কম্বোডিয়া : ইতিহাস-ঐতিহ্য-অর্থনীতি

সিল্কসিটি নিউজ ডেস্ক:

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার উন্নয়নশীল দেশ কম্বোডিয়া। রাজধানী নমপেনে-এর পর দেশের প্রধান শহর সিয়াম রিপ। এখানেই সিয়াছেন সেন্টার কর্তৃক সেন্ট্রাল ব্যাংক অব কম্বোডিয়ার সহযোগিতায় আয়োজন করা হয়েছিল প্রশিক্ষণ কর্মশালা ‘ওয়ার্কশপ অন লিডিং ইনোভেসন’। চার কর্মদিবসব্যাপী প্রোগ্রামটির একটি অংশ ছিল কম্বোডিয়ার ঐতিহ্যমণ্ডিত ঐতিহাসিক স্থান পরিদর্শন। অবশিষ্ট তিন কর্মদিবস ছিল প্রশিক্ষণ।

সিয়াছেন সেন্টারের পুরো অর্থ হলো ‘সাউথ ইস্ট এশিয়ান সেন্ট্রাল ব্যাংক রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং সেন্টার’। সেন্টারটি মালয়েশিয়ার উদ্যোগে ১৯৮২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ৮টি কেন্দ্রীয় ব্যাংক বা সদস্য দেশ নিয়ে এর যাত্রা শুরু হয়েছিল। বর্তমানে এর সক্রিয় সদস্য সংখ্যা বিশ। এ ছাড়া রয়েছে আরও বেশ কিছু সহযোগী সদস্য ও পর্যবেক্ষক দেশ। মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে এর প্রধান কার্যালয়। এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলে অবস্থিত এসব দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য এ সংস্থা কাজ করে যাচ্ছে। গৃহীত প্রধান প্রধান কর্মসূচি নিম্নরূপ-

ক. শিক্ষামূলক কর্মসূচি।

খ. গবেষণা কর্মসূচি।

গ. নেটওয়ার্কিং ও সহযোগিতামূলক কর্মসূচি।

ঘ. কেন্দ্রীয় ব্যাংকের জ্ঞান-বর্ধনমূলক কর্মসূচি। এ কর্মসূচির আওতায় যেসব উল্লেখযোগ্য বিষয় রয়েছে, তাদের মধ্যে অন্যতম হলো-

১. সামষ্টিক অর্থনীতি ও মুদ্রানীতি ব্যবস্থাপনা।

২. ফাইন্যান্সিয়াল স্ট্যাবিলিটি ও সুপারভিশন।

৩. পেমেন্ট অ্যান্ড সেটলমেন্ট সিস্টেম এবং

৪. লিডারশিপ ও গভার্ন্যান্স ইত্যাদি।

সিয়াছেন সেন্টার উল্লিখিত বিষয়গুলোর ওপর নিয়মিত প্রশিক্ষণ, ওয়ার্কশপ, সভা, সেমিনার, সিম্পজিয়াম, মতবিনিময় কার্যক্রম ইত্যাদি পরিচালনা করে থাকে। উল্লেখ্য, বাংলাদেশ ব্যাংক সিয়াছেন সেন্টারের সহযোগী সদস্য।

ইতিহাসের পথ কখনো মসৃণ হয় না। বহু যুদ্ধ, ধ্বংস আর বহু চড়াই-উতরাই পেরিয়ে তাকে এগিয়ে চলতে হয়। প্রাচীন এ দেশটির ইতিহাসও তার ব্যতিক্রম নয়। কম্বোডিয়াকে ইতিহাসের ভাঙাগড়ার অমসৃণ পথ মাড়িয়ে আসতে হয়েছে আজকের এ পর্যায়ে। সে এক বিস্মৃত ইতিহাস। এ ক্ষুদ্র নিবন্ধে সে ইতিহাস বিবৃত করা সম্ভব ও সংগত কোনোটাই হবে না।

