এলজিডি দপ্তরের প্রকৌশলীর হয়রানিতে থমকে আছে বাগমারার উন্নয়নকাজ


নিজস্ব প্রতিবেদক:
রাজশাহীর বাগমারা উপজেলায় ১৮টি প্রাইমারী স্কুলের ভবন নির্মাণের জন্য টেন্ডার হয় ২০২০ সালের জুলাইয় থেকে ডিসেম্বর মাসের মধ্যে। সে অনুযায়ী চলতি বছরের জুলাই থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে সবকটি স্কুলের নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা। প্রতিটি কাজের ব্যয় এক কোটি টাকার বেশি। কিন্তু এই কাজগুলোর অধিকাংশই এখনো শুরু করতে পারেননি ঠিকাদাররা। আবার যারা করেছেন, তাঁরাও সংশ্লিষ্ট এলজিডি দপ্তরের প্রকৌশলীর স্বেচ্ছাচারিতা ও হয়রানির কারণে তাঁরাও কাজ শেষ করতে পারছেন না। ফলে সরকারের নেওয়া এই উদ্যোগটি ভেস্তে যেতে বসেছে এলজিইডির উপজেলা প্রকৌশলী সানোয়ার হোসেনের কারণে।

অভিযোগ উঠেছে, এই প্রকৌশলী গত সাত বছর ধরে একই স্থানে কর্মরত থেকে নিজেরে বলয় তৈরী করে ঠিকাদারদের নানাভাবে হয়রানি করছেন। ফলে এ উপজেলায় স্কুল নির্মাণ, রাস্তা নির্মাণ, সংস্কার থেকে শুরু করে সব ধরনের উন্নয়নকাজ গত দুই বছর ধরে থমকে আছে। কোনো কোনো রাস্তা ৫ বছরেও ঠিকাদাররা শেষ করতে পারছেন না এই প্রকৌশলীর স্বেচ্ছাচারিতার কারণে। এর বাইরে স্থানীয় সাধারণ মানুষকেও নানাভাবে হয়রানি করছেন বলে প্রকৌশলী সানোয়ারের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে।

সর্বশেষ গত মঙ্গলবার বাগমারার সাজিপুর গ্রামের আকবর আলী নামের এক ব্যক্তিকে সানোয়ার হোসেনের নির্দেশে পুলিশ ধরে নিয়ে যায়। এরপর তাঁকে ৫ হাজার টাকা জরিমানা করে শেষে ছেড়ে দেওয়া হয়। কৃষক আকবর আলীর জমির ধারের একটি নিমগাছের কারণে ফসল নষ্ট হওয়ায় সেই গাছটি কাটার অপরাধে তাঁকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, উপজেলার দামনাশ থেকে ফতেপুর রাস্তাটির কাজ শুরু হয় ২০১৭ সালে। কিন্তু এখনো এই কাজটি শেষ না হওয়ায় এলাকাবাসী চরম ভোগান্তির মধ্যে আছেন। সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার ওয়াসিমের একজন ঘোনিষ্ট ব্যক্তি অভিযোগ করেন, উপজেলা প্রকৌশলীর নানা রকম হয়রানির কারণেই রাস্তার কাজটি শেষ করতে পারছেন না তিনি।

অভিযোগ উঠেছে, যেসব ঠিকাদার উপজেলা এলজিইডি দপ্তরকে ম্যানেজ করতে পারেন, তাদের কাজে কোনো বাধা দেওয়া হয় না। এরই ধারাবাহিকতায় গত মঙ্গলবার উপজেলার হাটগাঙ্গপাড়া এলাকায় একটি রাস্তা নির্মাণের জন্য ঠিকাদার নিম্নমানের ইট সরবরাহ করেন। এতে বাধা দেন স্থানীয় এলাকাবাসী। এ নিয়ে উভয়পক্ষের মারপিটের ঘটনাও ঘটে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ঠিকাদার বলেন, ‘প্রকৌশলী সানোয়ার হোসেনকে ম্যানেজ করতে পারলে কোনো রাস্তায় ভালোমাণের বিটুমিন করা হয় না। নিম্নমানের বিটুমনি দিয়ে রাস্তা নির্মাণ এবং সংস্কারের কারণে উপজেলার অধিকাংশ রাস্তা কিছুদিন পরেই বেহাল দশায় পরিণত হচ্ছে।’
উপজেলার মাথাভাঙ্গা-হাটগাঙ্গপাড়া সড়কটির কাজ গত এপ্রিল মাসে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও প্রকৌশলী সানোয়ার হোসেনের হয়রানির কারণে ঠিকাদার সেই কাজটি সময়মতো শেষ করতে পারেননি। ফলে জনগুরুত্বপূর্ণ ওই রাস্তা দিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষকে দূর্ভোগ নিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে।

