করোনাভাইরাস চীনের স্বেচ্ছাচারিতার ফসল

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

চীনের উহান শহর থেকে ছড়িয়ে পড়া নতুন করোনাভাইরাস ইতিমধ্যে চার হাজারের বেশি মানুষের মধ্যে সংক্রমিত হয়েছে—এদের বেশির ভাগ হচ্ছে চীনে। তবে থাইল্যান্ড থেকে ফ্রান্স পর্যন্ত এবং যুক্তরাষ্ট্রেও বহু মানুষ এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে এবং শতাধিক মানুষ মারা গেছে। চীনের ইতিহাসে সার্স এবং আফ্রিকান সোয়াইন জ্বরসহ বিভিন্ন প্রাণঘাতী রোগের প্রাদুর্ভাবের ঘটনা আছে। এবং এ কারণে চীনা কর্মকর্তাদের ‘বড় ঝুঁকি’ শনাক্ত করার জন্য তাঁদের দক্ষতা জোরদার করা প্রয়োজন। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, কীভাবে তা ঘটতে পারে। এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই যে চীনে আবার ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ঘটতে যাচ্ছে। নিজের কর্তৃত্ব বজায় রাখতে চীনের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিসি) সব সময় জনগণকে এটা বোঝানোর চেষ্টা করে যে সবকিছু পরিকল্পনা অনুযায়ী চলছে। এর অর্থ হচ্ছে যেসব বিষয়ে সাড়া দেওয়া প্রয়োজন, তা না করে সিপিসির নেতৃত্বের প্রতি খারাপ প্রতিক্রিয়া হতে পারে এমন কেলেঙ্কারি এবং ঘাটতিগুলো পদ্ধতিগতভাবে গোপন করা।

এই গোপনীয়তার কারণে মহামারিগুলোতে দ্রুত প্রতিক্রিয়া জানাতে কর্তৃপক্ষের সামর্থ্যকে বাধা দেয়। স্বাস্থ্যমন্ত্রীসহ চীনা কর্মকর্তারা জনগণের কাছ থেকে ইচ্ছাকৃতভাবে তথ্য গোপন না রাখলে ২০০২-০৩ সালের সার্স মহামারির বিস্তার খুব দ্রুতই রোধ করা যেত। তবু চীন ওই ঘটনা থেকে শিক্ষা নেয়নি বলে মনে হচ্ছে। যদিও আজকের করোনাভাইরাসের মহামারি এবং সার্সের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য রয়েছে—তারপরও হতে পারে সিপিসি করোনাভাইরাস নিয়েও গোপনীয়তা অবলম্বন করছে। সিপিসির গোপন করার অভ্যাসের বিষয়টি আমাদের ভুলে গেলে চলবে না।

প্রথম নজরে, চীন সরকারকে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব সম্পর্কে আরও তথ্য জানতে আগ্রহী বলে মনে হয়েছে। তবে এ-সংক্রান্ত প্রথম খবরটি গত ৮ ডিসেম্বর প্রকাশিত হওয়ার বেশ কয়েক সপ্তাহ পর্যন্ত উহান পৌর স্বাস্থ্য কমিশন কোনো সরকারি নোটিশ জারি করেনি। এবং তারপর থেকে উহান শহরের কর্মকর্তারা এই রোগের ভয়াবহতাকে তুচ্ছ করে ইচ্ছাকৃতভাবে এ-সংক্রান্ত সংবাদ প্রকাশকে দমন করার চেষ্টা করেছেন। পৌর স্বাস্থ্য কমিশন পরে যে নোটিশ জারি করে তাতে বলা হয়, নতুন ভাইরাস মানুষের মধ্যে সংক্রমিত হতে পারে—এমন কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি এবং দাবি করা হয় যে কোনো স্বাস্থ্যকর্মী এ ভাইরাসে আক্রান্ত হননি। পৌর স্বাস্থ্য কমিশন ৫ জানুয়ারি একই কথা বলে যদিও, তত দিনে ৫৯ জন মানুষ এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। এমনকি ১১ জানুয়ারি এই ভাইরাসে আক্রান্ত প্রথম ব্যক্তির মৃত্যুর পরও কমিশন জোর দিয়ে বলেছিল যে এটি মানুষের মধ্যে সংক্রমণ হতে পারে বা স্বাস্থ্যকর্মীরা আক্রান্ত হয়েছেন এমন কোনো প্রমাণ নেই।

এই কঠিন সময়েও করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের খুব কম সংবাদ প্রকাশিত হয়। সরকার নাটকীয়ভাবে ইন্টারনেট, মিডিয়া এবং নাগরিক সমাজের ওপর কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করে এবং এই রোগ সম্পর্কে ‘গুজব’ ছড়ানোর জন্য পুলিশ জনগণকে হয়রানি করেছে। একটি সমীক্ষা অনুসারে, চীনের জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম উইচ্যাটে ৩০ ডিসেম্বর থেকে ৪ জানুয়ারির মধ্যে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের উল্লেখ ছিল। ওই সময়টায় উহান পৌর স্বাস্থ্য কমিশন প্রথমবারের মতো এই প্রাদুর্ভাবকে স্বীকার করে নিয়েছিল। তবে পরে তারা এ নিয়ে আস্তে আস্তে কথা বলা বন্ধ করে দেয়।

১১ জানুয়ারি প্রথম মৃত্যুর খবর প্রকাশিত হলে নতুন করোনাভাইরাস সম্পর্কে আলোচনা সামান্য বাড়ে। তবে আবার তা দ্রুত আবার অদৃশ্য হয়ে যায়। পরে ২০ জানুয়ারির পর যখন উহান, বেইজিং ও গুয়াংদংয়ে ১৩৬ জনের আক্রান্ত হওয়ার খবর প্রকাশ পেল, তখন সরকার সেন্সরশিপের প্রচেষ্টা থেকে সরে আসে। চীনা কর্তৃপক্ষ তখন থেকে তার কৌশলে পরিবর্তন এনেছে এবং এখন তাদের কৌশল হচ্ছে এই রোগটিকে তারা কতটা গুরুত্বসহকারে গ্রহণ করছে তা দেখানো। যেমন হুবেই প্রদেশের উহান এবং পার্শ্ববর্তী শহরগুলোতে সরকার ভ্রমণ নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। এই দুটি শহরের জনসংখ্যা প্রায় সাড়ে ৩ কোটি।

এই মুহূর্তে এটা অস্পষ্ট যে কোন ধরনের পদক্ষেপ এখন বেশি প্রয়োজন বা কার্যকর হবে। তবে যা স্পষ্ট তা হলো, চীনের স্বেচ্ছাচারিতার ফলে এখন হাজার হাজার মানুষ এই ভাইরাসে আক্রান্ত হবে। এতে শত শত লোক মারা যাবে এবং বাণিজ্যযুদ্ধের ফলে ইতিমধ্যেই দুর্বল হয়ে পড়া চীনের অর্থনীতির ওপর আবার বড় ধরনের আঘাত আসবে। চীনের নেতারা শেষ পর্যন্ত বর্তমান প্রাদুর্ভাবের বিরুদ্ধে বিজয় ঘোষণা করলে তারা নিঃসন্দেহে সিপিসির নেতৃত্বকে এর কৃতিত্ব দেবে। তবে সত্যটি ঠিক তার বিপরীত: দলটি আবার চীনের এই দুর্যোগের জন্য দায়ী।

ইংরেজি থেকে অনূদিত। স্বত্ব: প্রজেক্ট সিন্ডিকেট

মিনসিন পেই চীন প্রজাতন্ত্রের সুশাসন বিষয়ে একজন বিশেষজ্ঞ