বাংলাদেশে বিভিন্ন হাসপাতালে কোভিড-১৯-এর চিকিৎসার সাথে জড়িত সকল স্বাস্থ্যকর্মীদের অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে নিয়মিত করোনাভাইরাসের পরীক্ষা হওয়ার কথা থাকলেও বিভিন্ন হাসপাতালে কর্মরত নার্সদের কাছ থেকে অভিযোগ আসছে যে তাদের ক্ষেত্রে প্রায়শই দেরি হচ্ছে।
সরাসরি রোগীদের সংস্পর্শ এলেও তারা অগ্রাধিকার পাচ্ছেন না। তাদের জন্য ভিন্ন কোন ব্যবস্থা নেই। কেউ আক্রান্ত হলে হাসপাতালে ভর্তির ক্ষেত্রেও একই অভিযোগ করছে বাংলাদেশ নার্সেস এসোসিয়েশন।
টেস্টের ক্ষেত্রে বৈষম্য
ঢাকায় কোভিড-১৯-এর জন্য নির্ধারিত একটি হাসপাতালের একজন নার্সের সাথে কথা হচ্ছিল টেলিফোনে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এই সেবিকা বলছেন চিকিৎসকদের তুলনায় নার্সদের কোভিড-১৯ রোগীদের অনেক বেশি কাছে যেতে হয়।
তিনি বলছেন, “একটা ইনজেকশন দিতে গেলে তাকে টাচ করতে হয়। এক ফুট দূরত্বও থাকে না। থার্মোমিটার দিয়ে রোগীর তাপমাত্রা নিতে হয়, তার শরীরে ক্যানোলা লাগাতে হয়, তার প্রেশার ও পালস দেখতে হয়, সাকশন করতে হয়। এইগুলো করতে গেলে কতটা কাছে যেতে হয় আপনি চিন্তা করেন।”
টানা দশদিন কাজ করার পর ১৪ দিনের জন্য কোয়ারেন্টিনে যাওয়ার আগে পরীক্ষার নমুনা দিতে তার যে অভিজ্ঞতা হয় তার বর্ণনা করে তিনি বলছেন, “টেস্টের ক্ষেত্রে আমাদের অনেক বৈষম্যের শিকার হতে হচ্ছে। আমরা যে এই পেশায় নিয়োজিত, আমরা যে এই সেবা দিচ্ছি সেজন্য আমাদের যে আলাদা সুবিধা দেবে সেটা নেই। আমাদের অন্য সব রোগীর সাথে ঝুঁকি নিয়ে লাইনে দাঁড়িয়ে নমুনা দিতে হয়। নমুনা পরীক্ষায় একই ব্যাপার।”
তিনি বলছেন, যে হাসপাতালে তিনি কাজ করছেন সেখানে এমনকি তাকে অন্য আর সব রোগীর মতো হটলাইনে ফোন দিয়ে নমুনা পরীক্ষার সময় নিতে হচ্ছে।
বাংলাদেশ নার্সেস এসোসিয়েশন বিএনএ-র দেয়া তথ্যমতে দেশে মোট ১৫১৭ জন নার্স কোভিড-১৯-এ আক্রান্ত হয়েছেন।
যদিও চিকিৎসকদের সংগঠন বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশনের হিসেবের সাথে এই সংখ্যার বড় পার্থক্য রয়েছে। বিএমএ-র দেয়া সংখ্যা ৯৩৮ জন।
বিএনএ বলছে, কাছাকাছি সময়ে রোগীর চাপ বেড়ে যাওয়া এবং অনেক নার্স আক্রান্ত হওয়ার কারণে সাধারণ রোগের সেবার সাথে নিযুক্ত নার্সদেরও কোভিড-১৯ সেবায় যুক্ত করা হচ্ছে।
বিএনএ বলছে, সেই হিসেবে সারা দেশের সরকারি হাসপাতালের ৩৮ হাজার নার্সদের সবাইকেই এখন কোন না কোন সময়ে কোভিড-১৯ রোগীদের চিকিৎসায় যুক্ত করা হচ্ছে।