উপজেলার বিভিন্ন উন্নয়ন কাজ করেন ঠিকাদার এমদাদুল হক। তিনি বলেন, ‘নানা হয়রানির কারণে গত এক বছরেও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নির্মাণকাজ শেষ করা যাচ্ছে না। কিন্তু মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছে। আবার অনেক ঠিকাদার বছরের পর বছর ধরেও কাজ শেষ করতে পারছেন না। এতে করে চরমভাবে বাধাগ্রস্থ হচ্ছে বাগমারার উন্নয়নকাজ।’

আরেক ঠিকাদার মাজেদুল হক জানান, ‘একজন ঠিকাদার বাগামারার ১২টি স্কুলের কাজ পেয়েছেন। কিন্তু নানা হয়রানির কারণে তিনিও কাজ শেষ করতে পারছেন না।’

স্থানীয় ভবানীগঞ্জ পৌর মেয়র আব্দুল মালেক বলেন, ‘উপজেলার পল্লী বিদ্যুৎ-হামিরকুৎসা রাস্তার ধারে একজন শিক্ষক বাড়ি নির্মাণ করেন। কিন্তু ওই বাড়ির সিঁড়ির কিছু অংশ রাস্তার ধারে আসায় উপজেলা প্রকৌশলী সানোয়ার হোসেনের নেতৃত্বে ওই শিক্ষককে ধরে নিয়ে এসে সারাদিন তাঁর কার্যালয়ে আটকে রাখাও হয়েছিল। শেষে আমরা নেতাকর্মী গিয়ে ওই শিক্ষককে ছাড়িয়ে নিয়ে আসি। এভাবে তিনি সাধারণ মানুষকেও নানাভাবে হয়রানি করছেন।’

এদিকে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে, বাগামারায় গত সাত বছর ধরে কর্মরত আছেন উপজেলা প্রকৌশলী সানোয়ার হোসেন। এই সময়ে তিনি তাঁর কার্যালয়ে তাঁর অধিনস্ত কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারী ও পছন্দের ঠিকাদারদের নিয়ে সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছেন। ফলে অন্যান্য ঠিকাদাররা তাঁর দ্বারা নানাভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছেন। মাঝে দুই বার বদলির আদেশ এলেও অজানা কারণে এই প্রকৌশলী বাগমারা থেকে বদলিকৃত স্থানে যোগদান করেননি।

তাঁর পছন্দের উপসহকারী প্রকৌশলী তোফাজ্জল হোসেন রয়েছেন গত সাত বছর ধরে এই বাগমারাতেই। তাঁর বাড়ি এবং উপজেলা প্রকৌশলী সানোয়ার হোসেনের বাড়ি নাটোরের বড়াইগ্রামে।

তবে এসব বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা প্রকৌশলী সানোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমি কোনো অনিয়মের সঙ্গে জড়িত নয় বলেই গত সাত বছর ধরে এখানে সুনামের সঙ্গে কর্মরত আছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘সঠিকভাবে কাজ আদায় করে নিচ্ছি বলেই কিছু ঠিকাদার আমার ওপর ক্ষুব্ধ হতে পারেন। কিন্তু আমি কোনো অনিয়মের আশ্রয় নিব না। সরকারি টাকার যথেষ্ট হিসাব আদায় করেই কাজ শেষ করে নিব।’

নিম্নমানের বিটুমিন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘সিডিউলে যে ধরনের বিটুমিনের কথা উল্লেখ থাকে, সেই বিটুমিনই আমি প্রয়োগের ব্যবস্থা করি। এখানেও কোনো অনিয়মের সুযোগ নাই।

স/অ