নবম শতাব্দীর প্রথমভাগে বর্তমানের কম্বোডিয়া, লাওস, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনামের অংশবিশেষ নিয়ে খেমার সাম্রাজ্য গড়ে উঠেছিল। তাই ঐতিহাসিক কারণেই এ বিস্তীর্ণ এলাকার মানুষের মধ্যে ভাষা, সংস্কৃতি, ধর্ম, বর্ণ ও মননে মিল লক্ষ করা যায়। এ সাম্রাজ্যের রাজধানীর নাম ছিল অ্যাংকর, যা বর্তমানে কম্বোডিয়ার অন্তর্গত। এর স্থিতিকাল ছিল নবম থেকে পঞ্চদশ শতাব্দী পর্যন্ত। এ সময় সাম্রাজ্য তার শৌর্য-বীর্য ও উন্নতির সর্বোচ্চ শিখরে পৌঁছে ছিল। আবিষ্কৃত বহু প্রাচীন স্থাপনায় তার প্রমাণ মেলে। পৃথিবীর প্রাচীন সপ্তম আশ্চর্যের একটি এখানে রয়েছে-তা হলো হিন্দু-বৌদ্ধ মন্দির ‘অ্যাংকর ওয়াট’ বা সিটি টেম্পল। বিশাল আয়তনের কারুকার্য খচিত এ মন্দির এবং অন্য আরও বহু মন্দির, বিহার ও বিপুলায়তন স্থাপনা সাম্রাজ্যের বিত্ত-বৈভব ও উন্নত শিল্পকলার পরিচয় বহন করে।

অ্যাংকর ওয়াট বর্তমানে বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ (ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট)। বারশ শতাব্দীর প্রারম্ভে খেমার রাজা দ্বিতীয় সুরিয়াবর্মণের সময় মন্দিরের নির্মাণ কাজ শুরু হয়। এটা বিশ্বের বৃহত্তম ধর্মীয় স্মৃতিসৌধ। পর্যটকরা এসব প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা দেখতে সব সময় এখানে ভিড় করেন। এসব স্থাপনা সাধারণত ইট, বেলেপাথর ও ল্যাটারাইট দিয়ে তৈরি করা হয়েছে। ল্যাটারাইট হলো লৌহমিশ্রিত কাদামাটি। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার এ অঞ্চলে তখন এ মাটি পাওয়া যেত। এ মাটি দিয়ে সহজে ব্লক তৈরি করা যায়, যা উন্মুক্ত স্থানে আলো-বাতাসে রাখলে অত্যন্ত কঠিন রূপ ধারণ করে। তা ছাড়া ব্যবহৃত হয়েছে, হাজার, হাজার টন পাথর, যা দূর পাহাড় থেকে এনে কীভাবে সেই সুদূর অতীতে এসব স্থাপনা তৈরি করা সম্ভব হলো, তা এক কথায় অবাক করার মতো। বিশাল সব স্থাপনার গায়ে নির্মিত হয়েছে ভাস্কর্য ও অঙ্কিত হয়েছে নানা চিত্রকর্মে। এসব ভাস্কর্য ও চিত্রকর্মে ইতিহাসের নানা উপাদান কারুকার্য খচিত নকশায় বিবৃত করা হয়েছে। নানা জটিল হিসাবায়নে এর নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। কত লোকের শ্রমে-ঘামে এ জটিল ও আয়াস-সাধ্য কাজ সম্ভব হয়েছে, ভাবলে সত্যিই বিস্ময়ের অন্ত থাকে না। জানা যায়, ‘অ্যাংকর ওয়াট’ তৈরি করতে হাজার, হাজার লোকের প্রায় ৩৭ বছর সময় লেগেছে।

ধর্মীয় বিরোধ, বৈদেশিক আক্রমণ, ক্ষমতার দ্বন্দ্ব, পরিবেশগত বিপর্যয়, মহামারি ইত্যাদি নানা কারণে অন্য সাম্রাজ্যের মতো খেমার সাম্রাজ্যেরও পতন ঘটে। মোটামুটিভাবে নবম থেকে পঞ্চদশ শতাব্দী পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ছয়শ বছর এ সাম্রাজ্য টিকেছিল। সেই সাম্রাজ্যের একটি অংশ তথা দেশ কম্বোডিয়া বহু ভাঙাগড়ার মধ্য দিয়ে চলতে-চলতে সর্বশেষ ফরাসি উপনিবেশ থেকে ১৯৫৩ সালে মুক্ত হয়ে স্বাধীনতা লাভ করে। দেশটির আয়তন প্রায় ৭০ হাজার বর্গমাইল। লোকসংখ্যা দেড় কোটির কিছুু বেশি। এটা বিশ্বের দরিদ্রতম দেশের অন্যতম। মাথাপিছু জিডিপি দেড়হাজার ইউএস ডলারের কিছু ওপরে। দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধ ও সামাজিক-রাষ্ট্রিক-রাজনৈতিক নৈরাজ্য এ অবস্থার জন্য দায়ী।

