করোনা ট্র্যাজেডি: বেকায়দায় প্রাইভেট শিক্ষকরা

শাহিনুল আশিক:

করোনাভাইরাসের কারণে শুধু খাওয়া-দাওয়া ছাড়া দেশের সবকিছুই বন্ধ। বন্ধ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বন্ধ মেস। কিন্তু ভাড়া রানিং। বাকি পড়েছে টিউশন (প্রাইভেট) ফি। এমন অবস্থায় অনেকটাই অসহায় প্রাইভেট শিক্ষকরা। এনিয়ে অনেকেই মানবতর জীবন যাবন করছেন। সবচেয়ে বেশি বেকায়দায় যাদের প্রাইভেট পড়ানো টাকায় নিজে ও পরিবারকে চালাতে হয়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক প্রাইভেট শিক্ষক বলেন, নিজে লেখাপড়া করি। নিজের খরচ প্রাইভেট পড়ানো থেকে আসে। বাড়ি ছোট দুই বোন পড়া-শোনা করে। বাবা কৃষি কাজ করে। নিজের খরচ চালানো পরেও তাদের টাকা পাঠাতে হয়।

তিনি আরও বলেন, সামনে ঈদ। তাই খরচের বিষয় আছে। সবমিলে কি করবো কিছুই বঝতে পারছি না। তার পরেও আবার মেস ভাড়া। মেস মালিক কয়েকদিন আগে ফোন দিয়েছিল। বলেছি কিছু দিন দেরি হবে টাকা দিতে।

গত কয়েকদিন আগে করোনাভাইরাসের এমন অবস্থায় সরকারের প্রণোদনার দাবি করেছেন প্রাইভেট শিক্ষকরা। সম্প্রতি এনিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে শিক্ষকরা লেখা-লেখি করছেন।

এসএ আতিক নামের একজন ফ্রিল্যান্স শিক্ষক গত ১৩ এপ্রিল লেখেছেন- ‘যারা টিউশনি করে চলেন, চাকরি-প্রার্থী তাদের বাসা ভাড়া সরকারের পক্ষ থেকে পেমেন্ট করার দাবি জানাচ্ছি। প্রণোদনা তো অনেক টাকাওয়ালাদেরকেই দিচ্ছেন। বেকারদের জন্যও কিছু করুন।’ তার এমন স্ট্যাটাসের প্রক্ষিতে অনেক প্রাইভেট শিক্ষক কমেন্ট করেছেন। এই কমেন্টে উঠে এসেছে প্রাইভেট শিক্ষকদের মানবতর জবীনযাপনের কথাগুলো।

ফেসবুক কমেন্টগুলো তুলে ধরা হলো- কমেন্টে জান্নাতুন ফেরদৌস লেখেছেন- ‘৩টা টিউশনি থেকে ৩ট্যাকাও দেয়নাই গতমাসের পেমেন্ট ১৮-১৯ তারিখ পর্যন্ত পড়াইছি।’ অনকিট লেখেছেন- ‘টিউশন বাসায় ফোন তোলে না, আর বাড়িওয়ালা দিনে ৩-৪ বার ফোন করে।’

ফারহানা সুলতনা বলেন, এই সময়ে টিউশন করে চলা মানুষগুলো ই বেশি কষ্টে আছে। আবার আগামী মাসে টিউশন না করলে টাকা ও পাওয়া যাবে না। আবার এর মধ্যে কয়েকটা সার্কুলার ও দিয়েছে বেকারদের সাথে টা তামাশা হয়ে যায়। অনেক অভিভাবক নিজেদের সমস্যা দেখাচ্ছেন উনারা চাকুরী করেন বন্ধ থাকলে ও একাউন্টে টাকা যাবে যাদের টিউশনটা ও সম্বল তাদের তো আর টাকা সরকার দিবে না।

ই ব্রা হী ম লেখেছেন- স্যার এখন বাড়ি আছি,,বাট কতো মাসের যে বাসা ভাড়া দিতে হবে আল্লাহ ই জানে। টিউশনিও নাই।

প্রাইভেট শিক্ষক এএইচ মামুন বলেন, এপ্রিলের ১৫ তারিখের মধ্যে বাসা ভাড়া দিতে বলছে। টিউশন নেই এইমাসে।গত মাসের বেতনও হাতে পেলামনা। কেমন করে কি করব কিছুই বুঝতেছিনা।

রাজশাহী মেস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেন বলেন, মেসের ভাড়ার বিষয়ে আমরা মালিকরা বসেছি। তবে এখনো কোন সিন্ধান্ত হয়নি। ভাড়ার বিষয়টি আমরা বিবেচনা করবো। তিনি আরো বলেন, মেস বন্ধ।

তিনি আরও বলেন, কিন্তু বিদ্যুৎ বিল, গার্ড, সাইপার সবার বেতন দিতে হচ্ছে আমাদের। কোন কোন মেস মালিককে এই ভাড়ার টাকায় সংসার চালাতে হয়। এছাড়াও আরো খবর আছে। মেসে শিক্ষার্থীরা আসলে তাদের নিয়ে বসে একটা সিন্ধান্ত নেওয়া হবে। এটাও হতে পারে, যার তিন মাসের ভাড়া বাকি, তার এক মাসের ভাড়া বাদ দেওয়া হলো। তবে এখনও সেই সিদ্ধান্ত হয়নি।

 

স/আ