করোনার ধকল কাটিয়ে পণ্য ওঠানামায় রেকর্ড

৩২ লাখ ১৪ হাজার একক কনটেইনার ওঠানামা করে নতুন রেকর্ড করেছে চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর। এর আগে চট্টগ্রাম বন্দরের সর্বোচ্চ কনটেইনার ওঠানামা হয়েছিল ২০১৯ সালে; পরিমাণ ছিল ৩০ লাখ ৮৫ হাজার একক। কিন্তু করোনা মহামারির ধাক্কায় ২০২০ সালে কনটেইনার ওঠানামা কমে ২৮ লাখে নেমেছিল। সেই ধকল কাটিয়ে এই প্রথম এত বেশি কনটেইনার ওঠানামা করে দেখাল দেশের প্রধান বন্দর।

২০২০ সালের তুলনায় ২০২১ সালে কনটেইনার ওঠানামার প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৩ শতাংশের সামান্য বেশি। সাধারণ পণ্য ওঠানামার প্রবৃদ্ধিও ছিল ১৪ শতাংশ। প্রবৃদ্ধি বেশি হওয়ায় বিশ্বের শীর্ষ ১০০ বন্দরের তালিকায় এবার বেশ এগিয়ে আসবে চট্টগ্রাম বন্দর—এমন আশা বন্দর কর্তৃপক্ষের।

জানতে চাইলে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এম শাহজাহান বলেন, ‘করোনা মহামারির শুরু থেকেই পুরোদমে সচল ছিল চট্টগ্রাম বন্দর। কাজটি করতে গিয়ে আমাদের অনেক কর্মীকে হারাতে হয়েছে। এর পরও বন্দর এক মুহূর্তের জন্য বন্ধ থাকেনি। বিশ্বের অন্য দেশের মতো আমদানি-রপ্তানি কমে গিয়েছিল। এতে ২০২০ সালে বিশ্বের সেরা বন্দরের তালিকায় আমরা পিছিয়ে ছিলাম। এবার নিঃসন্দেহে আমরা হারানো স্থান ফিরে পাব; সেই সঙ্গে আরো কয়েক ধাপ আগাব আশা করছি।’

বন্দর কর্তৃপক্ষ বলছে, মূলত করোনা মহামারির ধাক্কায় চট্টগ্রাম বন্দরে পণ্য ওঠানামা অনেক কমেছিল ২০২০ সালে। সে বছর পণ্য ওঠানামা হয়েছিল ২৮ লাখ ৩৯ হাজার একক; সে বছর নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি হয়েছে এই বন্দরে। কিন্তু করোনা শুরুর আগে ২০১৯ সালে এই বন্দরে পণ্য ওঠানামা রেকর্ড ছুঁয়েছিল, যার পরিমাণ ৩০ লাখ ৮৫ হাজার একক কনটেইনার। আর ২০২১ সালে পণ্য ওঠানামার সর্বকালের রেকর্ড ছুঁয়েছে, যার পরিমাণ ৩২ লাখ ১৪ হাজার একক। ২০১৯ সালের তুলনায় ২০২১ সালে প্রবৃদ্ধি হয়েছে প্রায় ৪ শতাংশ।

বন্দরের চেয়ারম্যান বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাহসী নেতৃত্বে অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের চ্যালেঞ্জিং সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের সুফল আমরা ২০২১ সালে পেয়েছি। করোনার ধাক্কা কাটিয়ে বাংলাদেশ যে আগের অর্থনীতির গতিতে ফিরেছে, এর বড় প্রমাণ চট্টগ্রাম বন্দরের পণ্য ওঠানামা। বন্দর ব্যবহারকারী, বন্দরের সব কর্মকর্তা-কর্মচারীর অক্লান্ত প্রচেষ্টার ফসল এই অর্জন।’

জানতে চাইলে চট্টগ্রাম চেম্বারের সভাপতি মাহবুবুল আলম বলছেন, ‘২০২১ সালে চট্টগ্রাম বন্দরের নিরবচ্ছিন্ন সেবা করোনার ধকল কাটিয়ে উঠতে আমাদের সহায়তা করেছে, কোনো সন্দেহ নেই। বন্দর সচল না থাকলে আমরা এত দ্রুত এগোতে পারতাম না। দেশের অর্থনীতি যে হারে এগোচ্ছে, চট্টগ্রাম বন্দরকে এগিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা সেভাবে হচ্ছে না। সে জন্য আমরা আশাহত। আগামীর বন্দর হিসেবে পরিচিতি পাওয়া বে টার্মিনালের কোনো গতি এখনো হয়নি, যেটা দুঃখজনক।’

২০২১ সালের পুরো বছরই চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহারকারীদের জন্য ভালো সময় ছিল। বহির্নোঙরে পৌঁছার পর একটি কনটেইনার জাহাজ সাধারণত দুই থেকে তিন দিন অপেক্ষার পরই জেটিতে ভিড়তে পারত। এটা অনেকটা স্বাভাবিকই ছিল জাহাজ পরিচালনাকারীদের জন্য। কিন্তু ২০২১ সালের শেষ পাঁচ মাসে চট্টগ্রাম বন্দরে বেশির ভাগ কনটেইনার জাহাজ জেটিতে ভিড়তে সময় নিয়েছে শূন্য দিন অর্থাৎ অন অ্যারাইভাল বার্থিং পেয়েছে জাহাজগুলো। অথচ ট্রান্সশিপমেন্ট বন্দরে একটি কনটেইনার জাহাজ ভিড়তে এক সপ্তাহের বেশি সময় লাগছিল। এর ধকল অবশ্য পড়েছিল চট্টগ্রাম বন্দরে, কিন্তু ব্যবহারকারীদের সঙ্গে বসে নতুন কৌশল রপ্ত করে দ্রুত বিষয়টির সমাধান করেছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। এর ফলে খুব বেশি বেগ পেতে হয়নি বন্দর ব্যবহারকারীদের।

জানতে চাইলে জেএসি গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শিমুল মজুমদার বলেন, ‘রেকর্ড দেখে আমাদের খুশির কিছু নেই। আমাদের খুশির বিষয় হচ্ছে, কত দ্রুত একটি জাহাজ থেকে কনটেইনার নামাতে পারলাম, কত দ্রুত পণ্যটি জাহাজীকরণ করতে পাররাম। সেদিক থেকে আমরা বেশ স্বস্তিতে ছিলাম। করোনার ধাক্কা অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গেই মোকাবেলা করেছে চট্টগ্রাম বন্দর, কোনো সন্দেহ নেই। আর এতে আন্তরিকভাবে বন্দর ব্যবহারকারীরা কাজ করায় এই অর্জন সম্ভব হয়েছে। আমরা এই অর্জন ধরে রেখে এগোতে চাই।’

 

সূত্রঃ কালের কণ্ঠ