ভয়ংকর গণহত্যা সংঘটিত হয় খেমাররুজ তথা কম্বোডিয়ার কমিউনিস্ট শাসন আমলে (আশির দশকে)। তারা শুদ্ধি অভিযানের নামে দেশের প্রায় এক-পঞ্চমাংশ লোককে (প্রায় ৩.০০ মিলিয়ন) হত্যা করে। মানবসভ্যতার ইতিহাসে এটা বর্বরতম কালো অধ্যায়ের একটি। দেশের অর্থনীতি ও সামাজিক কাঠামো সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করে দেওয়া হয়। এখানকার জাদুঘরে গেলে এ ধ্বংসযজ্ঞের বহু আলামত দেখা যায়। সংরক্ষিত অগণিত মাথার খুলি দেখে যে কেউ এমন মানববিদ্বেষ দর্শনে বিহবল না হয়ে পারেন না। এখানে কালের বিচারে খেমাররুজ শাসনের অবসান হলেও এখনো সেখানকার মানুষ সে দুঃস্বপ্ন দেখে আঁতকে ওঠেন। তবে বর্তমানে সে দুঃসহ অবস্থা থেকে অনেকটা কেটে উঠছে দেশটির মানুষ। বিশেষ করে যুবসমাজের ভেতরে জেগে ওঠার স্বপ্ন লক্ষণীয়। তারা কর্মচঞ্চল হয়ে উঠছেন। আর্থিক কর্মকাণ্ড দিন দিন বাড়ছে। ফলে অর্থনীতি এগিয়ে যাচ্ছে।

‘সিয়াম রিপ’ কম্বোডিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর। রাজধানী নমপেন হলেও ঐতিহাসিক কারণে এ শহরের গুরুত্ব সর্বাধিক। অত্যন্ত পরিচ্ছন্ন শহর এটি। কেউ যেখানে-সেখানে ময়লা-আবর্জনা ফেলেন না। ফলে রাস্তাঘাট বেশ পরিষ্কার। এটাকে পর্যটন শহর বলা হয়। তাই নাগরিকরা নিজের ভেতর থেকে একে পরিচ্ছন্ন রাখার তাগিদ অনুভব করে থাকেন। আমাদের গাইড ছিলেন সরকারের পর্যটন বিভাগের একজন কর্মকর্তা। তিনি আমাদের বিভিন্ন স্থাপনা ঘুরে ঘুরে দেখাচ্ছিলেন এবং এ সবের নানাদিক নিয়ে আলোচনা করে বুঝিয়ে দিচ্ছিলেন। একটি স্থানে কয়েকটি কাগজের টুকরা পড়ে থাকতে দেখে তিনি তা কুড়িয়ে নিয়ে যথাস্থানে রাখলেন। বুঝলাম, তারা নিজেদের শহরের পরিচ্ছন্নতার ব্যাপারে কতটা সচেতন!

এখানকার জনপ্রিয় এবং বহুল ব্যবহৃত যানবাহনের নাম হলো ‘টুকটুক’। আমাদের ঢাকায় চলাচলকারী অটোরিকশার মতো অনেকটা। খোলামেলা এ বাহনে চড়ে হাওয়া খেতে খেতে খুব সহজেই এখানে-ওখানে বেড়ানো যায়। টুকটুকের কোনো নির্ধারিত ভাড়া নেই। দরদাম ঠিক করে নিতে হয়। সাধারণত একটু বেশি ভাড়া চাওয়া হয়। তবে দরাদরি করলে অনেক কমেও পাওয়া যায়।

আমি একটা টুকটুক ভাড়া নিয়ে চললাম শহর থেকে প্রায় বিশ কিলোমিটার দূরে ঐতিহ্যবাহী ‘ওয়াটার ভিলেজ’ দেখতে। চালক বেশ বয়স্ক। নাম জিজ্ঞেস করায় তিনি তার গাড়ির ছাদের সম্মুখভাগে লটকানো নেমপ্লেটের দিকে ইঙ্গিত করলেন। দেখতে পেলাম নাম মি. খেয়াং। বললাম, আচ্ছা চালান মি. খেয়াং। টুকটুক চলতে লাগল। মনোরম আবহাওয়া। তবে বেশ গরম। তাই গায়ে বাতাস লাগায় ভারি আরাম অনুভব করছিলাম। শরীর জুড়ানো পরিচ্ছন্ন বাতাস। দিগন্ত বিস্তৃত আকাশে ছোটখাটো মেঘের ভেলা। ভেসে চলেছে নীল আকাশে, দূর হতে সুদূরে।

