করোনাকালে ননএমপিও শিক্ষকদের সুদমুক্ত ঋণ দেয়ার দাবি

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

করোনাকালে প্রধানমন্ত্রীর কাছে ননএমপিও শিক্ষকদের জন্য সুদমুক্ত ঋণ দেয়ার দাবি জানিয়েছেন মো. আসাদুজ্জামান নামে একজন  শিক্ষক। তিনি রাজধানীর উত্তরার ননএমপিও বি সি আই কলেজের অধ্যক্ষ। শনিবার (২ মে) প্রধানমন্ত্রী বরাবর লেখা একটি খোলা চিঠিতে এ দাবি জানান তিনি। চিঠিটি পাঠিয়েছেন এ শিক্ষক।

চিঠিতে তিনি জানান, বাংলাদেশের সরকারি ও এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি জাতি গঠনে কাজ করছে কয়েক হাজার ননএমপিও বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের লাখ লাখ শিক্ষক-কর্মচারী। যাদের একমাত্র আয়ের উৎস শিক্ষার্থীদের থেকে প্রাপ্ত টিউশন ফি। এর মধ্যে অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানই ভাড়া বাড়িতে অবস্থিত। যেহেতু করোনা পরিস্থিতিতে আয়ের পথ সীমিত তাই অভিভাবকরা এ মুহূর্তে ছেলেমেয়েদের শিক্ষা ব্যয় বহন করতে পারছেন না। কাজেই, শিক্ষার্থীদের থেকে প্রাপ্ত টিউশন ফি আদায় না হওয়ার কারণে এসব শিক্ষক-কর্মচারীরা প্রতিষ্ঠানের বাড়ি ভাড়া, শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন এবং অন্যান্য ব্যয় নির্বাহ করতে পারছে না প্রতিষ্ঠান প্রধানরা।

তিনি আরও জানান, প্রায় দুই মাস যাবৎ দেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। ফলে বর্তমানে শিক্ষক-কর্মচারীরা পরিবার পরিজন নিয়ে অত্যন্ত মানবেতর জীবনযাপন করছে। রমজান মাস চলছে। সামনে পবিত্র ঈদ-উল-ফিতর। এ মুহূর্তে শিক্ষক-কর্মচারীরা না পারছে কারও কাছে হাত পাততে, না পারছে পরিবারের ন্যূনতম চাহিদা পূরণ করতে। তাই যতদিন প্রতিষ্ঠান খোলার অবস্থা তৈরি না হবে, ততদিন পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানের ব্যয় নির্বাহ করতে সুদমুক্ত ঋণ (প্রণোদনা) চান এ শিক্ষক।

দৈনিক শিক্ষার পাঠকদের জন্য অধ্যক্ষ মো. আসাদুজ্জামানের চিঠিটি তুলে ধরা হলো।

ননএমপিও বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানদের পক্ষ থেকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার নিকট খোলা চিঠি।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী,

আস্সালামু আলাইকুম। শুরুতেই সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙ্গালি, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী তথা মুজিববর্ষের শুভেচ্ছা রইলো। আমরা যখন অত্যন্ত আনন্দ এবং ভাব-গাম্ভীর্যপূর্ণভাবে জাতির জনকের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনের প্রস্তুতি শেষ করেছি, ঠিক সেই মুহূর্তে জাতির জীবনে নেমে আসে করোনা নামের এক ভয়ঙ্কর দুর্যোগ। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো মহামারি করোনা আঘাত হানে আমাদের দেশেও। আপনার দক্ষ নেতৃত্বে সাজানো সব কিছু এলোমেলো হওয়ার আগেই আপনারই সময়োপযোগী পদক্ষেপে এ ঘাতক ব্যাধি চরম আকার ধারণ করতে পারেনি।

বিশ্বের অন্যান্য উন্নত দেশ করোনায় কাবু হলেও আল্লাহর রহমত আর আপনার মেধা, প্রজ্ঞা এবং দূরদর্শিতার কারণে আমরা এখন পর্যন্ত অন্যান্য দেশের চেয়ে ভালো আছি। আপনি একদিকে যেমন করোনার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছেন অন্যদিকে দেশকে তথা দেশের মানুষকে দুর্ভিক্ষের হাত থেকে বাঁচাতে বিভিন্ন প্রণোদনা ঘোষণা করেছেন। আমরা জানি, শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড এবং আপনার সরকার শিক্ষাবান্ধব সরকার। তাই এই সংকটকালেও আপনি ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে নেয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন এবং আমরা তা বাস্তবায়ন করছি।

বাংলাদেশের সরকারি ও এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি জাতি গঠনে কাজ করছে কয়েক হাজার ননএমপিও বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের লাখ লাখ শিক্ষক-কর্মচারী। যাদের একমাত্র আয়ের উৎস শিক্ষার্থীদের থেকে প্রাপ্ত টিউশন ফি। এর মধ্যে অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানই ভাড়া বাড়িতে অবস্থিত। যেহেতু বর্তমানে আয়ের পথ সীমিত তাই অভিভাবকরা এ মুহূর্তে ছেলেমেয়েদের শিক্ষা ব্যয় বহন করতে পারছেন না। কাজেই, শিক্ষার্থীদের থেকে প্রাপ্ত টিউশন ফি আদায় না হওয়ার কারণে আমরা প্রতিষ্ঠানসমূহের বাড়ি ভাড়া, শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন এবং অন্যান্য ব্যয় নির্বাহ করতে পারছি না।

হে শিক্ষানুরাগী,

আপনিই আমাদের অভিভাবক। আপনার মানবতা বোধের জন্য সারা বিশ্বে আপনি ‘মাদার অব হিউম্যানিটি’ হিসেবে পরিচিত। আমরা জানি, ছাত্রজীবন থেকেইে আপনার পছন্দের পেশা শিক্ষকতা এবং আপনি বরাবরের মতোই শিক্ষকদের সম্মান করেন। প্রায় দুই মাস যাবৎ দেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ এবং আমরা এখনও নিশ্চিত নই কবে এ দুর্যোগ শেষ হবে। বর্তমানে আমরা পরিবার পরিজন নিয়ে অত্যন্ত মানবেতর জীবনযাপন করছি। দেশের জন্য আমরা সামনে থেকে যুদ্ধ না করলেও যোদ্ধা তৈরি করি। আমাদেরও জীবন আছে, আছে পরিবার। এটা রমজান মাস এবং সামনে পবিত্র ঈদ-উল-ফিতর। আমরা না পারছি কারও কাছে হাত পাততে, না পারছি পরিবারের ন্যূনতম চাহিদা পূরণ করতে।

তাই আমরা দান নয়, আপনার সহযোগিতা চাই। যতদিন প্রতিষ্ঠান খোলার অবস্থা তৈরি না হবে, ততদিন পর্যন্ত যাতে আমরা প্রতিষ্ঠানের ব্যয় নির্বাহ করতে পারি, এ ব্যাপারে সুদমুক্ত ঋণ (প্রণোদনা) চাই।

পরিশেষে, আপনার সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করছি।

নিবেদক,
মো. আসাদুজ্জামান
অধ্যক্ষ
বি সি আই কলেজ, উত্তরা, ঢাকা।