কপাল খুলছে সহস্রাধিক কলেজ শিক্ষকের

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

দিনের পর দিন বিনাবেতনে চাকরি করেছেন অনেক কলেজ শিক্ষক। এবার তাদের মধ্যে অনেকেরই কপাল খুলতে যাচ্ছে। সারাদেশের সহস্রাধিক কলেজ শিক্ষক এমপিওভুক্তির সুযোগ পাচ্ছেন।

দেশের বেসরকারি কলেজে তৃতীয় শিক্ষক হিসেবে পরিচিত অনেকে বিনাবেতনে অথবা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে দেয়া সামান্য অর্থ পাচ্ছিলেন। এবার এসব তৃতীয় শিক্ষক এমপিওভুক্তির আওতায় আসছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

এর আগে এক একটি বিষয়ে দুইজন করে শিক্ষক এমপিওভুক্ত হওয়ায় এই শিক্ষকরা (তৃতীয় শিক্ষক হিসেবে পরিচিত) সরকারি সুবিধা পাচ্ছিলেন না।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী, কোনো বেসরকারি কলেজে কোনো বিষয়ে ডিগ্রি পড়াতে গেলে অন্তত তিনজন শিক্ষক থাকতে হবে। অনার্স পড়াতে গেলে চারজন শিক্ষক লাগে। অথচ মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের নিয়ম অনুসারে একটি বিষয়ে মাত্র দুজন শিক্ষক এমপিওভুক্ত হতে পারেন।

এই দুজনের বেতন সরকার থেকে দেয়া হয়। একই বিষয়ের তৃতীয় শিক্ষকের বেতন-ভাতা কলেজ তহবিল থেকে পরিশোধ করতে হয়।

সরকারি এ নিয়মের কারণে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে দেশের সব ডিগ্রি কলেজে বিষয়ভিত্তিক তৃতীয় শিক্ষকরা এতদিন এমপিও সুবিধা থেকে বঞ্চিত ছিলেন। এবার তারাও পাবেন এই সুবিধা।

জানা গেছে, গত মে মাসে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির কাছে তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্ত করার আবেদন করেন বাংলাদেশ ডিগ্রি (তৃতীয়) শিক্ষক পরিষদের সভাপতি আবু বক্কর সিদ্দিক ও সাধারণ সম্পাদক রুমানা পারভীন।

এই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ সম্প্রতি মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা (মাউশি) অধিদফতরের মহাপরিচালকের কাছে তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির বিষয়ে সুস্পষ্ট মতামত জানতে চায়।

মাউশির মহাপরিচালক অধ্যাপক সৈয়দ মো. গোলাম ফারুক মন্ত্রণালয়ে তার মতামত পাঠিয়ে দেন। তাতে তিনি বলেন, এমপিওভুক্তি ডিগ্রি কলেজের জনবল কাঠামো-২০১০ নীতিমালা প্রকাশের পরে সারাদেশে ৮৪১ জন তৃতীয় শিক্ষক নিয়োগ পেয়েছেন। তাদের এমপিওভুক্ত করা হলে বছরে সরকারের ২৫ কোটি টাকা ব্যয় হবে।

মন্ত্রণালয়ের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, শিগগিরই শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সভায় এসব বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে।

জানা গেছে, তৃতীয় শিক্ষকদের মধ্যে তিন ধরনের শিক্ষক রয়েছেন। ২০১৩ সালের এমপিওভুক্তির নীতিমালায় শর্ত দেয়া হয়েছিল এই শিক্ষকদের বেতনভাতা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকেই বহন করতে হবে। এই ধরনের শিক্ষকের সংখ্যা ৪৫০ জন।

আরেকভাগে রয়েছেন ৬৭০ জন শিক্ষক। তারা ২০১৫ সালের ২২ অক্টোবরের আগেই নিয়োগ পেয়েছিলেন।

অপর ভাগে রয়েছেন প্রায় ২০০ তৃতীয় শিক্ষক। তারা ২০১৭ সালে কেন্দ্রীয়ভাবে শিক্ষক নিয়োগ চালু হওয়া সত্ত্বেও নিজ প্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডির মাধ্যমে নিয়োগ পেয়েছিলেন। এ শিক্ষকদের নিয়োগকে অবৈধ মনে করছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। ফলে তাদের এমপিওভুক্ত করতে রাজি নয় মন্ত্রণালয়।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক সিদ্ধান্তে বলা হয়েছিল, যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ২০১৫ সালের ২২ অক্টোবরের আগে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি জারি করেছিল, তারা ২০১৬ সালের ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত নিয়োগ সম্পন্ন করতে পারবেন। এই ৬৭০ জন শিক্ষক ওই সময়ে নিয়োগ পেয়েছিলেন।

মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, তবে ২০১৫ সালের ২২ অক্টোবরের পর ‘বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের’ (এনটিআরসিএ) মাধ্যমে নিয়োগ পাওয়া তৃতীয় শিক্ষকরা এমপিওভুক্তির জন্য বিবেচিত হবেন। তিন ক্যাটাগরি মিলিয়ে বর্তমানে প্রায় এক হাজারের বেশি তৃতীয় শিক্ষক এমপিওভুক্তির আশায় আছেন।