রাস্তার দুপাশে বিভিন্ন বৃক্ষরাজি। পাশ দিয়ে একটি খাল প্রবাহিত। বেশ দ্রুতগতিতে স্রোত নিচে নেমে যাচ্ছে। দেখলাম, সেখানে জাল ফেলে অনেকে মাছ ধরছেন। উভয় পাশে হালকা-পাতলা কিছু বাড়িঘর দেখা যায়। অধিকাংশই টালি-করা একতলা, দোতলা বাড়ি। আরও রয়েছে দোকানপাট, ছোটখাটো ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের স্থাপনা। অনেকটা খোলামেলা। টুকটুক চালক খেয়াং ইংরেজি মোটামুটি বোঝেন এবং বলতেও পারেন। ফাঁকা রাস্তা তাই টুকটুক দ্রুতগতিতেই চলছিল। টুকটুক চালকের সঙ্গে মাঝে মাঝে ইংরেজিতে কথা বলছিলাম। তিনি ভালোই বুঝিয়ে বলছিলেন সবকিছু। তিনি বলতে লাগলেন, বহু দেশের পর্যটকরা তার গাড়িতে উঠে ঘুরে বেড়িয়েছেন। তাদের নানা জায়গায় নিয়ে গেছেন। বহুবার তিনি তাদের নিয়ে ওয়াটার ভিলেজে এসেছেন।

এবার ওয়াটার ভিলেজ নিয়ে দু-একটি কথা বলি। ওয়াটার ভিলেজ হলো পানির ওপর গড়ে তোলা গ্রামবিশেষ। একে ভাসমান গ্রামও বলা হয়ে থাকে। আমাদের দেশের বেদে সম্প্রদায়ের মতো। আমাদের এখানে বেদেরা বসবাস করে নৌকায় আর ওরা বাস করে পানির ওপর ঘরবাড়ি বানিয়ে। বিশাল লেক, নাম টনলে স্যাপ। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বৃহত্তম সুপেয় পানির লেক বা হ্রদ এটা। এ লেক মিশে গেছে একই নামের টনলে স্যাপ নদীর সঙ্গে। এ নদীর উৎপত্তি হয়েছে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার গুরুত্বপূর্ণ ও বিখ্যাত নদী মেকং রিভার থেকে। তাই সাগর-সদৃশ এ বিস্তৃত জলরাশি কম্বোডিয়ার জীবন ও জীবিকাকে নানাভাবে প্রভাবিত করে রেখেছে। এলাকার ভাসমান মানুষের জীবন ও জীবিকা একান্ত পানিনির্ভর। সারা বছরই এখানে পানি থাকে। নদী ও হ্রদের মাছ ও অন্যান্য সম্পদ থেকে দেশের জিডিপির প্রায় ১৬ ভাগ এসে থাকে।

কম্বোডিয়ায় প্রধানত দুটি ঋতু দেখা যায়। একটি শুকনো বা গ্রীষ্মকাল, অপরটি বর্ষা ঋতু। বর্ষাকালে লেকের পানির বিস্তৃতি অনেক বেড়ে যায়। পানির ভেতর ড্রাম ফেলে বাঁশ, কাঠ, টিন ও অন্য উপকরণ দিয়ে বেশ সুন্দর, সুন্দর ঘরবাড়ি বানিয়ে ভাসমান মানুষরা পরিবার নিয়ে বসবাস করে আসছেন যুগ-যুগ ধরে। তারা মাছ, সাপ, শামুক-ঝিনুক শিকার করে, সাপের খেলা দেখিয়ে জীবিকা অর্জন করে থাকেন। তাদের জীবন-প্রণালি দেখার জন্য দেশ-বিদেশের অসংখ্য পর্যটক প্রতিদিন এখানে বেড়াতে আসেন। নৌকা ভাড়া করে সারা দিন ঘুরে ঘুরে জীবনযাপনের নানা বৈচিত্র্য দেখে তারা সময় কাটিয়ে দেন। আমিও সেসব ভাসমান বাড়িঘর ও সেখানকার মানুষদের জীবনযাত্রা কিছুটা হলেও প্রত্যক্ষ করার সুযোগ পেলাম। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের মানুষ টুকটুক চালক খেয়াং-এর গাড়িতে ওঠে, ঘুরে বেড়ানো শেষে নানা মন্তব্য লিখে গেছেন। তিনি ওগুলো তার গাড়ির ভেতরে সম্মুখ ভাগের বডিতে বিভিন্নস্থানে আঠা দিয়ে আটকিয়ে রেখেছেন। কয়েকটি পড়ে দেখলাম। বিশ্বস্ত, অভিজ্ঞ, আন্তরিক ইত্যাদি নানা প্রশংসার মন্তব্য এতে লেখা হয়েছে। তিনি খুব আগ্রহভরে সে মন্তব্যগুলো আমাকে দেখালেন। মনোযোগ সহকারে আমার পড়া দেখে তিনি খুব উচ্ছ্বাস প্রকাশ করছিলেন। সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্যই হয়তো তিনি এসব সংগ্রহ এবং সংরক্ষণ করে থাকেন।

