কমেছে ভোটার ও দলের অংশগ্রহণ

সিল্কসিটি নিউজ ডেস্ক:

জাতীয় সংসদের উপনির্বাচনগুলোতে রাজনৈতিক দল ও ভোটারদের অংশগ্রহণ কমেছে। ভোট দিয়ে জনপ্রতিনিধি নির্বাচন নিয়েও আগ্রহ কমছে স্থানীয় ভোটারদেরও। বেশিরভাগ নির্বাচনেই জয়ী ও পরাজিত প্রার্থীদের ভোটের ব্যবধান এত বেশি হচ্ছে যে, নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক হচ্ছে না। বড় ব্যবধানে জয় পাচ্ছে আওয়ামী লীগ ও তাদের শরিক দলগুলো। জাতীয় সংসদের সর্বশেষ ১০টি আসনের নির্বাচনের তথ্য পর্যালোচনা করে পাওয়া গেছে এমন চিত্র।

পর্যালোচনায় আরও দেখা গেছে, কমিশন নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সংখ্যা ৩৯টি হলেও এসব নির্বাচনে আওয়ামী লীগসহ ১০টি রাজনৈতিক দল ঘুরেফিরে প্রার্থী মনোনয়ন দিয়েছে। সেখানে গড় ভোট পড়ার হার ৩০ শতাংশ। সবচেয়ে কম ১৬ দশমিক ১০ শতাংশ ভোট পড়েছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে। এ ১০টি আসনের কোনো নির্বাচনে ৫০ শতাংশের বেশি ভোট পড়েনি। বুধবার একইদিনে যে ছয়টি আসনে উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে, সেগুলোতে ভোট পড়ার হার গড়ে ২৮ দশমিক ৪৬ শতাংশ। এ ছয়টি নির্বাচনে ৪০ প্রার্থীর ২৬ জনই জামানত হারিয়েছেন।

সর্বশেষ বুধবার যে ছয়টি আসনে ভোট হয়েছে সেখানে ভোটার উপস্থিতি কম হওয়ার বিষয়ে ইসির অবস্থান তুলে ধরেছেন বেগম রাশেদা সুলতানা। তিনি বলেন, উপনির্বাচনে সব সময় কম ভোট পড়ে। এর কারণ হচ্ছে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাত্র ৮-৯ মাস আগে এসব আসনে ভোট হচ্ছে। এছাড়া নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেয়নি। তাই ভোটারদের আগ্রহ কম। তবুও নির্বাচন নিয়ে নিজের সন্তুষ্টির কথা জানিয়ে তিনি বলেন, একটা উপনির্বাচন ৩৫-৪৬ শতাংশ ভোট পড়াটা কম নয়। আমরা এ ভোটে সন্তুষ্ট।

ইসি সূত্র জানায়, ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ১০টি আসনের উপনির্বাচনে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। আসনগুলো হচ্ছে- টাঙ্গাইল-৭, সিরাজগঞ্জ-৬, গাইবান্ধা-৫, ফরিদপুর-২, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ ও ৩, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২, ঠাকুরগাঁও-৩, বগুড়া ৪ ও ৬। এসব নির্বাচনে প্রার্থী দিয়েছে আওয়ামী লীগ, জাকের পার্টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ), বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন, জাতীয় পার্টি, বাংলাদেশ কংগ্রেস, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি), বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট (বিএনএফ) ও বিকল্পধারা বাংলাদেশ। তবে এককভাবে কোনো আসনের উপনির্বাচনেই এ ১০টি দলের মধ্যে পাঁচটির বেশি দলের প্রার্থী ছিল না। সূত্র আরও জানায়, এ ১০টি আসনের মধ্যে টাঙ্গাইল-৭ ও সিরাজগঞ্জ-৬ উপনির্বাচন বিগত কেএম নূরুল হুদা কমিশনের সময়ে অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়া বাকি উপনির্বাচনগুলো বর্তমান কাজী হাবিবুল আউয়ালের সময়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে।

উপনির্বাচনগুলোতে রাজনৈতিক দল ও ভোটার সম্পৃক্ততা কমে যাওয়া গণতন্ত্রের জন্য সহায়ক নয় বলে মনে করেন সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার। তিনি যুগান্তরকে বলেন, নির্বাচন মানেই হচ্ছে জনপ্রতিনিধি বেছে নেওয়ার পথ তৈরি করা। কিন্তু উপনির্বাচনগুলোতে রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণ না থাকা এবং প্রতিযোগিতামূলক না হওয়ায় যোগ্য বিকল্প প্রার্থী পাচ্ছেন না সাধারণ ভোটাররা। এ কারণে জনগণও ভোটবিমুখ হয়ে পড়ছেন। আর নির্বাচন কমিশন এ নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক বলছেন। এতেই প্রতীয়মান হচ্ছে আমরা আরেকবার একতরফা নির্বাচনের দিকে ধাবিত হচ্ছি।

বিএনপির সংসদ-সদস্যদের পদত্যাগে শূন্য হওয়া ছয়টি আসনে বুধবার ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সবচেয়ে বেশি আলোচনায় ছিল ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের উপনির্বাচন। এ আসনে তিন লাখ ৭৩ হাজার ৩১৯ জন ভোটারের মধ্যে ভোট দিয়েছেন মাত্র ৬০ হাজার ১২২ জন। ভোট পড়ার হার ১৬ দশমিক ১০ শতাংশ। এ আসনে দলীয়ভাবে জাকের পার্টি ও জাতীয় পার্টির প্রার্থী দিয়েছে। বাকি তিন প্রার্থীর সবাই স্বতন্ত্র। নির্বাচনে বিএনপির দলছুট নেতা আবদুস সাত্তার ভূঞা ৪৪ হাজার ৯১৬ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছেন; যা মোট ভোটারের মাত্র ১২ শতাংশ। তার নিকটতম জাতীয় পার্টির প্রার্থী মো. আব্দুল হামিদ পেয়েছেন মাত্র ৯৬৩৫ ভোট।