বিএনএ-এর সভাপতি ইসমত আরা পারভিন বলছেন তার কাছে সারা দেশ থেকে নার্সরা অনেক অভিযোগ করছেন। তিনি বলছেন, “তারা ফ্রন্ট-লাইন যোদ্ধা। তাদের অগ্রাধিকার পাওয়া উচিত। বেশিরভাগ সময় তারা তা পাচ্ছেন না। সারা দেশ থেকে নার্সরা অভিযোগ করছে।”
তিনি বলছেন, “ইতিমধ্যে ডাক্তারদের জন্য ডেডিকেটেড হসপিটাল বানানো হয়েছে। ডাক্তারদের জন্য হোক এটা আমরাও চাই। কিন্তু নার্সরাও যেভাবে আক্রান্ত হচ্ছে তাদের পরীক্ষা ও চিকিৎসার জন্য কোন অগ্রাধিকার নেই। আমরা অনেক আক্রান্ত নার্সকে হাসপাতালে ভর্তি পর্যন্ত করাতে পারছি না। অনেক নার্স ভর্তি হতে না পেরে বাসায় চিকিৎসা নিচ্ছেন।”
পরীক্ষার ক্ষেত্রেও অনেক ভুল হচ্ছে বলে তিনি জানিয়েছেন। তিনি বলছেন, “এমনও হয়েছে একজন নার্স পরীক্ষার ফল নেগেটিভ পেয়ে বাসায় গেছে, এরপর তার পুরো পরিবার আক্রান্ত হয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জবাব
বাংলাদেশে এমনিতেই স্বাস্থ্যকর্মীর অভাব রয়েছে। কোভিড ১৯ রোগীর চাপ বেড়ে যাওয়ায় খুব দ্রুততার সাথে পাঁচ হাজারের বেশি নার্স নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তাদের সুরক্ষায় অবহেলার অভিযোগ এর আগেও উঠেছে। বিশেষ করে সুরক্ষা সামগ্রী বণ্টনের ক্ষেত্রে।
যদিও সুরক্ষা সামগ্রীর সমস্যার সমাধান হয়েছে কিন্তু আরও অনেক অভিযোগ করছে নার্সদের সংগঠন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হাসপাতাল বিষয়ক পরিচালক আমিনুল হাসান বলছেন, কোভিড-১৯ রোগীদের চিকিৎসা সেবায় নিয়োজিতদের নিয়মিত পরীক্ষা করতে হবে এমন নিয়ম তারা করেননি। যদিও বিএনএ বলছে ভিন্ন কথা।
আমিনুল হাসান বলছেন, তার কাছে নার্সদের কাছ থেকে কোন অভিযোগ আসেনি।
তিনি বলছেন, “আলাদা কোন সেটআপ তৈরি করা হয়নি। এখন যেসব স্যাম্পল কালেকশনের বুথ রয়েছে সেখান থেকেই নমুনা নেয়া হচ্ছে। হাসপাতাল ভিত্তিক নমুনা সংগ্রহ চলছে। যে নার্স যেখানে কর্মরত, শুধু নার্স না সেখানে যতরকম কর্মী আছে তাদের সকল সেবার অগ্রাধিকার দেয়ার কথা আছে। আমাদের কাছে এরকম কোন সুনির্দিষ্ট অভিযোগ নিয়ে কেউ আসেনি।”
এই কর্মকর্তা বলছেন তারা বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন। বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর থেকে স্বাস্থ্যখাতের নানা দুর্বলতা প্রকাশিত হয়েছে। কোভিড ১৯-এর চিকিৎসায় ব্যবস্থাপনা নিয়ে উঠেছেন নানা অভিযোগ।
নার্সদের এই অভিযোগের মাধ্যমে তার তালিকায় নতুন আর একটি অভিযোগ যুক্ত হল।
সূত্রঃ বিবিসি বাংলা