রাল অক্সিজেন লাইন রয়েছে। হাইফ্লোনেজাল ক্যানুলা রয়েছে, অক্সিজেন কনসান্ট্রেটর রয়েছে ৩’শ টি। ১ হাজার ৪’শটি অক্সিজেন সিলিন্ডার এবং ২৪টি বাইপেপ রয়েছে। এছাড়া রয়েছে ১ হাজার লিটারের একটি ভিআই ট্যাংক। সেই সাথে ভিআই ট্যাংকটি ৩ হাজার লিটারে উন্নীত করার কাজ চলছে। এক প্রশ্নের জবাবে রামেক হাসপাতাল পরিচালক বলেন, ‘আপাতত করোনা ওয়ার্ডে (২৯ ও ৩০ নং ওয়ার্ড) প্রশিক্ষিত ২টি চিকিৎসক টিম (১৬ জন) কাজ করছে। এছাড়া করোনা ক্যাবিনে ১২ জন ডাক্তার চিকিৎসাসেবা চালিয়ে যাচ্ছেন। এছাড়া পর্যাপ্ত নার্সও সেখানে দক্ষতার সাথে দায়িত্ব পালন করছে। ওমিক্রনের সংক্রমন বেড়ে গেলে সেখানে প্রয়োজন অনুযায়ী ডাক্তার-নার্স সংযোজন করা হবে।’

শামীম ইয়াজদানী বলেন, ‘ওমিক্রনের লক্ষণ দেখে মনে হচ্ছে- রাজশাহীতেও ওমিক্রন হানা দিয়েছে। কেননা- ওমিক্রন আসলে ওইভাবে রোগীকে কাবু করতে পারে না। এজন্য অনেকেরই হাসপাতালের আসার প্রয়োজন হয় না। আমার পরিচিত বেশ কয়েকজনের এমন হয়েছে। তাদের অনেকেই বাড়িতে আইসোলেশনে থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন। কিন্তু রাজশাহীতে ওমিক্রন সনাক্তের ব্যবস্থা না থাকায় আসলে বুঝা যাচ্ছে না যে, তারা এই ভেরিয়েন্টে আক্রান্ত কি-না।’

এদিকে করোনা সংক্রমণের উপসর্গ নিয়ে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের করোনা ইউনিটে আরও দুজন মারা গেছেন। এই দুজনই রাজশাহী জেলার বাসিন্দা। চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত শুক্রবার সকাল ৯টা থেকে শনিবার সকাল ৯টার মধ্যে হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে (আইসিইউ) তারা মারা যান।

রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী এসব তথ্য নিশ্চিত করে জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় রামেক হাসপাতালে করোনা সংক্রমণে কোনো রোগী মারা যাননি। তবে করোনা উপসর্গ নিয়ে গেছেন ২ জন। তাদের মধ্যে একজন পুরুষ। তার বয়স ৬১ বছরের ওপরে। অন্যজন নারী। তার বয়স ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে। তারা দুজনই রাজশাহী জেলার বাসিন্দা। করোনা সংক্রমণের উপসর্গ নিয়ে তারা হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি ছিলেন।

অপরদিকে এদিকে ১০৪ শয্যার রামেক করোনা ইউনিটে শনিবার সকাল ৯টা পর্যন্ত রোগী ভর্তি ছিলেন ৪৩ জন। এক দিন আগেও এই সংখ্যা ছিল ৫৮। বর্তমানে রাজশাহীর ২৫ জন, চাঁপাইনবাবগঞ্জের ৬ জন, নওগাঁর ৩ জন, নাটোরের ২ জন, পাবনার ৩ জন, কুষ্টিয়ার একজন এবং জয়পুরহাটের ৩ রোগী হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। হাসপাতালে করোনা নিয়ে ভর্তি রয়েছেন ৩০ জন। এক দিন আগেও এই সংখ্যা ছিল ৩৯। হাসপাতালে করোনা উপসর্গ নিয়ে ভর্তি রয়েছেন ৭ জন। করোনা ধরা পড়েনি ভর্তি ৬ জনের। এ ছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় ভর্তি হয়েছেন একজন। এই এক দিনে সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছেড়েছেন ১৬ জন রোগী।

এএইচ/এস