বগুড়া-৬ আসনে উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ, জাকের পার্টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ), বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন ও জাতীয় পার্টির প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের রাগেবুল আহসান রিপু ৪৯ হাজার ৩৩৬ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। এ আসনে ৪ লাখ ১০ হাজার ৭৪৩ জন ভোট দিয়েছেন ৯১ হাজার ৭৪২ জন। ভোট পড়ার হার ২২ দশমিক ৩৪ শতাংশ।

বগুড়া-৪ আসনে চারটি রাজনৈতিক দলের প্রার্থীরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। দলগুলো হচ্ছে-জাকের পার্টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ), বাংলাদেশ কংগ্রেস ও জাতীয় পার্র্টি। এ আসনে জাসদ’র একেএম রেজাউল করিম তানসেন ২০ হাজার ৪০৫ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। এ আসনে ৩ লাখ ২৮ হাজার ২৬৯ ভোটারের মধ্যে ভোট পড়েছে ৭৮ হাজার ৫২৪ ভোট। ভোট পড়ার হার ২৩.৯২ শতাংশ। ঠাকুরগাঁও-৩ আসনেও পাঁচটি রাজনৈতিক দল অংশ নেয়। দলগুলো হচ্ছে- বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, জাকের পার্টি, ন্যাশনাল পিপলস পার্টি, বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট (বিএনএফ) ও জাতীয় পার্টি। এ আসনে জাতীয় পার্টির হাফিজ উদ্দিন আহম্মেদ ৮৪ হাজার ৪৭ ভোট পেয়ে সংসদ-সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। এ উপনির্বাচনে তিন লাখ ২৪ হাজার ৭৪১ ভোটের মধ্যে এক লাখ ৫০ হাজার ৩৩৪টি ভোট পড়েছে। ভোট পড়ার হার ৪৬ দশমিক ২৯ শতাংশ।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি, জাকের পার্টি ও বিএনএফ-এই চারটি দলের প্রার্থী ছিলেন। এ নির্বাচনে সরকারি দলের মু. জিয়াউর রহমান ৯৪ হাজার ৯২৮ ভোট পেয়ে সংসদ-সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। এ আসনে ৪ লাখ ৫ হাজার ৪৫০টি ভোটের মধ্যে পড়েছে এক লাখ ৪১ হাজার ৪০ ভোট। ভোট পড়ার হার ৩৪ দশমিক ৭৯ শতাংশ। একই জেলার আরেক আসন চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ এ দুটি রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনএফ’র প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। এ নির্বাচনে সরকারি দলের মো. আব্দুল ওদূদ ৫৯ হাজার ৬৩৮ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। এ আসনে ৪ লাখ ১১ হাজার ৪৯৫টি ভোটের মধ্যে পড়েছে এক লাখ ১৯ হাজার ৬৫৮টি। ভোট পড়ার হার ২৯ দশমিক ০৮ শতাংশ।

এর আগে ৪ জানুয়ারি গাইবান্ধা-৫ আসনে উপনির্বাচনে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। ওই নির্বাচনে জাতীয় পার্টি, আওয়ামী লীগ, বিকল্পধারা বাংলাদেশ-এ তিনটি দলের প্রার্থী অংশ নেন। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মাহমুদুল হাসান রিপন ৭৮ হাজার ২৭৬ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। ৩ লাখ ৩৯ হাজার ৪ জন ভোটারের এ আসনে ভোট পড়ে এক লাখ ২৯ হাজার ৬১২ ভোট। ভোট পড়ার হার ৩৮.২৩ শতাংশ। তার আগে গত বছরের ৫ নভেম্বর ফরিদপুর আসনের উপনির্বাচনে ভোটগ্রহণ হয়। ওই আসনে আওয়ামী লীগ ও খেলাফত আন্দোলন-এ দুদলের প্রার্থী ছিলেন। এতে আওয়ামী লীগের শাহদাব আকবর ৬৮ হাজার ৭২১ ভোট পেয়ে সংসদ-সদস্য নির্বাচিত হন। ওই আসনে তিন লাখ ১৮ হাজার ৫৮৫ ভোটারের মধ্যে ভোট পড়ে ৮৩ হাজার ৬১০টি। ভোট পড়ার হার ২৬.২৪ শতাংশ। ২০২২ সালের জানুয়ারি ভোট হয় টাঙ্গাইল-৭ আসনের উপনির্বাচনে।

এ উপনির্বাচনেও আওয়ামী লীগের প্রার্থী খান আহমেদ শুভ এক লাখ ৪ হাজার ৫৯ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ছাড়াও জাতীয় পার্টি, ওয়ার্কার্স পার্টি ও বাংলাদেশ কংগ্রেসের প্রার্থী ছিলেন। ওই নির্বাচনে তিন লাখ ৪০ হাজার ৩৭৯ ভোটারের মধ্যে ভোট পড়ে এক লাখ ২৪ হাজার ৭৫১জন। ভোট পড়ার হার ছিল ৩৬ দশমিক ৬৫ শতাংশ।

সূত্র: যুগান্তর