কম্বোডিয়ার অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির প্রধান সহায় হলো তার উদীয়মান যুবশক্তি। তারা অত্যন্ত পরিশ্রমী ও কর্মমুখী। সব জায়গায় তারা কাজ করছে, তাদের সক্ষমতার পরিচয় দিচ্ছে। বিভিন্ন দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ফোরামে তারা প্রতিভার স্বাক্ষর রাখছে। উন্নয়নের সব ক্ষেত্রে তারা অতিসরব। তারা শিক্ষায় এগিয়ে যাচ্ছে। অনেক পিতা-মাতা তাদের সন্তানদের উন্নতমানের শিক্ষার ব্যবস্থা করছেন, মানসম্মত প্রতিষ্ঠানে লেখাপড়া শেখাচ্ছেন। সেখানে জনস্বাস্থ্যের উন্নয়নে কাজ চলছে। উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে সুস্থ-সবল মানুষের প্রয়োজন। শিক্ষা-স্বাস্থ্যের জন্য বিভিন্ন প্রদেশ-ভিত্তিক বাজেট রয়েছে। বিশ্বব্যাংক, আইএমএফসহ বহু আন্তর্জাতিক সংস্থা এদেশে কাজ করছে। প্রতি বছর গড়ে প্রায় শতকরা ৫ ভাগ হারে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হচ্ছে। নগরায়ণ হচ্ছে। পর্যটন ও কৃষিনির্ভর হলেও বর্তমানে ছোটখাটো শিল্পায়নে দেশটি এগিয়ে যাচ্ছে। শিল্পপণ্য উৎপাদন ও রপ্তানি বাড়ছে। অভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক কার্যক্রম ক্রমাগতভাবে বেড়ে চলেছে।

বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার উদীয়মান অর্থনীতির দেশ, যেখানে কম্বোডিয়া দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার একটি উন্নয়নশীল দেশ। বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করে ১৯৭১ সালে, যেখানে কম্বোডিয়া স্বাধীনতা লাভ করে ১৯৫৩ সালে অর্থাৎ বাংলাদেশের প্রায় ১৮ বছর আগে। বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় প্রায় আড়াই হাজার মার্কিন ডলার যেখানে কম্বোডিয়ার মাথাপিছু আয় দেড় হাজার মার্কিন ডলারের কিছু ওপরে। জীবনমানের গুণগত দিক থেকে বাংলাদেশ কম্বোডিয়ার চেয়ে অনেক ক্ষেত্রেই এগিয়ে রয়েছে। তবে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার দিক থেকে কম্বোডিয়া বাংলাদেশ থেকে এগিয়ে রয়েছে, যা একটি দেশের উন্নয়নের অন্যতম পূর্বশর্ত। প্রায় ১৭ কোটি মানুষের দেশ বাংলাদেশ; যেখানে কম্বোডিয়ার জনসংখ্যা মাত্র দেড় কোটির কিছু বেশি। আয়তনে বাংলাদেশ প্রায় ১.৪৮ লাখ বর্গকিলোমিটার যেখানে কম্বোডিয়া প্রায় ১.৮১ লাখ বর্গকিলোমিটার, অর্থাৎ আয়তনে কম্বোডিয়া বাংলাদেশের চেয়ে প্রায় ৩৩ হাজার বর্গকিলোমিটার বড়।

মোটকথা, দুটি দেশ অনেক প্রাচীন। রয়েছে তাদের অনেক ঐতিহ্য। ইতিহাসের পথপরিক্রমায় অনেক ভাঙা-গড়া হয়েছে। বাংলাদেশের আগে স্বাধীনতা অর্জন করলেও দেশটি সেভাবে এগিয়ে যেতে পারেনি। তার পেছনে কারণও রয়েছে অনেক। কিন্তু বাংলাদেশ নগরায়ণ, শিল্পায়ন, অবকাঠামো উন্নয়ন ইত্যাদি সব ক্ষেত্রেই অনেকদূর এগিয়ে গেছে। আরও অনেকদূর তাদের যাওয়ার কথা, মানুষ অন্তত এমনই ভাবে।

সূত্র: যুগান্তর