করোনা জয় করে বাড়ি ফিরলেন গোপালগঞ্জের ১০১ বছরের খবিরুন্নেছা

সারা বিশ্ব এখন ভুগছে করোনাভাইরাস আতঙ্কে, সংক্রমিত হচ্ছে লাখ লাখ মানুষ। প্রতিনিয়ত করোনাভাইরাসে আক্রন্ত হয়ে মারা যাওয়ার খবর শোনা যাচ্ছে চারিদিকে। এরই মাঝে আশার আলো দেখালেন দেশের রেড জোনের অন্তর্ভুক্ত জেলা গোপালগঞ্জের শতবর্ষীয় নারী খবিরুন্নেসা। তিনি গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার চন্দ্রদিঘলীয়া গ্রামের মৃত আলতাফ ভূইয়ার স্ত্রী।

খবিরুন্নেসার বর্তমান বয়স ১০১ বছর। করোনা জয় করে চিকিৎসা শেষে গোপালগঞ্জের বাড়িতে ফিরেছেন করোনা জয়ী এই নারী। তিনি বর্তমানে মেয়ে সেলিনা জাকিরের বাড়িতে কোয়ারেন্টাইনে আছেন। মায়ের সঙ্গে যিনি নিজেও আক্রান্ত হয়েছিলেন করোনায়। সুস্থ হয়ে সেলিনা এখন মায়ের সেবা করছেন নিয়মিত।

জানা যায়, ত্ব‌কের ক্যান্সার, হৃদরোগসহ নানা রোগে আক্রান্ত খবিরুন্নেসার স্বামী ২০ বছর ও বড় ছেলে দুই বছর আগেই মারা গেছেন। বাকি তিন ছেলে থাকেন আমেরিকাতে। আর দেশে আছেন তিন মেয়ে। মেয়েদের কাছেই তিনি থাকেন। উন্নত চিকিৎসার জন্য গত মাসে শুরুর দিকে ঢাকার উত্তরা মেয়ের বাসায় যান। গত ১৩ মে তার মেয়ে সেলিনা জাকির (৪৮) ও নাতী তামিমের করোনা পজেটিভ আসে। তাদেরকে ভর্তি করা হয় ঢাকার উত্তরার রিজেন্ট হাসপাতালে।

করোনা রোগীদের সংস্পর্শে থাকায় সেখান থেকেই শরীরে করোনা ভাইরাসের উপসর্গ দেখা দেয় খবিরুন্নেসার। এরপর গত ১৫ মে বাসা থেকে নমুনা সংগ্রহ করে রিজেন্ট হাসপাতালে পরীক্ষার জন্য দিলে ১৯ মে খবিরুন্নেসার করোনা রিপোর্ট পজেটিভ আসে। পরে ঢাকার রিজেন্ট হাসপাতালে পরিবারের অন্য সদস্যদের সাথে তাকেও ভর্তি করা হয়। এসময় তার ছোট মেয়ে শাহানাজ (৪২)-এর করোনা পজেটিভ আসে। এরপর তাকেও ওই হাসপাতালের আইসোলেশনে রেখে চিকিৎসা দেয়া হয় ।

খবিরুন্নেসার মেয়ে সেলিনা জাকির বলেন, আমরা চারজনই করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলাম। আমার মাকে হৃদরোগের কারণে রিং পরাতে হয়েছিল। একবার পিত্তথলিতে পাথর হওয়ায় অপারেশনের টেবিলেও নিতে হয়েছিল তাকে। এছাড়া তার আছে স্কিন ক্যান্সার। এত কিছুর পরেও করোনার বিরুদ্ধে লড়াই করে তিনি ফিরে এসেছেন আমাদের মাঝে।

তিনি জানান, খবিরুন্নেসা বাংলাদেশের হাজার হাজার রোগীর জন্য অনুপ্রেরণার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছেন- এমনটি বলছিলেন হাসপাতালের চিকিৎসকরা। এটি একটি বিরল ঘটনা। করোনা যে তার গতি প্রকৃতি পাল্টাচ্ছে প্রতিনিয়ত এটি তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ। আর গ্রামের মানুষ বলছেন মানুষের দোয়া এবং ভালোবাসার জোরে ফিরে এসেছেন তিনি।

সেলিনা জাকির আরও বলেন, গত ৩০ মে ও ১ জুন পুনরায় পরীক্ষা করলে দুইবার আমার মায়ের নমুনা রিপোর্ট নেগেটিভ আসে। চিকিৎসার পাশাপাশি মনোবল ও আত্মবিশ্বাসই পারে নিজেকে ফিরে পাওয়ার সাহস ও শক্তি। করোনা জয় করে সুস্থ হয়ে হাসপাতাল থেকে তিনি বাড়ি আসায় আমরা অনেক আনন্দিত।

গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার চন্দ্রদিঘলিয়া গ্রামের বাসিন্দা নাসিম ভূইয়া বলেন, এটি একটি বিরল ঘটনা। করোনা যে তার গতি প্রকৃতি পাল্টাচ্ছে প্রতিনিয়ত এটি তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ। তাছাড়া মানুষের দোয়া এবং ভালোবাসার জোরে ফিরে এসেছেন তিনি। সারা জীবন দান-খয়রাত এবং মানুষের ভালোবাসা তাকে ফিরিয়ে দিয়েছে আবার মানুষের কাছে।

গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের সহকারি পরিচালক ডা.অসিত কুমার ম‌ল্লিক বলেন, করোনার সংক্রমণের আশঙ্কা এবং আতঙ্ক যেমন রয়েছে, তেমন একইভাবে সংক্রামিত হওয়ার পর চিকিৎসায় সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরার সংখ্যাটাও কিন্তু ক্রমশ বাড়ছে। তাই অযথা আতঙ্ক নয়। সাবধানে থাকুন, সুস্থ থাকুন। বিধিনিষেধ মেনে চলুন। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখুন। বাইরে বের হলে মাস্ক পরুন। মাস্ক না থাকলে ওড়না, রুমাল, মোটা কাপড় দিয়ে নাক-মুখ ঢেকে বের হন।

তিনি আরও বলেন, শতবর্ষী এক বৃদ্ধা নারী করোনা জয় করে ফিরলো, এতে বোঝা গেলো করোনায় যে কোনও বয়সের লোক আক্রান্ত হলে ভয়ের কিছু নেই। যারা সামনে থেকে চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছে তাদের মনোবল বৃদ্ধি পেল। সূত্র: বাংলাদেশ প্রতিদিন