ওয়েলডিং মিস্ত্রী আনিসের অ্যান্টিবায়োটিক রাজশাহীর বাজারে

শাহিনুল আশিক:


এসএসসি পরীক্ষায় ফেল করে ওয়েলডিং মিস্ত্রীর কাজ শুরু করেন ওষুধ তৈরির ‍মূলহোতা শফিকুল ইসলাম আনিস (৪৬)। তৈরি করেন- স্কার, এস.বি-ল্যাবরেটরীজ কোম্পানী ছাড়াও নামি-দামি কোম্পানীর অ্যান্টিবায়োটিক,  গ্যাসেরসহ পাওয়ার-৩০ এর মতো যৌন উত্তেজক ট্যাবলেট। নিজ বাড়িতেই ওষুধ তৈরি কারখানা চালাচ্ছেন ২ বছর ধরে। আর এই সকল ভেজাল ওষুধগুলো একটি সিন্ডিকেটের মাধ্যমে চলে যেত রাজশাহীর বিভিন্ন দোকানে।


চিকিৎসকরা বলছেন- একটি ওষুধ তৈরিতে অনেকগুলো ধাপ পেরোতে হয়। তার পরে ওষুধটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। এর পরে বাজারে ছাড়া হয়। কিন্তু আনিসের কারখানার ওষুধ কোন ধাপ না পেরিয়ে এক লাফে বাজারে এসেছে।


ওয়েলডিং মিস্ত্রী আনিসের হজরমোড় এলাকার নিজ বাড়িতে অভিযানে ওষুধ তৈরির সত্যতা পান নগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সদস্যরা। এসময় আনিস ও তার সহাযোগি রবিউল ইসলামকে (৩২) গ্রেফতার করে ডিবি। পুলিশ জানায়-  দুই বছর ধরে ওষুধ তৈরি করে বিক্রি করতেন আনিস। আনিসের এমন কথায় আচ করাই যায়- রাজশাহীর বিভিন্ন দোকানের আনিসের তৈরি ওষুধ থাকতেও পারে, এতে কোন সন্দেহ নেই।

এবিষয়ে  রাজশাহী মহানগর পুলিশের মুখপাত্র গোলাম রুহুল কুদ্দুস সিল্কসিটিনিউজকে বলেন, রাজশাহীসহ আশেপাশের বাজারে ছড়িয়ে পড়া এসব নকল ওষুধ বাজার থেকে তুলে নেয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।’

স্থানীয় এক সূত্র নাম প্রকাশ না করার শর্তে সিল্কসিটিনিউজকে জানায়- আনিসের এমন প্রতারণা অনেক দিন আগেই ডানা মেলে। আনিস পিতল বা কাঁসাকে সোনার বিস্কুক বলে বিক্রির সময় ধরে পরে এবিষয়টি এলাকার ছোট-বড় সবাই জানে। এছাড়া আনিস মাঝে মধ্যে ছলচাতুরির আশ্রয় নিয়ে বিভিন্ন কাজও করে। যে কাজের মূল উদ্দেশ্য ছিলো মানুষের সাথে প্রতারণা।

ওষুধ তৈরির আগে আনিস ঢাকায় কোন ওষুধের কোম্পানীতে কাজও করেছেন বলে শোনা যায়। এর পরে সে রাজশাহী নগরীর টিকাপাড়া এলাকার কেমিকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড কাজ করেন। তবে কি পদে কাজ করতো বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যায়নি। বিষয়টি নিয়ে কেমিকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড এর টেলিফোন নম্বরে কল করা হলে কেউ রিসিভ করেননি। তাই এবিষয়ে কোন বক্তব্যও পাওয়া যায়নি।

সূত্রটি ধারনা করছে- আনিস সেখানে ৫ থেকে ৬ বছর কাজ করেছে। এসময়ে ওষুধ তৈরির মেশিন ও কাঁচামাল সমন্ধে আনিসের বেশ ধারনা হয়ে যায় আনিসের। কেমিকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড থেকে চাকরি ছাড়ার পরেই নিজেই তৈরি করেন ওষুধের কারখানা। সেখানে নামি-দামি কোম্পানী এ্যান্টিবায়োটিক, গ্যাসের ওষুধ তৈরি করেন নিজেই।

আনিসের ওষুধের কারখানা থেকে জব্দকৃত ওষুধের নামগুলো দেখ বোঝা যায়- আনিস বেশ কৌশলী। সে বাজারে পর্যাপ্ত চলমান রয়েছে এমন ওষুধগুলো তৈরি করে বিক্রি করতেন। যেমন ‘সেকলো’ এই ওষুধটি সবার পরিচিত।

ভোক্তা অধিকার সংরক্ষ অধিদফতর রাজশাহী বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক হাসান-আল-মারুফ সিল্কসিটিনিউজকে জানান- ‘যে কোন নকল পণ্য চেনা কঠিন। তার পরে আবার ওষুধ, এতো হাবুহু থাকে। যা চেনা খুবই কঠিন। অন্য পণ্যের (প্রসাধনী, অন্য খাবার পণ্য) ক্ষেতে হালকা-পাতলা চেনা যায়।’

প্রসঙ্গত, গত শুক্রবার (২৩ এপ্রিল) রাত সাড়ে ৯টার দিকে ভদ্রা জামালপুর এলাকায় নকল ওষুধ তৈরির ওই কারখানায় আনিসের বাসায় অভিযান চালায় ডিবি পুলিশ। এসময় বিপুল পরিমাণ নকল ওষুধ, জৌন উত্তেজক ট্যাবলেট ও ওষুধ তৈরির কাঁচামালসহ একটি মেশিন জব্দসহ করে ডিবি। অভিযানে আনিস ও তার সহাযোগি রবিউলকে আটক করা হয়।

স/আ