ওসমানী হাসপাতালের পাঁচ জ্যেষ্ঠ সেবিকা করোনায় আক্রান্ত

সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের একাধিক চিকিৎসকের পর এবার করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন পাঁচজন জ্যেষ্ঠ সেবিকা (নার্স) ও একজন ওয়ার্ডবয়। আক্রান্ত সেবিকারা ওসমানীর আইসিইউ বিভাগে কর্মরত ছিলেন বলে জানা গেছে।

শুক্রবার একদিনেই এ হাসপাতালের পাঁচজন সেবিকাসহ ৬ জনের করোনা শনাক্ত হওয়ায় হাসপাতালের স্বাস্থ্যকর্মীদের মধ্যে করোনা আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।

শুক্রবার ওসমানী মেডিকেল কলেজের পিসিআর ল্যাবে নমুনা পরীক্ষায় ১৩ জনের করোনা শনাক্ত হয়। তাদের মধ্যে ৬ জনই ওসমানী হাসপাতালের স্বাস্থ্যকর্মী। এ ছাড়া এদিন নগরের আরও একজন, দক্ষিণ সুরমায় পাঁচজন ও সদর উপজেলায় একজন এবং ওসমানীনগরের একজনের করোনা শনাক্ত হয়।

সূত্র জানিয়েছে, আক্রান্ত ওই সেবিকারা হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যাওয়া প্রখ্যাত চিকিৎসক, ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সাবেক ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ও সার্জারি বিভাগের সাবেক প্রধান অধ্যাপক মীর মাহবুব আলমের সেবায় নিয়োজিত ছিলেন।

জানা গেছে, ডা. মীর মাহবুব আলম লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করলেও তার শরীরে করোনার উপসর্গ ছিল। তবে চারবার তার নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করেও রিপোর্ট নেগেটিভ আসে। মঙ্গলবার (১২ মে) ভোরে তিনি মারা গেলে ওইদিন সকালেই সিলেটের হজরত মানিকপীর (রহ.) কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।

ডা. মীর মাহবুব আলমের মৃত্যুর দুইদিন পর, শুক্রবার (১৫ মে) ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে কর্মরত পাঁচ জ্যেষ্ঠ সেবিকা করোনায় আক্রান্ত হলেন। এরকম অবস্থায় মীর মাহবুবের করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট নিয়ে উঠছে প্রশ্ন।

চিকিৎসকসহ সচেতন নাগরিকরা বলছেন, মীর মাহবুবের শরীরে করোনার উপসর্গ ছিল বলেই চারবার তার করোনা পরীক্ষা করা হয়। কিন্তু করোনার উপসর্গ কারও মধ্যে থাকলে, তাকে শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালে ভর্তি করার কথা। তাহলে মীর মাহবুবকে কেন ওসমানীর আইসিইউতে ভর্তি করা হলো? মীর মাহবুবের শরীরে করোনার শক্ত উপসর্গ ছিল বলেই চারবার নমুনা পরীক্ষা করা হয়। অন্যথায় তো এভাবে বারবার পরীক্ষা করার কথা না।

পাঁচজন আইসিইউ বিভাগের সেবিকা আক্রান্ত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. ইউনুছুর রহমান।

ডা. মাহবুবের প্রসঙ্গে পরিচালক বলেন, তিনি সিলেটের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় করোনার উপসর্গ দেখে নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করা হয় এবং রিপোর্ট আসে নেগেটিভ। রিপোর্ট নেগেটিভ আসায় তাকে ওসমানী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরবর্তীতে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা তাকে দেখে আবারও করোনা পরীক্ষার জন্য বললে আরও তিনবার তার নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করা হয় এবং প্রত্যেকবারই তার করোনার রিপোর্ট নেগেটিভ আসে।

গত ৫ এপ্রিল সিলেটে প্রথম করোনা রোগী হিসেবে শনাক্ত হন ওসমানী মেডিকেল কলেজের সহকারী অধ্যাপক ডা. মঈন উদ্দিন। এরপর গত ১৫ এপ্রিল তিনি চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঢাকায় মারা যান।

শুক্রবার ১৩ জন নিয়ে সিলেট জেলায় মোট শনাক্তের সংখ্যা ১১৬ জন। আর পুরো সিলেট বিভাগে এ পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন মোট ৩৫৮ জন।

বিভাগের অন্য তিন জেলার মধ্যে সুনামগঞ্জে ৬৭ জন, হবিগঞ্জে ১১৮ জন ও মৌলভীবাজারে ৫৭ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছেন। পুরো বিভাগে এখন পর্যন্ত মারা গেছেন ৬ জন আর সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন ৬৯ জন।

 

সুত্রঃ জাগো নিউজ